Lamborghini Huracán LP 610-4 t
খন্ড ২
প্রেমের প্রান্তে পরাশর | দ্বিতীয় খন্ড
পাঁচ
পরাশর হাত দেখাবার জন্যে এখানে নেমেছে। কথাটা প্রথমে বিশ্বাস করতেই পারি নি। হাত দেখাবে পরাশর! সব আজগুবি দুর্বলতা ত কোনদিন তার ছিল না। সে কি আমার সঙ্গে ঠাট্টা করছে! কিন্তু সত্যিই সে যখন মিনিট দশেকহাঁটিয়ে একটা গলি গোছের রাস্তার একটি দোতলা বাড়িরসামনে নিযে গিযে দাঁড়াল, তখন তার নতুন দুর্বলতা সম্বন্ধে আর সন্দেহ রইল না।
বাড়িটার পরিচয় ওপর থেকে নিচে পর্যন্ত তার সর্বাঙ্গে লাগানো নানা বিচিত্র সাইনবোর্ডেই ঘোষিত। দুধারের দেয়ালে ষটচক্র সুষুম্মা কাণ্ড ইত্যাদি কি সমস্ত দেহরহস্যের ছবি আঁকা বোর্ড ঝোলানো। দরজার মাথায় প্রকাণ্ড সোনালী হরফে লেখা বোর্ড। তাতে উঁচু-করা জ্বলজ্বলে অক্ষরে লেখা - নিখিল বরেণ্য যোগসিদ্ধ জ্যোতিষ চক্রবর্তী শঙ্কর মহারাজ। বাংলার চেয়ে আরো বড় ও উঁচু হরফ ইংরাজি। তাতে অবশ্য আর একটু সংক্ষেপে প্রথম লাইনে লেখা 'শঙ্কর মহারাজ, অ্যাষ্ট্রলজার সুপ্রিম অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড, আর তার নিচের লাইনে লেখা 'রীডস ইওর লাইফ-লাইক এ বুক'।
শঙ্কর মহারাজের পসার কি রকম ও কাদের মধ্যে তা ঐ গলির ভেতরই দাঁড় করানো দুটি দামী মোটরেই বোঝা যায়। মক্কেলদের একজন আমরাওপরে যাবার মুখেই নেমে এসে গাড়িতে উঠলেন। দুজনেইবর্ষয়সী বিদেশী মেম-সাহেব। তাঁদের নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা শুনে এটুকু বোঝা গেল যে তাঁরা জ্যোতিষ চক্রবর্তীর কাছে নতুন আসছেন না। নাতি প্রশস্ত সিঁড়ি দিয়ে ওপরে যাবার পরআরেক যে মক্কেলকে অত্যন্তকৃতার্থভাবে বিদায় নিতে দেখলাম তিনিও শ্বেতাঙ্গ। তাতে এইটুকু অন্ততঃ বোঝাগেল যে শঙ্কর মহারাজের খ্যাতিটা দেশের চেয়ে বিদেশেই বেশী না হোককম নয়।
জ্যোতিষ চক্রবর্তীর প্রণামী বেশ একটু বেশী বলে ওপরে সাধারণ প্রার্থীর ভিড় একেবারেই নেই। আমাদের আগের শ্বেতাঙ্গ মক্কেল চলে যাবার পর আমরাই শুধু সেখানে রইলাম। শঙ্কর মহারাজের কাছে পরাশর একেবারে অচেনা নয় দেখলাম।কাছে গিয়ে বসতেই একতু যেনসকৌতুক ভৎর্সনার সুরে মহারাজ বললেন, "আবার কি হল।"
"আজ্ঞে হাতটা এবার একটু দেখুন।" বলে পরাশর তার ডান হাতটা বাড়িযে দিল।
"হাত দেখতে হবে না।" জ্যোতিষ চক্রবর্তী হাত ঠেলে দিয়ে বললেন, "আমি তোমার মুখেই সব দেখতে পাচ্ছি। অপেক্ষা কর এক মিনিট।"
জ্যোতিষ চক্রবর্তী যতক্ষণ পরাশরের মুখ দেখলেন তাঁর মধ্যে আমিও তাঁকে তখন দেখে নিলাম। ভক্তি না হোক সম্ভ্রম জাগাবার মত চেহারা বটে। দামী গালচের ওপর পাতা জাজিমের আসনে দুধারে মখমলের তাকিয়া নিয়ে যেন ছোটখাটো পাহাড়ের মতো বসে আছেন। লোমশ বুকের ভাঁজ ভুঁড়ির ভাঁজ সবই দেখবার মত। এই দেহের অনুপাতে বিরল কেশ মুণ্ডটাও বিরাট।মুখটি পরিপাটি করে কামানোও কপাল থেকে গাল, গলা ও বুক পর্যন্ত বিধিত্র সব তিলক চিহ্ন আঁকা। বিদেশীদের কাছে এই চেহারার এক উদ্ভট আকর্ষণ থাকতে পারে কিন্তু পরাশরের এখানে ভাগ্য গণনার জন্য আসা যে কল্পনাতীত। এরকম আজগুবী খেয়াল কেমন করে তার হতে পারে। জ্যোতিষ চক্রবর্তীর পরের কথায় তারকিছুটা হদিশ অবশ্য পেলাম।
মুখে ঈষৎ কৌতুকের কুঞ্চন নিয়ে শঙ্কর মহারাজ বললেন,"হুঁ, অবস্থা বেশ সঙ্গীন দেখছি। রোগটা একেবারে সাংঘাতিকভাবে চেপে ধরেছে। আশা ভরসা কিছু দিতে পারছি না। মঙ্গল আর কেতুর সংযোগ পেয়ে বিপক্ষ একেবারে অপরাজেয়। তবে...না না দাঁড়াও দাঁড়াও। বুধ আর শুক্রকে যদি বক্রীকরা যায়! এমনিতেই দেখছি অবস্থানের শনির দৃষ্টি পড়েছে। স্থান-ত্যাগের ব্যাকুলতা দেখা যাচ্ছে তাই। সিদ্ধিলাভ ত্বরান্বিত করবার তাই চেষ্টা। শনির অপ্রসন্নতার সঙ্গে বুধ আরশুক্রকে যদি বক্রী করা যায় তাহলে - তাহলে তোমার অভিলাষ পূর্ণ হতেও পরে।"
পরাশরের মুখটা গোড়া থেকেইলক্ষ করছিলাম। শঙ্কর মহারাজ তাঁর গণনার সিদ্ধান্ত জানাতে শুরু করার পর থেকে বেশ একটু ম্লান থাকবার পর এতক্ষণে তা একটু যেন উজ্জ্বল হতে দেখলাম।
"স্থান ত্যাগের ত্বরাটা যথার্থই বলছেন?" বলে পরাশর এবার উৎসুকভাবে জ্যোতিষ চক্রবর্তীর দিকে চাইল।
"আমার গণনা ত তাই বলে," হেসে বললেন শঙ্কর মহারাজ।"বুধ আর শুক্রকে বক্রী করবার ব্যবস্থা যদি চাও তকরা যেতে পারে।"
"আজ্ঞে অনুগ্রহ করে তাই করবেন।" বলে ব্যাগ খুলে করকরে একটি একশ টাকার নোটবার করে জ্যোতিষ মহারাজেরপায়ের কাছে নামিয়ে দিলে পরাশর।
তারপর ভক্তি ভরে প্রণাম করে আমার সঙ্গে নিচে নেমেআসবার সময় তার মুখের ভাব দেখে মনে হল এতক্ষণে সে যেন একটু বল ভরসা পেয়েছে।
ভেতরটা তখন আমার তেতো হয়েগেছে। তবু রাস্তায় বেরিয়েট্যাকসি নেবার পর থেকে তার বাড়িতে পরাশরকে পৌঁছেদেওয়া পর্যন্ত জোর করে নিজেকে চেপে রেখেছিলাম। তার বাড়িতে পৌঁছে ট্যাকসিছেড়ে দিলে তার বাইরের ঘরেগিয়ে পা দেবার পর আর নিজেকে রুখতে পার্লাম না।
"তোমার এই অধঃপতন এখন হয়েছে।" গলাটা যতদূর সম্ভব রুক্ষ রেখেই বললাম,"প্রেমে কি আর কেউ কখনো পড়ে না!"
পরাশর তখনও তার সোফায় গিয়ে বসেনি। আমার কথায় আরগলার স্বরে বেশ একটু নাড়াখেলেও সব বুঝেও যেন না বোঝার ভান করে যেন অসহায়ভাবে আমার দিকে চাইল। সে চেহারা দেখে মায়া-দয়া কিন্তু আমার হল না।
আগের মতই ঝাঁঝের সঙ্গে বলে গেলাম, "তোমার এমন মতিভ্রম ধরেছে যে জ্যোতিষীদের কাছে ভালবাসায় জেতবার মন্তর নিতে গেছ!"
"আমি... আমি," পরাশর একটু যেন থতমত খেয়ে দুর্বল প্রতিবাদ করবার চেষ্টা করলে, "বললে... বললে -- আমি প্রেমে পড়েছি।"
"দিনের আলোর মতো যা স্পষ্ট তা এখনো অস্বীকার করছ!" এবার একটু সহনুভূতির সঙ্গেই বললাম,"তোমার চেহারা চাল-চলন কতাবার্তা সব যে যা বোঝাবার বুঝিয়ে দিচ্ছে।"
একটু থেমে তার প্রেমে পড়ার প্রত্যক্ষ প্রমাণগুলো তার সামনে ধরেদিলাম। তোমার আজকের সারা সকালের কাণ্ড-কারখানা দেখলেই তোমর আস্থা বুঝতে যে কারুর বাকি থাকে না। আচার্যদেবের বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে সারা সকালতুমি প্রায় একেবারে চুপ। যে মানুষের মুখে সারাক্ষণকথার খই ফোটে সে হঠাৎ কিসে বোবা হয়ে যেতে পারে।পারে শুধু হঠাৎ ভালোবাসায়পড়লে।
ভালবাসায় খোঁড়া যেন পাহাড়ডিঙ্গিয়ে ভীরু কাপুরুষ সাসসী বীর হয়ে ওঠে, তেমনি বাচাল বোবা হয়ে যায়, বুদ্ধিমান হয়ে যায় হাঁদা, যেমন তুমি হয়েছ। তা না হলে তুমি ভালোবাসায় কি হবে জানতে জ্যোতিষীর কাছেযাও। তাও আবার ঐ রকম ভণ্ড বুজরুক জ্যোতিষী নতুন নেশা ধরা সাহেব-মেমদের মাথায় হাত বুলিয়ে যে ফাঁকির ব্যবসা ফাঁপাচ্ছে।

তার ঐ বুজরুকিতে বিশ্বাস করে তার সাহায্য নিতে তুমি আবার অতগুলো টাকা সঁপে দিয়ে এলে আহাম্মকের মত।"
এতক্ষণ এত যে কথা শোনালামপরাশার তাতেও একেবারে চুপ। বুঝলাম মনে মনে সে নিজের অন্যায়টা বুঝে রীতিমতো লজ্জা পেয়েছে। এবারে তাই সহানুবূতির সঙ্গে ভালো কথাটাই তাকে জানালাম। বললাম, "শোনো, তোমার এই জ্যোতিষী যাই বলুক তার চেয়ে খাঁটি কথা আমি তোমায় শোনাচ্ছি। তোমার এমনভাবে হঠাৎ প্রেমে পড়ে যাওয়াটা একটু অদ্ভুত। তবে বয়স বাড়ার পরঅসময়ে হলে রোগটা এমনি বেয়াড়াভাবেই চেপে ধরে বলেজানি। তোমার তাই কোন দোষ দিচ্ছি না। তার বদলে একটাভরসা দিচ্ছি এই যে যতই কন্দর্পকান্তি হোক তোমার এলসার বারোহার ওপর একটুও টান নেই।
"তুমি তাই বলছ।" পরাশর যেন অবিশ্বাসের সঙ্গে বললে, "তুমি বুঝলে কি করে?"
"বোঝা ত জলের মত সোজা!" হেসে বললাম এবার,"ভালবাসার তোড়ে হঠাৎ হাত-পা মুখ থেকে বুদ্ধিশুদ্ধি অমন অবশ নাহয়ে গেলে তুমিও পারতে: বারোহার ওপর এলসার কোনো দুর্বলতা যদি থাকত তাহলে তার সঙ্গে ভারতবর্ষ টহল দেবার অমন সুযোগটা সে নয় না? এ যুগে তাদের জগতে তাতে লোকনিন্দার ভয়ও নেই।সুতরাং তোমার এই অসময়ের বেয়াড়া রোগ যদি কাটিয়ে নাউঠতে পারো তাহলে বলব বারোহার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভয় করবার তোমার কিছু নেই।"
"এই তোমার মত?" পরাশর মনের খুশিটা মুখে আর লুকোতে না পেরে উৎসাহভরে জিজ্ঞাসা করলে।
"হ্যাঁ, এই আমার মত! তোমারজ্যোতিষীর কথায় তুমি গুলিমারতে পারো!" বলে পরাশরেরকাছ থেকে বন্ধুকৃত্য করবার বেশ একটা তৃপ্তি আরগর্ব নিয়েই সেদিন নিজের বসায় ফিরলাম।
বেলা তখন দুপুর পার হয়ে গেছে। আমার পত্রিকার কয়েকটা দরকারী কাজের কাগজপত্র টেবিলের ওপর পড়েআছে দেখলাম। কিন্তু সেগুলো এখন সারতে হলে স্নান খাওয়া-দাওয়া মাথায় উঠবে। সেগুলো তাই বিকেলেরজন্যে স্থগিত রেখে স্নান করবার জ্ন্যে গায়ের জামাটা খুলতে গিয়ে পরাশরের সকালবেলা পকেটে গুঁজে দেওয়া কাগজটা হাতে ঠেকল। সেটা পকেট থেকে বারকরে এনে প্রথমে তা আমাকে দেবার মানেটাই বুঝতে পারলাম না। খামে ভরা চিঠি-টিঠি নয়। কোন একটা ছাপানো পত্রিকা থেকে ছিঁঠে নিয়ে ভাঁজ করে মোড়াএকটা পাতার টুকরো মনে হল প্রথমে। তারপর ছেঁড়া কাগজটার এক পিঠে ছাপা হরফের ওপরেই বড় বড় করে ধ্যাবড়া কলমে লেখা কটা কথা দেখতে পেলাম। অত্যন্ততাড়াতাড়িতে হাতের কাছে অন্য কাগজ না পেয়েই পরাশরবোধহয় ছাপানো পত্রিকার পাতার এই ছেঁড়া ফালিটা তার কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু ও কাগজে আমার বাড়িফিরে পড়বার জন্যে যা লিখেছে তাতেই ত মেজাজটা ঠিক রাখা শক্ত হল।
পরাশর লিখেছে, - এলসা মেয়েটি ঠগ। ভালো করে লক্ষকরে থাকলে প্রমাণগুলো মনেকরে রেখে আমায় জানিও।
এ লেখাটুকু পড়বার পর মেজাজ একেবারে খিঁচড়ে যায়কি না? আমি যে আহাম্মকের মত এতক্ষণ তার প্রেমে পড়াটা নিশ্চিত বলে ধরে নিয়ে তাকে ভৎর্সনা আর উপদেশ দিতে বক-বক করে মরেছি, বিন্দুমাত্র তার প্রতিবাদ না করে পরাশর তাহলে সেগুলো মজা করে উপভোগ করেছে! এর শোধ তাকে যেমন করে হোক দেবই প্র্রতিজ্ঞা করে ভালো করেপড়বার জন্যে ছেঁড়া কাগজটাআর একবার খুলে ধরলাম। কিন্তু পরশরের লেখা কথাগুলোর আগে আরেকটা জিনিষ যা সেখানে চোখে পড়লতাতে কেমন একটু ধোঁকা লাগল মনে।
কাগজের ফালিটা যেভাবে তাড়াতাড়ি ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে, তাতে একদিকে একটা ছবির খানিকটা অংশ কাটা অবস্থায় থেকে গেছে। ছবিটাএকটি বিদেশী মেয়ের, ছবিটা শুধু নয় তার নিচের লেখা নামের অংশটুকুও মাথার মধ্যে কোথায় যেন অস্পষ্ট টনক নড়লো। নামটায় যতটুকু ওখানে পাওয়া গেছে তা হল, -- বারবারা চেরিল ... কোথায়দেখেছি এ ছবিটা? কোথায় পেয়েছি এ নাম? কোন পত্রিকা পাতাটা ছেঁড়া হয়েছে তাও যদি বুঝতে পারাযেত। সে পত্রিকা বা অন্য যেখানেই গোক ও ছবি আর নাম আমার যে চোখে পড়েছে সে বিষয়ে কোন সন্দেহই নেই। শুধু তাই নয় ছবিটা আর ঐ নামের সঙ্গে একটা কি খুব অসাধারণ ব্যাপারও জড়িত হয়ে অছে। সেটা কি মনে করবার চেষ্টায়, পরাশরের ওপর অভিমানটাও খানিক বাদেযেন চাপা পড়ে গেল। পরাশরকে কি তার বাসার কোনপত্রিকা থেকে ছবির অংশটা ছিঁড়েছে জিজ্ঞাসা করব? না, সেটা এখন আর সম্ভব নয়।সে কথা জিজ্ঞাসা করতে গেলে পরাশরের এই লেখাটুকুর শোধ আর নেওয়া হবে না। না, অমি নিজে নিজেই ও ছবিটা কি সূত্রে কোথায় দেহেছি তা ভেবে বারকরব। যে পর্যন্ত তা না পারি নিজে থেকে পরাশরের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখব না।
বার করতে ঠিকই পারলাম শেষপর্যন্ত। তবে সেদিন নয়। তার পরের দিন সকালবেলা আচমকা নিতান্ত অপ্রত্যাশিতভাবে। সমাধানটা যখন হয তখন আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন ভাবনায় একেবারে অস্থির হয়ে আছি। কারণ তার কিছুক্ষণ আগে ভোরের আলো ফোটবার সঙ্গে সঙ্গে পরাশরের কাছ থেকে অদ্ভুত বেয়াড়া এক ফোন পেয়েছি।

ছয়
ফোনে একেবার তড়িঘড়ি ডাক।
"কৃত্তিবাস! শোনো এখুনি একবার আমার সঙ্গে বেরুতে হবে। তৈরী হয়ে নাও।"
"এখুনি যেতে হবে মানে? কোথায় যেতে হবে? কেন?"
সে সব কথার কোন উত্তর নেই। শুধু আগের চেয়ে আরো একটু অস্থির গলায় পরাশর জানালে, "আমি আধ ঘণ্টার মধ্যে তোমার ওখানে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।"
"শোনো শোনো!" ফোনে যথাসাধ্য চিৎকার করলাম। কিন্তু শুনবে কে? নিজের কথাটুকু বলেই পরাশর ফোন নামিয়ে দিয়েছে।
এখন আমি করি কি? কেন, কি বৃত্তান্ত কিছুই না জেনে পরাশরের্ জন্যে তৈরী হয়ে বসে থাকব? সমস্ত মন বিদ্রোহ করে উঠতে পারে কিনা এতে! মানলাম ব্যাপারটা হয়ত দারুণ জরুরী। নষ্ট করার এতটুকু সময় নেই। কিন্তু কোথায় যেতে হবে এই দুটো কথার জন্যে দু সেকেণ্ড দেরী করলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয় যেত! এ রকম অন্যায় আবদারে কিছুতেই সায় দেওয়াউচিত নয়। জামা-কাপড় বদলে বেরুবার জন্যে তৈরী হতে হতেই অবশ্য এসব কথা ভাবছিলাম। পরাশরের ওপর রাগ অভিমান যতই থাক নিজেরএকটু কৌতূহলও ছিল। হঠাৎ কি এমন ব্যাপার হল যাতে এক্ষুণি আমাদের ছুটে যাওয়া দরকার! সত্যিই গুরুতর কিছু না হলে পরাশরঅত অস্থির হয় না। সে গুরুতর ব্যাপারটা কি নিয়েকোথায় হওয়া সম্ভব? কাল আমরা সকালে যাদের সঙ্গে কাটিয়েছি ব্যাপারটা কি তাদের সঙ্গেই জড়িত? না, সম্পূর্ণ নতুন কিছু ঘটনা?
সত্যি কথা বলতে হলে স্বীকার করতেই হয় যে বেরুবার জন্যে তৈরী হতে হতে ক্রমশঃই ব্যাপারটা জানবার জন্যে আরো অধীর হয়ে উঠছিলাম। পরাশরের আসার জন্যে আর তর সইছিল না। সে আধঘণ্টার মধ্যে অসবে বলেছে। কিন্তু আধঘণ্টাটাই আমার কাছে বড় বেশী দেরী মনে হচ্ছে তখন।পরাশরের ওপর গোড়ায় রাগ অভিমান যা করেছি তা তখন সম্পূর্ণভাবেই কেটে গেছে। বরং পরাশর তার নিজমূর্তি ধরেছে বলে তখন খুশিই হয়েছি। কাল কেন কি মতলবে সে অমন চুপ মেরে ছিল এখনও জানি না। তবে সেটা তার প্রেমে গদগদ ভাবভাবার মত আহাম্মক হবর জন্যে আমিই এখন লজ্জিত। সত্যি সত্যি প্রেমে পড়লেওপরাশরের অমন অবস্থা হবে কেন? তার ঐ ভোম মেরে থাকার পেছনে অন্য কোনো একটা রহস্য নিশ্চয় আছে আরআজকের এই অস্থিরতা নিশ্চয়সেই রহস্যের সঙ্গে জড়িত। যাক হাতে পাঁজি মঙ্গলবার থাকতে মিছে এত জল্পনা কল্পনার দরকার কি? পরাশর আধঘণ্টার মধ্যে আসবে বলেছে। আধঘণ্টার পঁচিশ মিনিটই ত কেটে গেছে। আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি!
কিন্তু কি হল কি! ঘড়ির কাঁটা পাঁচ মিনিট ছাড়িয়ে দশ মিনিটের দাগও যে পার হতে চলেছে। এখনো পরাশরের দেখা নেই কেন? পরাশর মাঝেমাঝে খেয়ালবশে ঘড়ি ধরা সময় রাখতে গাফিলতি করে বটে, কিন্তু সে রকম দরকারীকিছু হলে সে আবার সেকেণ্ডের কাঁটাকেও হার মানায়। যে উত্তেজনা আর অস্থিরতার সঙ্গে সে খানিকআগে ফোন করেছে তাতে তার ত একেবারে কাঁটায় কাঁটায় আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছোবার কথা। কি হয়েছে কি তাহলে? ব্যস্ত হয়ে তার বাসাতেই এবার ফোন করলাম। না সে বাসায় নেই। তার অনুচরের কাছে জানা গেল আধঘণ্টারও আগে সে বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেছে। তার মানে আমায় ফোন করবার পর বাড়িতে সে আর এক মিনিটও সময় নষ্ট করে নি। কিন্তু তার বাসা থেকে আমার এখানেআসতে ত খুব বেশী হলে বিশ মিনিটের বেশী লাগবার কথা নয়। বিশেষ এই সকালবেলার ফাঁকা রাস্তায়। তাহলে কি গাড়ির ব্রেকডাউন? না দুর্ঘটনা কোনো! অশুভ ভাবনাটাকে দূরে ঠেলে রেখেআবার ফোন করলাম পরাশরের বাসায়।
জিজ্ঞেস করলাম তার অনুচরকে, "পরাশর কোথায় যাচ্ছে কিছু বলে গেছে কি?"
"না তা বলেন নি।" উত্তর পেলাম, "শুধু বলে গেছেন আজদিনের বেলা আর বাড়িতে খাবেন না।"
পরশর নিজে গাড়ি রাখে না। সাধারণত দরকার হলে পাড়ার ট্যাকসি স্ট্যাণ্ড থেকে কোনো একটা গাড়ি আনিয়ে নেয়। পাড়ার গাড়ি সব তার চেনা। সেই জন্যে কার কোন ট্যাকসি নিয়েছে জানলে পরেখোঁজ-খবর নেবার সুবিধে হয়।
ফোনে এবার সেই কথাই জানতেচাইলাম, "কোন ট্যাকসি নিয়ে পরাশর বেরিয়েছে তা দেখেছ?"
"আজ্ঞে ট্যাকসিতে ত তিনি যান নি!"
"ট্যাকসিতে যান নি? তাহলেগেছেন কিসে?"
"আজ্ঞে বড় একখানা প্রাইভেট গাড়িতে। ভোরেই কাকে ফোন করে আনিয়ে রেখেছিলেন।"
"আচ্ছা ঠিক আছে।" বলে ফোনটা নামিয়ে রেখে ব্যাপারটা বোঝবার চেষ্টা করলাম।
পরাশর মাঝে মাঝে তেমন দরকার হলে একটা গাড়ি ভাড়াদেওয়ার এজেন্সী থেকে ড্রাইভার সমেত প্রাইভেট ভালো গড়ি আনিয়ে ব্যবহার করে। আজও তাই করেছে। কিন্তু এই সাত সকালে ওরকমগাড়ি ভাড়া করার কারণটা কি? আর কারণ যাই হোক সে গাড়ি নিয়েও আমার কাছে এমনকথার খেলাপ করল কেন? আর কারণ যাই হোক আধঘণ্টার মধ্যে তুলে নিতে আসছে বলেআমায় তৈরী থাকতে বলাটা তার ঠাট্টা নিশ্চয় নয়!
রাস্তায় দুর্ঘটনা ছাড়া পরাশরের এই কথার খেলাপের আর কোনো ব্যাখ্যা হতে পারে না ভেবে গভীর উদ্বেগনিয়ে আমার বাড়ি থেকে তার বাসা পর্যন্ত ট্যাকসিতে খোঁজ করে আসব কিনা ভাবছি, এমন সময় টেবিলের ওপর ভাঁজকরা কাগজটা চোখে পড়ল। গত কাল পরাশর এইটেই আমার পকেটে গুঁজে দিয়েছিল আর সারা দিন সারা রাত চেষ্টাকরেও আমি তার ছাপা ছবি আর নামের অংশটা আগে কোথায় দেখেছি স্মরণ করতে পারি নি।
মনের গতি বড় বিচিত্র। ধীরস্থির হয়ে অত ভেবে চিন্তেও যা বার করতে পারিনি এই উদ্বেগ অস্থিরতার মাঝে সেটা যেন মাথার ভেতরঝিলিক দিয়ে ফুটে উঠল। ঐ মুখ আর বারবারা রেচিল নাম। ও ত আমার ভালরকম জানা। ভারতবর্ষের বড় বড় সব হোটেলে ট্যুরিস্ট সেজেযে দল অনেক সরল অন্য ট্যুরিস্টদের বিষ খাইয়ে বেহুঁশ করে সর্বস্ব চুরি করেছে মেয়েটি ত সেই দলের।পুরো নাম বারবারা রেচিল স্মিথ। বৃটেনে বাড়ি। চার্লস শোভরাজ নামে এক ধুরন্ধর শয়তানের সর্দারীতে আরো দুটি মেয়েরসঙ্গে বহুদেশে এ কাজ করে বেড়াবার পর ভারতবর্ষের দিল্লী শহরে এসে প্রথম ধরা পড়েছে। এদের সকলের ছবি ও শয়তানীর বিবরণ আমি এই কিছুদিন আগে পড়েছি। ঠিক এই বিবরণ ছপা কাগজের ফালিতে আমাকে পরাশরের চিঠিটি লেখার মধ্যে কোনো অস্পষ্ট ইঙ্গিত আছে নাকি?
সেইটেই বোঝবার চেষ্টা করার মধ্যে ফোনটা বেজে উঠল।
বিদেশী মেয়ের যান্ত্রিক কণ্ঠ, "মিঃ ভদ্র আছেন?"
বুঝলাম কোনো বড় প্রতিষ্ঠানের টেলিফোন অপারেটর আমায় খোঁজ করছে।
কেন করছে তা বুঝতে না পেরে একটু অবাক হয়েই বললাম, "হ্যাঁ, আছি। কোথা থেকে কে ফোন করছেন?"
"এইখানে কথা বলুন।" বলে অপারেটর ফোন ছেড়ে দিলে।
পর মুহূর্তেই পরাশরের গলাশুনলাম, কৃত্তিবাস! যা বলছি মন দিয়ে শোনো।"

! যা বলছি মন দিয়ে শোনো।"
পরাশরকে সুস্থ নিরাপদ জেনে তখন আমার আগেকার উদ্বেগ দুর্ভাবনাটা ক্ষোভ হয়ে উঠেছে।
"তার আগে আমার কথা শোনো!" রীতিমতো ঝাঁঝের সঙ্গে বললাম, "আমাকে সাত সকালে ফোন করে ব্যতিব্যস্ত করে এমন মিছিমিছি তৈরী থাকতে বলার মানে কি? তুমি..."
আমার ঝাঁঝালো গলার জবাবে পরাশরের একটু বেশীরকম গম্ভীর শান্ত গলা -- "সব পরে জানতে পারবে। এখন ভালো করে শুনে নাও যা বলছি। খানিকক্ষণ বাদে তোমার কাছে একটা বড় গাড়ি যাচ্ছে। তুমি যেন বিদেশে কোথাও যাচ্ছ এমনভাবে সাজ পোষাক সরঞ্জাম নিয়ে সে গাড়িতে চলে আসবে। বিদেশে যাবার লাগেজ তোমার আছেই। যা হোক কিছু ভরে সেগুলো সঙ্গে নেবে। পাসপোর্ট আনতেও ভুলো না।"
"তা না হয় ভুলব না।" হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "কিন্তু এ গাড়িতে করে যেতে হবে কোথায়?"
"যাবে, কাল যেখানে গিয়েছিলে সেই পাঁচতারা মার্কা হোটেলে। কোনো ভাবনা নেই। তোমার ঘর রিজার্ভ করা আছে। তুমি এসে লবির কাউণ্টারে দাঁড়ালেই হবে। আমি নিজে সেখানে থাকব। আর একটা কথা। আসবার সময় জ্যোতিষ চক্রবর্তী শঙ্কর মহারাজের বাড়ির সামনে গাড়িটা একটু দাঁড় করাবে। তোমায় নামতে হবে না। শঙ্কর মহারাজেরই অনুচরদের কেউ তোমার হাতে একটা সীলকরা খাম দিয়ে যাবে। সেইটে নিয়ে আসবে।"
"শোনো পরাশর..."
শোনবার ওদিকে কেউ নেই। পরাশর যথারীতি কথা শেষ করেই ফোন নামিয়ে রেখেছে।
কিন্তু এ আমায় কি দারুণ সমস্যায় সে ফেললে। যেন বাইরে কোথাও যাচ্ছি এমন ভাবে সাজসরঞ্জাম নিয়ে পাঁচতারার হোটেলে গিয়ে ওঠা, সেখানে আবার আমার জন্যে আগে থাকতে ঘর রিজার্ভ হয়ে থাকা, তার সঙ্গে ঐ বুজরুক জ্যোতিষ চক্রবর্তীর দেওয়া গালা আঁটা এক চিঠির বাহক হওয়া, -- এসব কিছুর মানে কি! কাল যাকে পরাশরের প্রেমাস্পদই বলে ভেবেছিলাম, সেই ভারতীয় পুরাতত্ত্বের ছাত্রী এলসা, এই খানদানী হোটেল, জ্যোতিষ চক্রবর্তী শঙ্কর মহারাজ, আর - আর -- এই ছেঁড়া কাগজের ছবি আর নামটার মধ্যে কোনো ভেতরেরসম্পর্ক আছে কি?

সাত
ঠিক ঐ কথাই ভাবতে ভাবতে নয়কেমন একটু বিভ্রান্ত অবস্থায় মাঝপথে জ্যোতিষ চক্রবর্তীর বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে তাঁর পাঠিয়ে দেওয়া গালা-আঁটা খামটা নিয়ে পাঁচতারা হোটেলে যখনগিয়ে পৌঁছ্হোলাম, তখন হোটেলের বাইরে বা ভেতরে অস্বাভাবিক কোনো কিছুই কিন্তু দেখতে পেলাম না। সকালের দিকে এ ধরণের বড় হোটেলে যে একটা প্রায় নিঃশব্দ ব্যস্ততা থাকে তার বেশী সেখানে কিছুর চিহ্ন নেই। লবির কাউণ্টারে পরাশর সত্যিই আমার জন্যে অপেক্ষা করছে।সে একা নয় তার সঙ্গে আরেকজনও আছেন। আমি গিয়ে দাঁড়াতেই পরাশর পরিচয় করিয়ে দিলে। "মিঃ ভদ্র, মিঃ সেঙ্গার - হোটেলের ম্যানেজার।"
ম্যানেজার সেঙ্গার ভারতীয় কিন্তু পোষাক-আশাকচাল-চলন এমনকি চেহারা দেখেও তা বোঝা খুব সহজ নয়।বছর চল্লিশের অত্যন্ত সুঠাম, আর যাকে বলা যায় ব্যায়াম-সাধা মজবুত চেহারা। রংটা ইউরোপীয়দের মতই প্রায় ফর্সা হওয়ার দরুণ ভুলটা সহজেই হতে পারে।
তিনি একটু হেসে করমর্দনেরবদলে হাত জোড় করে নমস্কার জানিয়ে ইংরেজীর বদলে হিন্দীতেই বললনে, "আপনাকেসাদর অভ্যর্থনা জানাচ্ছি মিঃ ভদ্র। আপনার কামরা ঠিক করাই আছে। আশা করি আপনার কোনো অসুবুধে হবে না।"
আমি পরাশরের পাঠানো গাড়ি থেকে নামবার পরেই হোটেলেরইউনিফর্ম-পরা পোর্টার আমার লাগেজ বয়ে এনে আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল। আমায় অভ্যর্থনা জানাবার জানাবার পরই ম্যানেজার পরই ম্যানেজার তাকে আমার রুম নম্বর জানিয়ে সেখানে আমার লাগেজ নিয়ে যেতে বললেন। কাউণ্টারের রিসেপশন ক্লার্কের কাছ থেকে কামরার চাবি নিয়ে সে এগিয়ে যেতে তার পিছু নিতে হল। কিন্তু পরাশর ওখানেই দাঁড়িয়ে রইল কেন? সে আমার সঙ্গে আসবে না? কি কারণে এমন অদ্ভুত ছুতো করে আমায় এখানে আসতে হল তা বোঝাবে তাহলে কখন। আমার পকেটে জ্যোতিষ চক্রবর্তীর গালা আঁটা চিঠিটাও ত তাকে দেওয়া হল না। পরাশর আমায় পরিচয় করিয়ে দেবার সময় পকেটে হাত দিয়ে একবার সেটা বার করতে গেছলাম, কিন্তু হঠাৎ পরাশরের চোখের ইঙ্গিতটা দেখে আর এগোই নি।পরাশর তাহলে এখানে আমার সঙ্গে পর পর ভাবই রাখবে নাকি? আমার জন্যে ঘর রিজার্ভ করা টরা সব ত সে- করেছে। সে সব কি করেছে কি অজুহাত দিয়ে? ট্রাভেল এজেণ্টের ভূমিকায়? একটু দূরত্ব রাখতেই সে যে চায় তা হোটেলের লবিতে ঢুকে তার পোষাক দেখেই একটু অবশ্য মনে হয়েছে। আজ আর ধুতি পাঞ্জাবী নয়, একেবারে টাই-ফাই বাঁধা পাক্কা দামী সাহেবী স্যুট। আমার পরিচয় করিয়ে দিলেও কথাবার্তা যা বলেছে একটু ছাড়া ছাড়া ভাবেই। এটা কি ম্যানেজারের কাছে আমাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্কটা লুকোবার জন্যে? কিন্তু তাই বা কেন! এই অভিনয় করে কদিন এখন চালাতে হবে? ক'দিনের জন্যে আমার জন্যে কামরা বুক করা হয়েছে তাও ত কাউণ্টার থেকে জানবার সুযোগ পেলাম না। এই সব কিছুর জন্যে পরাশরের সঙ্গে একবার অন্ততঃ আলাপ করবার সুযোগ যে না পেলেই নয়।
হোটেল লিফটে পোর্টারের সঙ্গে ওপরে উঠতে উঠতে এইসব কথাই ভাবছিলাম। হোটেলের কামরগুলোর চাবি রীতিমত প্রকাণ্ড ও ভারী। বোর্ডারদের পকেটে করে চাবি বাইরে নিয়ে যাওয়ার উৎসাহটা দমাবার জন্যেই এইব্যবস্থা। এ হোটেলের চাবিও যথরীতি প্রকাণ্ড। পোর্টারের হাতে সেটার ওপরবড় বড় খোদাই করা নম্বরটা ইতিমধ্যে চোখে পড়েছে একবার। তাতে সংখ্যা লেখা ৪ ২৬। তার মানে চারতলায় আমার ছাব্বিশ নম্বর ঘর।
চারতলায় লিফট থামতে ল্যাণ্ডিং-এ পা বাড়াবার সঙ্গে সঙ্গেই একটু চমকে উঠতে হল। এই ল্যাণ্ডিং-এ নিচে নামবার জন্যে লিফটেরঅপেক্ষায় আর কেউ নয়, এলসাইদাঁড়িয়ে। আমি তাকে চিনলেওসে এই ইউরোপীয় পোষাকে আমাকে প্রথমে ঠিক বোধ হয় চিনতে পারেনি। হঠাৎ তাকে দেখে একটু থেমে সম্ভাষণ করবার ইচ্ছে হলেও অবস্থা বুঝে তা দমন করে আমি তখন পোর্টারের পেছনে এগিয়ে যচ্ছি। একটু আড়চোখে চেয়ে বুঝলুম, প্রথমে না পারলেও তার পরেই চিনতে এলসার ভুল হয় হয়নি। তবু আরো নিশ্চিত হবার জন্যে সে আমার পিছনেই কয়েক পা এসে কিন্তু দ্বিধভরে নেমে গেল। সে দ্বিধা কাটিয়ে দেবার চেষ্টা আমি আর করলাম না। হোটেল জ্যানিটরতখন চাবি কিয়ে আমার কামরার দরজা খুলে ভেতরে লাগেজ নিয়ে যচ্ছে। তার পিছু পিছু নিজের কামরায় ঢুকে দরজাটা ভেজিয়েই দিলাম যেন অন্যমনস্কভাবে।
অন্য সময় হলে শুধু কামরাটির সাজ-সজ্জা বাহারদেখে খানিক মুগ্ধ হয়ে থাকতে পারতাম। তারা চিহ্নগুলো যে অকারণে লাগান নয় ২৬নং ঘরটির সবকিছুতেই তার প্রমাণ সুস্পষ্ট। কিন্তু তখন আমার মন অস্থির হয়ে অছে অন্য চিন্তায়। পোর্টার জিনিষপত্র গুছিয়ে রাখবার পর তাকে একটু ভালো করে বখশিস দিয়ে বিদায় করে দরজাটা পুরোপুরি বন্ধ করেদিলাম। এবার আমায় নিজের অবস্থাটা ঠিকমত বুঝে নিতেহবে। জ্যাকেটটা খুলে ওয়ার্ডরোবে রাখতে গিয়ে প্যাকেটে রাখা শঙ্কর মহারাজের চিঠিটা হাতে ঠেকল। আমার উপস্থিত ভেবে নেবার সমস্যার মধ্যে এটাওপ্রধান একটা। পরাশরকে এ চিঠি দেওয়া যায়নি এখনো। তাকেই যে দিতে হবে এমন কোনো নির্দেশ অবশ্য চিঠিরওপর নেই! তাহলে ইচ্ছে করলে আমিও কি গালা-আঁটা খামের মধ্যে কি আছে তা খুলে পড়তে পারি? খোলবার ইচ্ছেটা প্রবল হলেও গালা-আঁটা থাকাটাই সে ইচ্ছার বাধা হয়ে দাঁড়াল। পরাশরের মত আমারও পড়বার হলে অত কষ্ট করে গালা লাগান থাকবে কেন? কিন্তু পরাশর সে চিঠি কখন কিভাবে নেবার ব্যবস্থা করবে? এই যে এলসার সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়ে গেলেও স্বাভাবিকভাবে তার সঙ্গে আলাপ করতে পারলাম না, এ বিষয়েও ত পরাশরের পরামর্শ দরকার। যতক্ষণ তার সঙ্গে কথাবার্তার সুযোগ না হচ্ছে ততক্ষণ আমার করণীয় কি? এই কামরার মধ্যে বন্দী হয়ে বসে থাকব নাকি! আপাততঃ তাই অন্ততঃ থাকা ছাড়া উপায় নেই বুঝে হোটেলের ক্যাণ্টিন থেকে এক পট কফি আনিয়ে নেবার জন্যে রুম সার্ভিস-এ ফোন করতে যাচ্ছিলাম।
ফোনটা তোলার আগেই যন্ত্রটার তলায় লম্বা ভাঁজ করা কাগজটা চোখে পড়ল। কাগজটার সঙ্গে তার ওপরকার বড় বড় অক্ষরে বাংলা লেখাটা - খুলে পড়ো। তাই পড়লাম। কোনো সম্বোধন নেই। নিচে স্বাক্ষরও নয়। কিন্তু কাকে লেখা কে লিখেছে বুঝতে কোন অসুবিধেহল না ভেতরের চিঠির ভাষা পড়ে। চিঠিটা এই - পাজামা পাঞ্জাবী যদি সংগে এনে থাকো ভালো। নয়তো শুধু সার্ট-প্যাণ্ট পরে দোতলায়নেমে এসো এখুনি। লিফটে নেমো না। সিঁড়ি দিয়ে নেমে তেরো নম্বর কামরায় একটু দেখেশুনে ঢুকবে। করিডরে কেউ নেই দেখলে দরজায় বেল-টেল না টিপে শুধে একটু ঠেলে ঢুকবে।

গালা দেওয়া খামটা সঙ্গে নিয়ে এসো। এ চিঠিটাও।
আট
এ চিঠির কেন, কি বৃ্ত্তান্ত ভাবার জন্যে বৃথা সময় নষ্ট না করে তখনইনির্দেশ পালন করলাম । দোতলার তেরো নম্বর ঘরের দরজা সত্যিই ভেজানো ছিল মাত্র। একটু ঠেলা দিতেই খুলে গেল। ঘরে ঢুকে সত্যিই একটু থতমত খেয়ে দাঁড়াতে হল। এ কার ঘরে এসেঢুকলাম। ওদিকের খাটের ওপরলম্বা হয়ে যে লোকটি কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে আছে, মুখ দেখতে না পেলেও চুল দেখে বোঝা যাচ্ছে - ভদ্রলোক ইউরোপীয়। পরাশরের চিঠির নির্দেশ মানতে গিয়ে এ কার ঘরে এসে ঢুকলাম? অত্যন্ত সন্ত্রস্ত হয়ে কামরা থেকেবেরিয়ে যাওয়ার জন্যে সাবধানে দরজাটা আবার খুলতে থাকি এমন সময় বিছানায় শায়িত লোকটা পাশ ফিরতে গিয়ে আমায় দেখতে পেয়ে একটু যেন কষ্ট করে উঠে বসল।
এ কি এ তো বারোহা! এর মধ্যে তার বিছানার পাশের সাইড টেবিলে, ওষুধের শিশি ও জলের গ্লাস ইত্যাদি আমি দেখতে পেয়েছি। কি হয়েছে কি বারোহার? শুধু পাশের টেবিলের ওষুধপত্র নয়, তার চেহারা দেখেও ত অসুস্থ বলে মনে হচ্ছে। তার গলার স্বরেও সেটা বোঝা গেল। আমায় দেখে বিস্মিত টিস্মিত নয় একটু কাতর আর ক্ষীণ হলেও স্বাভাবিক স্বরে সে বললে, "আসুন মিঃ ভদ্র। আমি আপনাদের অপেক্ষা করছি।" "আমাদেরই অপেক্ষা করছেন!" কাছে
গিয়ে দাঁড়িযে সবস্ময়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "আপনার হয়েছে কি?"
"বিশেষ কিছু নয়!" দুর্বল গলাতেই বারোহা নিজের অসুস্থতাটা অগ্রাহ্য করে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করলে,""কাল একটু বোধ হয় মাত্রা বেশী হয়ে গিয়েছিল তাই..."
"না ... মাত্রা আপনার বেশী হয়নি মিঃ বারোহা!" বারোহার কথার ওপরই পরাশরের গলা শুনতে পেয়ে ফিরে তাকিয়ে শুধু পরাশর নয়, তার সঙ্গে ম্যানেজার মিঃ সেঙ্গারকে দেখতে পেলাম।
দরজাটা এবার ভালো করে বন্ধ করে পরাশর ম্যানেজারের সঙ্গে বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়েআগের কথারই জের টানলে,"মাত্রা বেশী হয়েছে ভাবাটা আপনার ভুল। আমরা রেস্তোরাঁর রেকর্ড বই ত বটেই, টেবিলের ওয়েটার আর বার অ্যাটেণ্ড্যাণ্টদের কাছেও খবর নিয়েছি। খবর কি পেয়েছি, তা বলুন না মিঃ সেঙ্গার! একটু সবিস্তারেইবলবেন।"
মিঃ সেঙ্গার এ অনুরোধে প্রথমটা যেন থতমত খেলেন। এ কামরার মধ্যে এবার বেশ কাছে থেকে মিঃ সেঙ্গারকে তখন লক্ষ্য করবার সুযোগ পেয়েছি। ওপরের ফিটফাট পালিশ করা চেহারা সত্ত্বেও লোকটিকে কি একটাকারণে যেন অত্যন্ত বিব্রতমনে হল। কারণটা এর পরই তাঁর কথায় বুঝতে বাকি রইল না। মিঃ সেঙ্গার কিছুটা মুখস্থ আওড়াবার মত যা বলে গেলেন, তাতে জানা গেল, আগের দিন রাত্রে বারোহা এই হোটেলের রেস্তোঁরায় আরকয়েকজন বোর্ডারকে নিয়ে একটা ছোট পার্টিতে যোগ দিয়েছিল। পার্টিতে বারোহা বাদে ছিল ফরাসী প্রৌঢ় মঁসিয়ে রেনোয়া। তাঁর ভাগনী জিনেৎ আর এলসা। পার্টিতে আহার যতটাতার চেয়ে পানটা একটু বেশীই সাধারণতঃ হয়ে হাকে, কিন্তু রেস্তোরাঁর বারের হিসেব থেকে জানা গেছে সেরকম কিছু একেবারেই হয় নি। বারোহা ব্রাণ্ডির ভক্ত, গত রাত্রে তাও সে গোণাগুণতি কয়েকটি পাত্র মাত্র খেয়েছে। মঁসিয়ে রেনোয়া, মাদমোয়াজল জিনেৎ আর এলসাও তাই। মঁসিয়ে রেনোয়া কিছুক্ষণ পার্টিতে থাকবার পরে শরীরখারাপ বলে বিদায় নিয়ে গেছেন। পার্টিও তারপর বেশীক্ষণ চলেনি। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই সবাই যে যার কামরায় চলে গিযেছেন। কিন্তু তারপর, মানে, রাত্রি থেকেই এঁদের অসুস্থতা শুরু হয়েছে।
প্রথমে রিসেপশন কাউণ্টারে 'কল' এসেছে মঁসিয়ে রেনোয়ার কাছ থেকে।তিনি নিজে অত্যন্ত অসুথ বোধ করছেন। কিন্তু নিজের চেয় বেশী ভাবিত হয়েছেন তাঁর ভাগনী জিনেতের জন্যে। কিছুক্ষণ আগে তাঁরহঠাৎ গলাটা যেন কেউ চেপে ধরেছে এই রকম বোধ হবার সঙ্গে মাথাটা বড় বেশী ঝিম-ঝিম করছে মনে হয়। হয়ত প্রেসার বেড়েছে মনে করে তার ওষুধ খুঁজে না পেয়ে তিনি পাশের ঘরের জিনেৎকে ফোন করেন। জিনেতের ঘুম নাকি খুব পাতলা। তবু আট-দশ মিনিট ধরে ফোন করে সাহায্য চান। ইমার্জেন্সির সাহায্য আসবার আগেই জিনেৎ-এর সাড়াঅবশ্য তিনি পান। কোন রকমে ফোন ধরে সে তার বুকের কষ্টআর গভীর আচ্ছন্ন ভাবের কথা বলে। মঁসিয়ে রেনোয়া তার দরজায় গিয়ে দাঁড়াবার পর কোনরকমে দরজাটাও খুলে দিতে পারে তখন।
মঁসিয়ে রেনোয়া ইমার্জেন্সীতে ফোন করায় মিনিট খনেকের মধ্যেই রিসেপশনে মিঃ বারোহার ফোনআসে, তখনই একজন ডাক্তার পাওয়া যাবে কি না জানবার জন্যে। এ ফোন পেয়ে রিসেপশনের স্টাফ যে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে ওঠে তা বলাই বাহুল্য। মিঃ সেঙ্গারকে তৎক্ষণাৎ তারা ফোন করে জাগিয়ে সমস্ত ব্যাপারটা জানায়। মিঃ সেঙ্গার অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে তখনই হোটেলে চলে এলেও ব্যাপারটা নিয়ে বেশ একটু মুস্কিলে পড়েন। মঁসিয়ে রেনোয়া তখন অবশ্য ফোনে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁর ভাগনী ইতিমধ্যে অনেকটা সুস্থবোধ করছে বলে তাঁর জন্যে কোনো ডাক্তার পাঠাবার আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু অসল দুর্ভাবনা হয়েছে মিঃ বারোহাকে নিয়ে।মিঃ বারোহা সেই একবার ডাক্তারের জন্যে ফোন করারপর একেবারে চুপ হয়ে গেছেন। বার বার তাঁর ঘরে রিং করেও কোনো সাড়া তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি যেন একবার ফোন করেই ঘুমিয়ে পড়েছেন মনে হয়। ঘুমিয়ে পড়ার বদলে অজ্ঞান হওয়ার সম্ভাবনাও যে থাকতে পারে সে কথা ভেবেই ম্যানেজার তখন অত্যন্ত অস্থির হয়ে উঠেছেন।
এই পর্যন্ত শুনেই বারোহা একটু যেন লজ্জিতভাবে বাধাদিয়ে বললেন, "অজ্ঞানই কি হয়ে গিযেছিলাম? কে জানে! আমার কিন্তু রিসেপশনে ফোনকরার কথাও কিছু মনে নেই।"
ম্যানেজারকেতার পর একটু আশ্বাস দেবার চেষ্টা করলেবারোহা, "যাইহোক, আমি যখন আর সাড়াশব্দ করিনি থখন আমার ফোনটা দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুমের ঘোরেই করা বুঝেই নিশ্চিন্ত হতে পারতেন।"
"তা কি পারি!" ম্যানেজা একটু ক্ষুভ স্বরেই প্রতিবাদ জানালেন, "আপনারবিষয়ে কি করা উচিত, সেইটেইতখন দারুণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িযেছিল। আপনি সত্যি অসুস্থ হলে যথাসাধ্য চিকিৎসা আর শুশ্রুষার ব্যবস্থা আমাদের না করলে নয়। অথচ আমাদের কোনো বোর্ডারকে মাঝরাতে বিনা কারণে জাগিয়ে বিরক্ত করারঅধিকার আমাদের নেই। তবু মঁসিয়ে রেনোয়াও নিজের আর তার ভাগনীর অসুস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে ব্যাপারটা স্বাভাবিক কিছু নয় বলেই ধরে নিতে বাধ্য হলাম। আপনাদের সম্বন্ধে হোটেলের দায়িত্ব খাবার আর পানীয় নিয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানলাম আপনারা যা খেয়েছেন, তা একেবারে সন্দেহাতীতভাবে নিরাপদ নির্দোষ খাবার, কারণ সমস্ত হোটেলেই সেই এক খাবার পরিবেশিত হয়েছে আর তাতে বিন্দুমাত্র কুফলকারুর হয়নি।"
"খাবার না হলে দোষ কি তাহলে পানীয়ের?"
"সে সম্ভাবনাটা মাথায় এলেও আমল একরকম দিইনি বললেই হয়। আমাদের হোটেলেরচেয়ে বিশুদ্দ্ব একেবারে সর্বশ্রেষ্ঠ পানীয় দেশবিদেশের সেরা হোটেলের পক্ষেও দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ এ হোটেলে প্রথম শ্রেণীর জিনিষ ছাড়া নিরেসকিছু এক ফোঁটাও কখনো আসে না।"
"তাহলে কি মাত্রার বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে?"
"সত্যি কথা স্বীকার করছি, মিঃ বর্মা ভোর রাত্রে একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবেআমায় ফোন করার আগে ওদিক দিয়ে কিছু ভাবিইনি।"
"মিঃ বর্মা ভোরবেলা আপনাকে ফোন করেছিলেন? উনিহোটেলের এ ব্যাপারের কথা জানলেন কি করে?" আমার বিস্মিত প্রশ্নটাই বারোহার মুখ দিয়ে বার হল।
“হ্যাঁ!" ম্যানেজার বিমূঢ়মুখেই স্বীকার করলেন,"ওঁর ফোন পেয়ে আমি ঐ কথা ভেবেই বেশী হতভম্ব হয়েছি।প্রথমে অবশ্য অধিকারের বাইরে এরকম নাক গলাবার স্পর্ধার জন্যে ওঁকে জাহান্নমে বলার ইচ্ছেই হয়েছিল। কিন্তু শেষ অবধি ওঁর যুক্তি শুনে ওঁর প্রস্তাবে রাজী না হয়ে পারিনি।"
"কি যুক্তি দিয়েছেন মিঃ বর্মা! আর কি প্রস্তাব করেছেন?" এবারও আমার কৌতূহলটাই প্রকাশ করলে বারোহা।
আমাদের মত হোটেলের সুনামের পক্ষে এরকম ঘটনা যে অত্যন্ত সর্বনাশ ক্ষতিকর, আর তার মূলে কি আছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খুঁজে বার করে সে জট যে নিঃশব্দে এখনি সরিয়ে ফেলাদরকার, তা জানিয়ে উনি আমাদের সাহায্য করতে চেয়েছেন।
"সে-সাহায্য আপনার পক্ষে প্রত্যাখ্যান করা সম্ভব নয়, বুঝতে পারছি," নিজের অসুস্থতা যেন ভুলে গিয়ে একটু হেসে উঠে বললেন বারোহা। "কিন্তু এখনো সেইপ্রশ্নটাই উত্তর পাওয়া গেল না। মিঃ বর্মা হোটেলের ও ব্যাপারের কথা রাত না পোহাতে জানলেন কি করে? হোটেলের অন্য কোন বোর্ডারও ত এখনো এ বিষয়ে বোধহয় কিছু জানে না।"
"তা ত জানেই না।" ম্যানেজার বললেন, "তবু মিঃ বর্মা কেমন করে হোটেলের বাইরে থেকে এ খবর পেলেন উনি আসামাত্র আমি জিজ্ঞাসা করেছি। তাতে উনিযা উত্তর দিয়েছেন ওঁর মুখেই শুনুন।"
"সত্যি রহস্যটা কি তা বলবেন মিঃ বর্মা।" জিজ্ঞাসা করলে বারোহা।