XtGem Forum catalog
সম্পূর্ন বাংলা হরর ম্যাগাজিন
||মাসিক ভৌতিক||
অক্টোবর-২০১১

সংখ্যাঃ০১

বর্ষঃ০১

আমাদের কথা
সুপ্রিয় হরর গল্প প্রিয় বন্ধুরা , তোমরা কেমন আছ ?আশা করি মহান আল্লাহ্ তায়ালার অশেষ রহমতে তোমরা অনেক অনেক অনেক ভাল আছ ।শরতের এই সাদা মেঘযুক্ত আকাশে তো প্রায়ই রংধনু দেখ তাইনা ?আজ আকাশে না 'মাসিক ভৌতিক' এর দ্বিতীয় সংখ্যায় দেখে নাও রংধনু ।আর বিনোদনে মেতে উঠ তোমরা ।
আমাদের পরিচিতি
সম্পাদক [মোবাইল সংস্করন]: মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া সম্পাদক [Pdf সংস্করন]: কুয়াশা । উপদেষ্টাঃ ইমরান ভুঁইয়া পরামর্শঃ আকাশ ভুঁইয়া । প্রকাশিতঃ প্রভাতী অনলাইন প্রকাশনা কর্তৃক ।
ভৌতিক গল্পঃ জ্বিন কন্যা
মুহাম্ম্মদ সাখাওয়াৎ হোসেন
কে কে ওখানে । আমি । আমি কে ? বেশ কিছুক্ষন চুপচাপ । কোন উত্তর নেই । তারপর একটা র্দীঘ শ্বাস ফেলার শব্দ । আমি আবার ও জিজ্ঞেসকরলাম । আমি কে ? কথা বলছেন না কেন ? আমি ! আমি কে ? আমি আবারও ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলাম । আমি কেউ না । তবে আমার ঘরে কি করছেন ? কি ভাবে এসেছেন ? দরজা খুললো কে ? এক সাথে এতোগুলো প্রশ্ন করে আমি প্রায় হাপিয়ে উঠলাম । এমনিতেই আমার হার্টের অবস্থা ভাল নয় । এখন তো মনে হচ্ছে ভয়ে হার্ট ফেল করবে । ঘুমিয়ে ছিলাম ; হঠাৎ খুট খুট শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল । প্রথমে ভেবে ছিলাম ইদুর টিদুর হবে । কাজের মেয়েটার উপড়ে মেজাজ খারাপ হলো ,কতো দিন বলেছি রাতে শোয়ার আগে তেলাপোকা ,ইদুর এর ঔষুধ ছিটিয়ে ঘুমাতে । না তার কোন খবর নেই । মনে হয় এনেদেওয়া ঔষুধ গুলোর কথা মেয়েটা ভুলেই গেছে । কাল নিজেই ছিটিয়ে দিতে হবে । রাতে এমনিতেই আমার ঘুম হয়না ।তাও আজ লেট নাইটে শুয়েছি । ভোরে অফিস ধরতে হবে । একবার ঘুম ভাংলে আর ঘুম আসবে না । আমার স্ত্রীতিথি ছেলে মেয়েকে নিয়ে দু’দিনের জন্য বাবার বাড়ী গেছে । পুরো বাসায় আমি একা । অফিস থেকে ফিরে সামান্য লেখা লেখির চেষ্টা করা আর টিভি দেখা ছাড়া করার তেমন কিছু নেই । আজ ইস্পিলবার্গের একটা ছবি দেখে শুতে এমনিতেই দেরি করে ফেলেছি । মনে হয় আধা ঘন্টাও ঘুমাতে পারিনি এর মধ্যে খুট খুট শব্দ করে যন্ত্রনা শুরু হয়েছে । একবার মনে হলো ইদুর রান্না ঘরে শব্দ করছে । ঘুমের মধ্যেই হুস হুস শব্দ করে ইদুর তারাতে চেষ্টা করলাম । হুস , হুস করে আমি ঘুমিয়েযাচ্ছি আবার শুরু হচ্ছে খুট খুট শব্দ করা । খেয়ালকরে দেখলাম আমি হুস হুস করলে কিছু সময়ের জন্য থেমে যাচ্ছে খুট খুট শব্দ । চোখ লেগে আসতেই আবার সেইখুট খুট শব্দ । কখন যে হুসহুস করতে করতে ঘুমিয়ে পরে ছিলাম খেয়াল নেই । হঠাৎ অনুভব করলাম, কে যেন আমার বা পায়ের বুড়ো আঙুল ধরে আলতো করে টানছে ।চোখ থেকে ঘুম পুরোপুরে সড়ে গেছে । আমি চোখ হালকাকরে তাকালাম । পুরো ঘর অন্ধকার । বাতি জ্বালিয়েঘুমাতে ভুলে গেছি ? এখন দেখছি বাতি নিবানো । যতো দূর মনে মনে আছে -টিভি বন্ধ করে শন্করের একটা বই পড়ছিলাম । ঘরের বাতি জ্বলছিল । তা হলে বাতিটা নেভালো কে ? পায়ের আঙুলে আবার কেউ র্স্পশ করলো । আমি ভয় পেতে শুরু করছি কেননা চোখ খুলে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না । ইদুরের চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিলাম । আমি মশারি টানিয়ে শুয়েছি । শোয়ারআগে বেশ ভাল মতো মশারী গুজে তারপর শুয়েছি । ভেতরে ইদুর থাকলে আগেই দেখতে পেতেম । হঠাৎ ভুতের কথা মনে হলো ? ভুত নয় তো? ভুতের কথা মনে হতে ভয় বেড়ে গেলো । ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে । নড়তে পারছি না । মনে হলো নড়াচড়া করলে কেউ আমাকে মেরে ফেলবে । আবার ভয় পাচ্ছি দেখে নিজের উপড়ই রাগ লাগছে । কেউ শুনলে হাসবে । ছেলেটার কথা মনে হলো । ভাবলাম ও ,ও মনে হয় আমার চাইতে বেশী সাহসী । বা পাটা আমি একটু নাড়ালাম । এমন ভাবে নাড়ালাম যেনো ঘুমের মধ্যে নাড়াচ্ছি । সঙ্গে সঙ্গে স্পর্শটা বন্ধ হয়েগেলো । মনে হলো কেউ পায়েরউপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিল । এবার ভাবলাম , ইদুর হবার প্রশ্নই আসে না । আমিভয়ে চোখ বন্ধ করে পরে আছি। ডাইনিং রুম থেকে ভেসে আসা ঘড়ির টিকটিক শব্দ শুনতে পাচ্ছি । এ ছাড়া অন্য কোন শব্দ নেই । চারিদিকে শুনশান নীরবতা , একটু আগে হয়ও খুট খুট শব্দটাও এখন আর হচ্ছে না । হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার শরীরে থাকা চাদরটা ধরে টানছে । আমি মনে মনে দোয়াদুরুদ পড়তে লাগলাম । নিজের ঘরে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির সন্মুক্ষিন হবো কল্পনাও ছিল না । ভয়েহাত পা একেবারে জমে যাচ্ছে । শরীর থেকে চাদরটা একটু একটু করে নীচের দিকে নেমে যাচ্ছে । যে করছে কাজটা , বুঝা যাচ্ছে সে খুব ধীরে সু্স্থেই কাজটা করছে । কি করবো বুঝতে পারছিনা । বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখাই হচ্ছে আসল ব্যাপার । শুধু মাত্র বিপদের সময় মাথা ঠান্ডা রাখার কারনে ৭০% লোক মৃত্যুর হাত থেকে বেচেঁ যায় । পরিসংখ্যানটা কোথায় যেন পড়েছিলাম । আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে চেষ্টা করলাম । একবার ভাবলাম জোরে চিৎকারকরে উঠি । তাতে চাদর টেনে যে আমাকে ভয় দেখাতে যাচ্ছে সে উল্টো ভয় পেয়ে যাবে । তার পরই মনে হলো চোর নয় তো ? বেশ কিছু দিন যাবত মহল্লায় চোরের আনাগোনা বেড়ে গেছে । সেদিও নাকি জ্বানালা দিয়ে বাড়ী ওয়ালির ব্যাগ থেকে মোবাইল ,টাকা নিয়ে গেছে চোর । কিন্তু আমার বিছানাটা তো জানালা থেকে বহু দূরে । জানালাও বন্ধ ।তবে কি চোর আগেই ঘরের ভেতরে ডুকে ছিল ? এখন আফসোস হচ্ছে কেন শোয়ার পূর্বে চেক করে শুলাম না । অনেকক্ষন অন্ধকারে থাকার ফলে অন্ধকারটা চোখে সয়ে এসেছে । পায়ের দিকে কিছু একটা নড়ে উঠলো । আবচ্ছা আলোয় একটা অবয়ব দেখা যাচ্ছে । আমি চোখ কুচকে ভাল করে দেখতে চেষ্টা করলাম । মনে হলে কেউ একজন মেঝেতে হাটু ঘেরে খাঁটের উপর কুনি রেখে বসে আছে । ভয়ে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো । শুয়ে থেকেও স্পষ্ট নারী অবয়বটা দেখতে পাচ্ছি । ঘারের উপরে উড়তে থাকা চুল পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি । আমার সমস্ত শরীর ঘেমে উঠেছে । কখন যে পুরোপুরি চোখ খুলে তাকিয়ে আছি বলতে পারবো না । হঠাতই অবয়বটা আমার পায়ের উপড় থেকে হাতটা সড়িয়ে নিয়ে আমার মুখেরদিকে তাকালো । আমার মনে হলো , সে মনে হয় বুঝতে পেরেছে আমি তাকিয়ে আছি । আমি চোখ বন্ধ করার সাহস পেলাম না । দু’জন চোখাচোখিতাকিয়ে থাকলাম । আমি মুহুত কাল ভুলে গেছি । চুপকরে পরে আছি । হঠাৎ ঘরের ভেতর প্রচন্ড বেগে বাতাস বইতে শুরু করলো । মনে হলো সব কিছু উড়িয়ে নিয়ে যাবে । আমি দু’হাত দিয়ে খাটের কিনার আকড়ে ধরে থাকলাম । এক সময় বাতাস হঠাৎ ই থেমে গেল ।
অবয়বটা এক সময় উঠে দাঁড়ালো ।আমি কিছু একটা বলতে চাইলাম , কিন্তু পারলাম না । মনে হলো গলার ভেতরের সব রস কেউ নিংরে বেড় করে নিয়েছে । তবুও মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম । ভয় পেলে চলবে না । ভয় পেলে চলবে না । বাঁচতে হলেমাথা ঠান্ডা রাখতে হবে । এছাড়া অন্য কোন উপায় নেই । শুধু মাত্র মাথা ঠান্ডা রাখার কারণে ৭০% লোক বেঁচে যায় । সঙ্গে সঙ্গে একটা হিন্দি ছবির ডায়ালোগ মনে হলো -জো ডরগায়া ও মর গায়া । আমি শরীরের সকল শক্তি এক করতে চেষ্টা করলাম । তখনই আমার মুখ থেকে প্রশ্নটা ছুটে গেলো কে কে ওখানে ? নিজের গলার স্বর নিজেই চিনতে পারলাম না । মনে হলোআমার গলায় অন্য কেউ কথা বলছে । আমি আবার ও একই প্রশ্ন করলাম -কে কে ওখানে ? এবার মৃর্দু একটা হাসির শব্দ ভেসে এলো । আমি আবার বললাম কে ? -আমি । খুব আস্তে উত্তর এলো । কেউ খেয়াল না করলে শুনতে পেত না । -আমি কে ? ভয়ে আমার হাত পা অসার হয়ে আছে । -আমি কেউ না ,বলে আবয়বটা হেসে উঠলো । যেন নিক্কন হয়ে কানে বাজছে । আমি মুগ্ধ হলাম । তিথির ভাষায় অতি তারাতারি মুগ্ধ হয় গাধা মানবরা । নিজেকে আমার কাছে গাধা মানব মনে হলো । -আমি কিন্তু ভয় পাচ্ছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? নিজেকে কেমন শিশু শিশু মনে হলো । এবার কোন উত্তর এলো না । তবে আবয়বটা উঠে গিয় ঘরের মাঝখানে রাখা রকিং চেয়ারটাতে বসে পরলো । মশারির ভেতর থেকেও দেখতে পাচ্ছি চেয়ারটা দুলছে । কেউ একজন হেলান দিয়ে বসে আছে চেয়ারটাতে । আমি স্বপ্ন দেখছি নাতো ? হাত নাড়িয়ে চিমটি কাটার শক্তি বা সাহস কোনটাই পেলাম না । শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি চেয়ারটার দিকে । (২) পৃথিবীতে কোন কিছুই যেমন স্থায়ি নয় । তেমনি আমার ভয়টাও স্থায়ি হলো না । খুব ধীরে ধীরে ভয়টা কেটে যাচ্ছে । গুন গুন করে একটাশব্দ হচ্ছে । মনে হলো আমারঘরে থাকা আবয়বটা গান গাচ্ছে । কিন্তু আমার পরিচিত কোন সুরে নয় , অচেনা কোন সুরে । তিথি যেমন ঘরের কাজ করতে করতে আমন মনে সুর ভাজে , তেমনি । আমি সুরটা ধরতে চেষ্টা করে পারলাম না । না । এমন সুর আগে কখন ও শুনিনি । তবে সুরের মাদকতায় ভেসে গেল পুরো ঘর । আমি চোখ বন্ধ করে গান শুনছি । আর ভাবছি কি করা যায় । একবারমনে হলো হাউমাউ করে কেঁদে কেটে যদি মাপ চাই তবে কেমনহয় । নিজেরই পছন্দ হলো নাব্যাপারটা । আমার মাথা কাজ করতে শুরু করছে । ভাল লাগল । একবার ভাবলাম হেলুসিনেশন নয় তো ? নিজের মুখ দিয়েই বিরক্তিসূর্চক শব্দ “চুক”বেড় হয়ে এলো । সঙ্গে সঙ্গে আবয়বটির দোল খাওয়া বন্ধকরে দিয়ে আমার দিকে তাকালো । আপনি কে ? দয়া করে বলবেন? মনে হলো একটা দীর্ঘস্বাস পরলো । এবাবে অর্যাচিত ভাবে কাউকে আমার ঘরে দেখে আমি ভয় পাচ্ছি এবং অসুস্থি বোধ করছি । দয়া করে বলুন আপনি কে ? কি চান ? -আমাকে ভয় পাবার কিছু নেই । আমি তোমার কোন ক্ষতিকরবো না । আপনি ঘুমান । আবাও সেই হাসির শব্দ । -কিন্তু এবাবে কেউ ঘরে বসে থাকলে তো আমার ঘুম আসবে না । -চলে যেতে বলছেন ? আপনি কে ? কেনো এসেছেন তা যদি বলতেন । আমি কৌশলে প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলাম । -আমি আফরোজা । এসেছি তাকাফুল শহর থেকে । আমি মানুষ সম্প্রদায়ের কেউ নই । আমি জ্বিন সম্প্রদায়ের মেয়ে বলে মেয়েটি হেসে উঠলো । জ্বিন ; শুনে আমি কেঁপে উঠলাম । কোথা থেকে হালকা চাপা ফুলেন মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছে , পুরো ঘর মো মো করছে । হাসির শব্দে আমি আবার বিমহিত হলাম । আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর। আমার মুখ ফসকে বের হয়ে গেল কথাটা । নিজেকে আবারাও কেমন হেবলা মনে হলো । তিথির কথা মনে হলো ওযদি জানে গভীর রাতে ঘরে বসে আমি কোন জ্বিন মেয়ের হাসির প্রশংসা করছি তা হলে ও কি করবে ? আপনার স্ত্রীর কথা ভাবছেন? আমি মাথা নাড়ালাম । খুব ভালবাসেন বুঝি ? বলে মেয়েটি হাসতে লাগলো । রকিং চেয়ারটি আবার দুলছে। আমি কিছু বলার আগেই মেয়েটি বললো , এখন কি আপনার ভয় লামছে ? আমি না, বললাম । আমি মিথ্যা বললাম । মানুষরা খুব সহজে মিথ্যা বলতে পারে । বলে মেয়েটি আবার হাসছে । মিথ্যা বলে ধরা খাবার জন্য কেমন লজ্জা লাগছে । আমার একবার মনে হলো বাতি জ্বালাবো কি না ?
দয়া করে বাতি জ্বালাবেন না । আমি বাতি সহ্য করতে পারিনা । আর একটু পরে আমি চলে যাবো । আমি চমকে উঠলাম এ যে দেখছিআমার থর্ট রিড করতে পারছে । আপনি কেন এসেছিলেন...........আমি প্রশ্নটা শেষ করতে পারলাম না । -এমনিতেতো আসিনি । আছে একটা কারণ আছে । কি কারন ?আমি কারন যানার জন্য অস্থির হলাম । আমার ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটিকে দেখি । -আমাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছেতাই না ? মেয়েটি হাসতে হাসতে বললো । জ্বি । আমি ছোট্র করে উত্তর দিলাম । আমাকে না দেখাই ভাল । আমরাদেখতে মানুষের মতো নই । আমরা হচ্ছি আগুনের তৈরি । আর মানুষ হচ্ছে মাটির । আমাদের কোন নিদিষ্ট কোন আকৃতি নেই । আমরা যে কোন আকার ধারন করতে পারি । যে কোন জায়গাতে যেতে পারি । শুধু মাত্র আসমানের নিদিষ্ট্য একটা সীমা পর্যন্ত । তা হলে এটা কি আপনার আসল আকৃতি নয় ? না । আপনি কি তা হলে মেয়ে নন ? আমি মেয়ে জ্বিন । আমাদের মধ্য ছেলে মেয়ে দুটো প্রজাতি আছে । মানুষের মধ্যে আছে তিনটি । মানুষের মধ্যে তিনটি ? একটি নারী এবং অন্যটি পুরুষ । আমি আরেকটি খুঁজে পেলাম না । মাথা কাজ করছে না । আমি এখন যাবো । কেন এসেছিলেন তা তো বললেন না ? আরেক দিন বলবো । তার মানে এখনই চলে যাবেন ? হ্যা , আযান এর সময় হয়ে এসেছে । আমি যাই । মনটা খারাপ হয়ে গেল । এমনসময় মসজিত থেকে ফজরের আযান ভেসে এলো । মেয়েটি হঠাৎই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল । আমি তরিঘড়ি করে উঠে বাতি জ্বালালাম । না ! কেউ নেই । চেয়ারটা দুলছে । আমার মাথাটা কেমন করে উঠলো । অজানা কোন ভয়ে শরীর ছমছম করছে । কোন মতে বিছানায় বসে পরলাম । পরিশেষ : যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমি হাসপাতালে । সবাই মনে করলো আমি হঠাতই মাথা ঘুরে পরে গিয়েছিলাম । আমি ও কাউকে কিছু বললাম না। সব নিজের ভেতরে চেপে রাখলাম । বললে সবাই হয়তো হাসবে । তবে আশ্চযের বিষয় হলো এটা যে -মেডিকেল বোর্ড তন্ন,তন্ন করে খুঁজেও আমার হার্টে কোন অসুখ খুঁজে পেলো না । যেনো রাতারাতি সব উবে গেছে । ডাক্টারা সবাই বললো মিরাকল ! মিরাকল ! কিন্তু আমি মনে মনে আফরোজাকে ধন্যবাদ দিলাম । সকল মিরাকলের পেছনেই কারো না কারো হাত থাকে । এখন আমার যখনই গভীররাতে ঘুম ভাঙে তখনই আমি নিজের অজান্তে আফরোজা নামক জ্বিন কন্যাকে খুঁজি।।
আঁধার বিলাস
লিপিকার
ক্লাস চলাকালীন সময়ে জামিল হঠাৎ রাহাতকে কনুই দিয়ে খোঁচা দিল। রাহাত তাকাতেই সে বললো,"ভুডুচর্চার নাম শুনেছিস?" "কিসের নাম?" "ভুডুচর্চা। একধরনের ডাইনীবিদ্যা। প্রেতসাধনাটাইপ ব্যাপার স্যাপার।" "জানিস এখন স্যার কি নিয়ে লেকচার দিচ্ছে। 'মলিকিউলার সিমেট্রি' আর তোর মাথায় ভুডুচর্চা! পাগলা তুই মানুষ হবি কবে?" "ক্লাস শেষে সব বলব।" জামিল রাহাতকে টেনে রহিম মিয়ার চায়ের ঝুপড়ির পাশে নিয়ে গেল। কন্ঠ নামিয়ে বললো,"আমার সাথে এক জায়গায় যাবি?" "কোথায়?" "লালমাটিয়ার একটা বাসায়।" "সেখানে গিয়ে কি হবে?" "আগে চল তারপর বলব। ঐখানে আমার ওস্তাদ থাকেন। প্রেতসাধনা করে" রাহাত অট্টহাসি দিয়ে বললো,"কে থাকে? তোর ওস্তাদ?প্রেত সাধনা করে?" "হ্যাঁ আমার ওস্তাদ। আমাকে বুধবার মানে আগামীকাল তার বাসায় দাওয়াত করেছেন। তিনি একাথাকেন। আমি বলেছি আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে আসব। আমরা রাতেও ওখানে থাকব। একা থাকতে কেমন জানি লাগে, এজন্য তুইও থাকবি।" "রাতে থাকব কেন?" "আগে বল তুই যাবি কিনা?" "ভেবে দেখি।" "ভাবাভাবির কিছু নাই। ঐখানে ওনার সাথে একটু পরিচিত হবি। তোর থাকতে ইচ্ছা হলে থাকবি নাহলে চলে আসবি.....সোজা হিসাব। কি... রাজি?" "ওকে। যা রাজি।" "থ্যাঙ্কস্‌ দোস্ত।" ঢাকা শহরে এমন জঙ্গলময় বাড়ি আছে এটা রাহাত জানতনা। বিশাল একতলা বাড়ি, চারপাশে অনেক বড় বড় গাছ, লনের ঘাসগুলো না কাটতে কাটতে অনেক লম্বা হয়ে গেছে। চারপাশে অযত্নের ছাপ। জামিল রাহাতকে প্রায় না শোনার মত ফিসফিস করে বলল,"ওস্তাদ কিছুদিন আগে মেক্সিকো থেকে আসছে।" "এর সাথে তোর পরিচয় কিভাবে হয়েছে?" "ইন্টারনেটে.....চ্যাট করতে করতে পরিচয়।" "ওরে বাবা। আমি এতদিন জানতাম ইন্টারনেটে চ্যাট করে প্রেমিক প্রেমিকা হওয়া যায় আর এখন দেখি ওস্তাদ আর সাগরেদও হয়......হা হা হা" "ফাইজলামি করিসনা।" জামিল কলিংবেল টিপলো। ডিংডং........রাহাত হঠাৎ টের পেলঅজানা আশঙ্কায় তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। যে ভদ্রলোক দরজা খুলে দিলেন তাকে দেখে মুহুর্তেই সকল আশঙ্কা উবেগেল। চশমা পরা ভালোমানুষ টাইপ চেহারার একজন ৫০-৫৫ বছর বয়সের লোক। তিনি অভ্যর্থনা জানিয়ে তাদের ভিতরে নিয়ে গেলেন। রাহাতআর জামিল এত সুন্দর করে সাজানো ঘর খুব কমই দেখেছে। দুজনই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, এত দামী আসবাববপত্র দেখে নিজের অজান্তেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। ভদ্রলোক সোফায় বসতে বসতে বললেন,"তোমাদেরকে তুমি করেই বলি।" জামিল বললো, "'অবশ্যই, আমরা আপনার ছেলের বয়সী। স্যার আমার বন্ধু আপনার সম্পর্কে জানতে চায়। ভুডুচর্চার ব্যাপারে তার খুব আগ্রহ।" জামিলের বানানো কথা শুনে রাহাতের কান খাড়া হয়ে যায়। ভুডুচর্চা নিয়ে রাহাতের আগ্রহ এটা ভাবতেইতার হাসি পাচ্ছে। আপাতত তার আগ্রহ হলো এই ভাঁড় দুইটা কি করে সেটা দেখা। ভদ্রলোক বলতে লাগলেন,"আমিযখন তোমাদের মত তখন পড়তে চলে যাই কানাডায়। সারাদিন ক্লাস আর সারারাতপড়াশোনা দিয়েই কাটাতাম। বাপের প্রচুর টাকা থাকার কারনে কখনও পেটের চিন্তা করতে হয়নি।একদিন পরিচয় হয় এক সাউথ আমেরিকানের সাথে......ডেভিডরোজারিও। আমি খুব মেধাবী ছাত্র ছিলাম বলে অনেক পরিচিতি পেতাম। ডেভিডের সাথে পরিচয় পর্বটা খুব ইন্টারেস্টিং ছিলো। একদিন পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলাম। ডেভিড আমার দিকে সুন্দর করে হেসে বললো, "'আমি জানতাম তুমি এখন পড়ে যাবে, তোমার নিয়তিতে তাই লেখা ছিল, আমি ডেভিড... তুমি?"........হয়ত এখানেই তার পর্ব শেষ হয়ে যেত কিন্তু তা হয়নি। সে আমার জীবনে আজও ছায়ার মত আছে।" এইটুকু বলে ভদ্রলোক রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললো, "ইয়াং ম্যান, ইউ ডোন্ট বিলিভ মি? হাহ্‌!" রাহাত হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। কি বলবে ভেবে পেলনা। সে বললো,"ডেভিড কোন দেশের ছিল?" "পেরু" "আচ্ছা। তারপর......" "তারপর ডিনার....." ডিনার শেষে রাহাত আর জামিল ড্রইং রুমে বসে আছে। রাহাত জামিলকে বললো,"দেখ, এত কথা শুনলাম অথচ বেটার নামটা জানিনা। বেটার নাম কি?" "উনার নাম খালেকুজ্জামান।" "এই বেটাতো একটা পাগল। শোন আমি পাগক ছাগলের সাথে থাকবোনা। খাওয়া শেষ এখন চলে যাব।" লোকটা হঠাৎ রুমে ঢুকে বললো....."এখনতো যাওয়া যাবেনা। আসল মজা বাকি রয়ে গেছে।" রাহাত মুখটা সুবোধ বালকেরমত করে বললো, " আপনার কাহিনী এখনও শেষ হয়নি।" "হ্যাঁ, ডেভিডের সাথে ঘুরাঘুরি করতে করতে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। ও একটু অদ্ভুত ছিলো। আজব এক সংগ্রহশালা ছিলো তার...মানুষের হাড় থেকে শুরু করে গাছের শিকড় সব ছিলো তার সংগ্রহে........আমার থিসিস কমপ্লিট হবার পর ডেভিড আমাকে একদিন অফার দিলো.....খালেক তুমি হাইতি যাবে?...আমি বললাম হাইতি গিয়ে কি হবে?...সে বললো, অন্যদের যা হয়না তা হবে।" তোমরা হয়ত বিশ্বাসকরবেনা পরের মাসেই আমি তার পিছন পিছন হাইতি চলে গেলাম। ডেভিড গেল ভুডু শিখতে আর আমি গেলাম বেড়াতে"
জামিল বললো,"ওখানে গিয়ে কি করলেন?" লোকটা হেসে বললো,"ওখানে গিয়ে আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে ভয়ানক ঘটনা দেখলাম" "সেটা কী?" খালেকুজ্জামান রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললেন"রাহাত দেখতো বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কিনা?" রাহাত উঠে গিয়ে জানালার পর্দা সরিয়ে দেখলো বাইরেবৃষ্টি হচ্ছে। সে ফিরে আসতেই লোকটা অদ্ভুত হাসি দিয়ে বললো,"তুমি কি মনে কর প্রেতসাধক হতে হলে আলখাল্লা পরতে হয় আর চুলে জট পাকাতে হয়?" কথাটা শুনে রাহাত থমকে গেল কারন শুরু থেকেই সে এইলোককে অবিশ্বাস করে আসছে.........কিন্তু মনে হয় এই লোকের সুক্ষ কোন অজানা ক্ষমতা আছে মানুষের মন বোঝার। রাহাত বললো, "এটা ২০০৮ সাল। আই ডোন্ট বিলিভ ইন ঘোস্ট।" লোকটা রক্ত হিম করা হাসি দিয়ে বললো, "হা হা হা হা......মি টু। তুমি ভাগ্যবান এবং বুদ্ধিমান।" লোকটা আবার বলা শুরু করলো,"হাইতিতে আমি ছিলাম ১৮ বছর। এতদিনে দেশের সাথে সব যোগাযোগ ছিন্ন করে ফেলেছি। আমি সেটাই চেয়েছিলাম। প্রথম তিন বছর ডেভিড ছিলো আমার সাথে........তারপর আমি একা।" "ডেভিড কি চলে গিয়েছিলো?" "না মরে গিয়েছিলো। একদল জনতা তাকে জ্যান্ত আগুনে পোড়ায় আমার সামনে।" শুনে জামিল আর রাহাত চমকে যায়। জামিল বলে, "কেন?" লোকটা কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে বললো......"এখন ১২টা বাজে....তোমরা প্রস্তুত?" রাহাতের ঘাঁড়ের রোমগুলো খাড়া হয়ে গেল। লোকটা কিসের প্রস্তুতির কথা বললো? সে নাকে কিসের যেন গন্ধ পেল। খুব বাজে গন্ধ। গন্ধটা থেকে থেকে আসছে। রাহাত বার বার জামিলের দৃষ্টি আকর্ষন করতে লাগলো। কিন্তু সে অবাক হয়ে দেখলো জামিল খালেকুজ্জামানের দিকেই তাকিয়ে আছে। খালেকুজ্জামান আবার বলতে লাগলো........"আমি অজ্ঞান অবস্থায় তিনদিন ছিলাম। যেদিন জ্ঞান ফিরল সেদিন নিজেকে আবিষ্কার করলাম জনতার মাঝে, শয়ে শয়ে মানুষ আমার চারপাশে দাঁড়িয়ে আমার দিকে ঝুঁকে আছে। সবাই অর্ধ উলঙ্গ। কালো কালো বিদঘুটেচেহারার মানুষ। । আমাকে চোখ মেলতে দেখে লাঠি হাতে একজন মানুষ আমার দিকে এগিয়ে আসল। সে ছিলো ঐ গ্রামের নেতা। সে আমার বুকে লাঠি ঠেকিয়ে বললো,"আইডা কোথায়?" আমি কোন কথা বলতে পারলামনা...শুধু ইশারা দিয়ে বললাম যে আমি কিছুই জানিনা আমার কি হয়েছে। লোকটা আরেকটা লোককে ইশারা দিয়ে কি যেন বললো.......খেয়াল করে দেখলাম অনেক মানুষ মিলে এক জায়গায় কাঠ জড়ো করছে....তার মাঝে দুটো খুঁটি আড়াআড়ি করে ক্রস করে লাগানো......জেসাস ক্রাইস্টের ক্রসের মত। মুহুর্তের মধ্যে আমার মনেপড়ে গেল যে এরা আমাকে পোড়ানোর ব্যবস্থা করছে। আমার পাদুটো টলে গেল। কোনমতে বসে মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে লাগলাম....হঠাৎ খেয়াল করলাম সৃষ্টিকর্তার পরিবর্তে আমি ডাকছি"আইডা, আইডা, আইডা".........লোকগুলা আগুন জ্বালালো....তারমাঝে কিছু লাল রং ছিটিয়ে দিল....তারপর আমার মাথায় একরকম হলদে দুর্গন্ধময় তরল ঢেলে দিল....আমাকে চাবুক দিয়ে পেটাতে লাগলো....তিনদিন নাখাওয়া মানুষকে এভাবে পেটালে সে বেঁচে থাকার কথানা। কিন্তু আমি বেঁচে গেলাম। আর যে বাঁচালো সে হলো ডেভিড......." জামিল হাঁ করে শুনতে থাকলো.....তার চোখ দুটো যেন কোটর ছেড়ে বের হয়ে আসছে। সে মূর্তির মত বললো...."কীভাবে?" রাহাত একটা কুকুরের কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছে। কুকুরের কান্না সে আগেও বহুবার শুনেছে কিন্তু আজকে সে এই শব্দটাকে ভয় পাচ্ছে। সে মনে মনে নিজেকে বলছে...."রাহাত তুমি ভয় পেওনা। সিচুয়েশনের কারনে তুমি ভীত।" লোকটা চট করে রাহাতের দিকে তাকিয়ে হাসলো তারপরবলতে লাগলো.... "আমাকে যখন সবাই মারছে তখন এক লোক হঠাৎ দৌড়ে এসেআমার নিশ্চল দেহের উপর শুয়ে পড়লো। এই আকস্মিক ঘটনায় গ্রামবাসী কিছুটার জন্য চমকে গেল। তারা লোকটাকে দাঁড় করালো.....আমি আধচোখ মেলে দেখলাম.....ডেভিড।" সেদিনের জন্য আমরা বেঁচে গেলাম....ঐদিন আর আমাদেরকে তারা পোড়ালোনা। গ্রামবাসী একটা মাচা বানালো.....তার উপরে আমাদেরদুজনকে বেঁধে রাখলো..মাচার নিচে তিনটা বিশাল বিশাল নেকড়ে ছুটোছুটি করছে.....পিঠে পিঠঠেকিয়ে দুজন পড়ে রইলাম।আমি বারবার এলিয়ে পড়ছিলাম....ডেভিড হঠাৎ ফিসফিসিয়ে আমাকে বললো....কালকেই সব শেষ হয়েযাবে। আমি বললাম...."আইডা কোথায়?" ডেভিড কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো..."সে মিলিয়ে গেছে...তার অনন্য ক্ষমতা দিয়ে সে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে যখন সে জানতে পেরেছে গ্রামবাসী তার খোঁজ পেয়ে গেছে।" "সে কোথায় মিলিয়ে গেছে?" "তোমার মাঝে" আমার হঠাৎ মনে পড়লো আইডার হাতে হাত রাখার পর সবকিছু ওলটপালট হয়ে গিয়েছিলো। আমি দম নিয়ে বললাম..."আইডা আমার মাঝে। কিন্তু আমি টের পাচ্ছিনা কেন?" "জানের বদলা জান।" "মানে?" "আইডা তখনই ক্ষমতা দেখাতেপারবে যদি তার নামে কাউকে বলি দেওয়া হয়।" "মানে?" "তুমি কি ক্ষুধা অনুভব করছ?" আমি অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম আমার শরীরে ব্যথা কিন্তু কোন ক্ষুধা নেই। ডেভিড হেসে বললো....."এটাই আইডার অস্তিত্বের প্রমান। আমি আইডার জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করব। তুমি শুধু আমার মৃত্যুর পর রক্তটুকু পান করবে তাহলেই আইডা ক্ষমতা ফিরে পাবে।"
"আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।আমার কি হবে?" "তুমিতো তুমিই থাকবে। আইডাকে তুমি ধারন করবে।" এরপর লোকটা দম নেয়ার জন্য থামল। রাহাতের শিড়দাঁড়া বেয়ে বারবার যেন শীতল কিছু বয়ে যাচ্ছে। সে আস্তে বললো....."তারপর কি হলো?..." খালেকুজ্জামান হেসে তার দিকে তাকিয়ে বলল...."তারপর ভোর হলো। গ্রামবাসী আবার কাঠ জড়ো করল...দুটো ক্রস বানালো...ডেভিডকে আমি জিজ্ঞেস করলাম "আমাকে এরাপেল কোথায়?" "আইডার ঘরে অজ্ঞান অবস্থায়। আমি গ্রামবাসীকে দেখে প্রথমে পালিয়ে গিয়েছিলাম। তাদের হাতে পড়লে তোমাকে বাঁচানো যাবেনা।" "এখন কি আর বাঁচব?'' ডেভিড হাসলো। দুটো লোক মাচার উপরে উঠলো। তাদের দুজনের হাতেই ধারালো দুটোবড় বড় ছোরা। আমাদের দুজনকে টেনে হিঁচড়ে নিচেনামালো। ডেভিড আমার কানেরকাছে মুখ নামিয়ে বললো...."তুমি শুধু রক্তটুকু পান করবে" এই বলেই সে হঠাৎ পাশে দাঁড়ানো লোকটার হাত থেকেছোরা নিয়ে নিজের গলায় পোঁচ দিল। আমি চিৎকার করে উঠলাম.....ডেভিড ঘড়ঘড় জাতীয় শব্দ করতে থাকলো। সে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো....আমি দেখলাম আমার চারপাশে বালি কুন্ডলী পাকিয়ে ঘুরছে....একটা বাজে গন্ধ নাকে লাগছে...গ্রামবাসী ভয়ে দূরে সরে গেল। কিছু একটা প্রচন্ড শক্তিতে আমাকে ডেভিডের কাছে নিয়ে ফেলল.......তারপর নিজ থেকেই আমার মুখ ডেভিডের গলার দিকে এগিয়ে গেল.........." খালেকুজ্জামান আবার কিচুক্ষন চোখ বন্ধ করল। চোখ মেলে তীক্ষ্ণ চোখে রাহাতের দিকে তাকিয়ে বলল......"নোনা রক্তের স্বাদ......ডেভিড ঘড়ঘড় করে আমাকে বলল যে সে এখনও মরেনি। আমি নিজেকে কোনভাবেই নাড়াতে পারছিলামনা। কেউ আমাকে প্রচন্ড ভারী করে ফেলেছে....ততক্ষনে সাহসী কিছু গ্রামবাসী এগিয়ে আসল....তাদের কেউ কেউ আমাদের দিকে জ্বলন্ত কাঠ ছুঁড়ে মারলো...দুজন এসে ডেভিডকে তুলে ধরল। তাকে টেনে নিয়ে গেল আগুনের কাছে....আমার দিকে কারো খেয়াল ছিলোনা.....আমি ধীরেধীরে নিজেকে গুটিয়ে মাটিতে ঘেঁসে ঘেঁসে পিছাতে থাকলাম...কেউ বুঝতেপারছিলনা কিছুই....যেতে যেতে দেখলাম তারা রক্তাক্ত ডেভিডকে ক্রসে বেঁধে ফেলল। ডেভিড আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি একমনে বলে গেলাম..."আইডা একটা কিছু কর।"......দাউ দাউকরে আগুন জ্বলে উঠলো। গ্রামের মানুষগুলো আনন্দ ধ্বনি তুলে নাচতে লাগলো......কারো কারো মুখে গান..কেউ কেউ মন্ত্র পড়ছিলো.....ডাইনী তাড়ানোর মন্ত্র। আমি একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে গেলাম...গ্রামের লোকগুলোর যখন খেয়াল হলো আমার কথা ততক্ষনে আমি অনেক দূরে চলে গেলাম...গ্রাম ছেড়ে বহু দূরে...প্রচন্ড শক্তিতে আমি দৌড়াতে থাকলাম.........এএক ভয়ানক ছুটে চলা......বাকি ১৫ বছর হাইতিতে ছুটে চলেছি....তারপর পেরু.....এর পর মেক্সিকো....। আমি আজও ছুটে চলছি।" রাহাত থেকে থেকে গন্ধটা পাচ্ছে। এখন গন্ধটা বেশী লাগছে। জামিলের চোখ কোটর ছেড়ে বের হয়ে যাচ্ছে। তার গা কেঁপে কেঁপে উঠছে। জামিল জড়ানো কন্ঠে বললো....."আইডার কি হলো?" লোকটা ঝট করে উঠে দাঁড়ালো তারপর হাতদুটো দুপাশে মেলে ধরে দাঁড়িয়ে বলল, "আইডা এখানে।" রাহাত চমকে গেল। লোকটা আবার বসে বলল...."আমি ডেভিডের রক্ত পান করতে পারিনি.....যেটুকু পান করেছি সেটা ছিল জীবিত ডেভিডের। আইডা এখনও আমাকেতাগাদা দেয় ডেভিডের রক্তের জন্য......সে তার পূর্ন ক্ষমতা প্রকাশ করতেপারছেনা।" "তার পূর্ন ক্ষমতা কি?" জামিল জিজ্ঞেস করল। "তার পূর্ন ক্ষমতা হলো যে কোন মানুষের দেহে যখন তখন নিজেকে ধারন করে অনন্তকালবেঁচে থাকা। এর জন্য দরকার তার উদ্দেশ্যে বলী দেওয়া কোন মানুষের রক্ত।পান করলেই সে মুক্ত হয়ে চলে যাবে অন্য কারো দেহে।" "আপনাকে সে মুক্ত করেনি?" "হা হা হা.......না।" "কেন?" "কারন আমি এতদিন বলী দেওয়ার জন্য ডেভিডের মত কাউকে পাইনি।" রাহাত বিপদ আঁচ করতে পেরে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে, তারপর জামিলের হাত ধরে হেঁচকা টান মেরে দরজার দিকে ছুটে যায়। কিন্তু খালেকুজ্জামান ভয়ানক শক্তিতে তাকে আটকে ফেলে। রাহাতের হাত মুচড়ে পিছনেনিয়ে যায় সে। রাহাত ব্যাথায় চিৎকার করতে থাকে। জামিল দৌড়ে ঘরের কোনায় রাখা সেলফ্‌ থেকে একটা ফুলদানী এনে সজোরে আঘাত করে লোকটার মাথায়। লোকটা ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে রাহাতের হাত ছেড়ে দেয়। তারপর তারা দুইজন উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে যায় দরজার দিকে.......কিন্তু তারআগেই একটা কালো ধোঁয়া তাদের ঘিরে পাক দিয়ে ঘুরতে থাকে। একটা নারী কন্ঠের চাপা হাসি শুনতে পেল তারা। হঠাৎ দুইজন দুইদিকে ছিটকে পড়ে....... রাহাত দেখলো লোকটা জামিলের বুকের উপর বসে পড়লো। সে নিজেকে টেনে জামিলের কাছে চলে যায়। তারপর হাত দিয়ে লোকটাকে জাপটে ধরে। এক অশরীরী শক্তি তাকে আবারো ছিটকে দূরে নিয়ে ফেললো। লোকটা ভয়ানক হাসি দিয়ে বলল..."জামিল! তুমি জান আমি কতবছর ডেভিডের মত একজনকে খুঁজছি! তুমি আমাকে মুক্তকরলে চীরজীবনের জন্য। আমিতোমার কাছে ঋনী।"লোকটা ততক্ষনে অস্বাভাবিক সুরে মন্ত্র জপতে জপতে একটা ধারালো ছোরা উপরে তুলে খুব জোরে বসিয়ে দিল জামিলের গলায়। রাহাত এই দৃশ্য দেখে ভয়ানক জোরে চিৎকার করে উঠলো। জ্ঞান হারানোর আগ মুহূর্তে রাহাত দেখলো লোকটা মৃত জামিলের গলার দিকে মুখ নামিয়ে নিচ্ছে।
জ্ঞান ফিরে আসার পর রাহাত নিজেকে তার অতি পরিচিত মেসের বিছানায় আবিষ্কার করল। তার মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। কেন করছে সে বুঝতে পারছেনা.....কাল রাতেসে কোথায় ছিলো........ইউনিভার্সিটি থেকে সে কখন মেসে ফিরেছে তাও মনে করতে পারলোনা। পা টলতে টলতে হেলে দুলে সে বাথরুমে গেল। মুখের কোথাওকোথাও হেঁচড়া খাওয়ার মতদাগ দেখে সে অবাক হলো। তারপর ঘর থেকে বের হয়ে সেমেসের সামনের চা দোকানে গেল। সেখানে এক লোক জোরে জোরে আরেক লোককে খবর পড়ে শুনাচ্ছে........."বুঝলেন ভাই.....দেখেন দেশের আইন শৃঙ্খলা কোথায় গেছে। কালরাত তিনটার দিকে পুলিশ ধানমন্ডির এক রাস্তায় জবাই করা এক যুবকের লাশ পাইছে। কে বা কারা তারে জবাই করছে পুলিশ কিছুই কইতে পারেনা। দেখছেন কী অবস্থা!"
হরর স্পেশালঃ কালো জাদু
‘সব কাজ সবার দ্বারা সম্ভবনা।’, তীব্র আপত্তির সুরে বললেন আহসান সাহেব। আহসান সাহেব তপুর বড় চাচা। রাজশাহী শহরের একজনশিক্ষিত সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। রাজশাহী কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি পড়াশুনা করেছেন কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে রীতিমত গবেষণা করেছেন আর সে বিষয়টা হল ব্লাক ম্যাজিক বা কালো যাদু। ব্লাক ম্যাজিকের উপর তিনি প্রচুর পড়াশুনা করেছেন, রাতের পর রাত কাটিয়েছেন শ্মশানঘাট আর কবরস্থানে। এমনকি হাতে কলমে ব্লাক ম্যাজিক শেখার জন্য তিনি বেশ কিছুদিন কাটিয়ে এসেছেন আফ্রিকায়, শিখেছেনসেখানকার ভয়ংকর সব কালো বিদ্যা, যার আফ্রিকান স্থানীয় নাম হল ভূডু। তপু আহসান সাহেবের ছোট ভাইয়ের ছেলে। রাজশাহী কলেজের ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রচণ্ড ভালবাসেন তিনি তপুকে। তপুর প্রত্যেকটা আব্দার তিনি পূরণ করেন, কোন কিছুতেই না করেন না। কিন্তু যখন তপু বলল, সে ব্লাক ম্যাজিক শিখতে চায়, তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, তপুর পক্ষে এটা সম্ভব নয়। ‘কেন সম্ভব না, তুমি পারলে আমি কেন পারব না?’, বলল তপু। ‘দেখ তপু, ব্লাক ম্যাজিক ছেলেখেলা না, পদে পদে এখানে বিপদের আশঙ্কা থাকে।’ ‘থাকুক, তবুও আমি শিখব।’ একগুঁয়ের মত জবাব দিল তপু। ‘আমি তোকে শিখাবো না’ বড় চাচাও কম যাননা। ‘চাচা প্লিজ, আমি ঠিক পারব। দেখো কোন বিপদ হবে না।’ ‘তপু, তোকে আমি খুব ভালোভাবে চিনি, তোর দ্বারা এসব সম্ভব না। প্রচণ্ড সাহস লাগে এতে। সাহস না থাকলে ব্লাক ম্যাজিকের প্রথম স্তরটাই পার হওয়া যায় না।’ ‘কিন্তু আমি পারব। সাহস আমিও কম রাখিনা।’ তীব্র জেদের সাথে উত্তর দিল তপু। ‘হ্যা, জানি তোর সাহস কতদূর। কদিন আগেও তো নিজের ছায়া দেখে ভয় পাতিস।’ ‘সে তো বহুদিন আগের কথা, তখন তো আমি এক্কেবারে ছোট ছিলাম। ওসব কথা বাদ দাওতো,তুমি শিখাবে কিনা বলো।’ ‘ না’ এক কথায় উত্তর দেন আহসান সাহেব। ‘চাচা প্লিজ, খালি একটা সুযোগ দাও। দেখো, আমি ঠিক পারব। যদি না পারি, তাহলে আর কখনও তোমাকে জ্বালাবো না। শুধু একটা সুযোগ দাও।’অনুনয় ঝরে পরল তপুর কন্ঠ থেকে। ‘ কিন্তু .......’ ‘প্লিজ চাচা, প্লিজ’ কিছুক্ষণ চুপ করে কি যেন ভাবলেন আহসান সাহেব। ‘ঠিক আছে, কিন্তু মনে রাখিস একটাই মাত্র সুযোগ পাবি তুই। একটা ছোট পরীক্ষা হবে, যদি উত্তীর্ণ না হতে পারিস তাহলে আর কখনও ব্লাক ম্যাজিকের নাম মুখেও আনতেপারবিনা, ঠিক আছে?’ বললেন আহসান সাহেব। ‘রাজি,’ আনন্দে সব কটা দাঁতবের করে হাসল তপু। ‘আজ পঁচিশ তারিখ। পরশুদিন অর্থাৎ সাতাশ তারিখ অমাবস্যার রাত। পরশুদিন ঠিক রাত বারটার সময় একটা মাটির হাড়ি, এক সের আতপ চাল আর বিশটা দাঁতন নিয়ে কাদেরগঞ্জ কবরস্থানের ভিতরে ঢুকে যাবি। সোজা কিছুক্ষণ চলার পর অনেক পুরনো একটা বটগাছ দেখতে পাবি। বটগাছটার ডান পাশ দিয়ে একটা ছোট রাস্তা চলে গেছে। সেই রাস্তা দিয়ে একেবারে সোজা চলে যাবি। সেই রাস্তার একেবারে শেষ মাথায় দেখবি অনেক পুরনো একটা ভাঙ্গা কবর আছে। কবরটার পাশে একখণ্ড ফাঁকামাঠ আছে। ঐ মাঠের মাঝখানে ছোট একটা চুলা খুঁড়বি, তারপর দাঁতন দিয়ে চুলাটায়আগুন ধরিয়ে হাঁড়িতে চাল আর পানি দিয়ে ভাত চড়িয়ে দিবি। চাল ফুটে ভাত না হওয়া পর্যন্ত একটা করে দাঁতন দিয়ে চুলায় জ্বাল দিতে থাকবি। ভাত হয়ে গেলে হাঁড়িশুদ্ধ ভাত নিয়ে সোজাআমার কাছে চলে আসবি। যদি এই কাজটা করতে পারিস তাহলে আমি আর কোন বাঁধা দেবনা, পরশু থেকেই তোর ব্লাক ম্যাজিকের দীক্ষা শুরু হবে।’ বললেন আহসান সাহেব। ‘ব্যাস এইটুকুই?’, একটু অবাকই হল তপু, ‘আমি তো ভেবেছিলাম খুব কঠিন কোন পরীক্ষা হবে। ঠিক আছে চাচা, ভেবে নাও আমি পরীক্ষায় পাশ করে গেছি।’ ‘একটা ব্যাপারে তোকে সাবধান করে দেই তপু, ভাত রান্না করার সময় হয়তো আশেপাশে অনেক রকম শব্দ শুনতে পাবি, হয়তো শুনবি কেউ তোর নাম ধরে ডাকছে কিংবা কেউ হয়তো সাহায্যেরজন্য চিৎকার করছে, খবরদার সেই ডাকে সাড়া দিবিনা, খবরদার। আসলে আমি নিজেও জানিনা ওখানে কি ঘটবে, শুধু বলে রাখছি, সবসময় সাবধান থাকবি’ সাবধান করলেন আহসান সাহেব। চাচার দিকে তাকিয়ে থাকল তপু। ঠিক বুঝতে পারল না, চাচা তাকে ভয় দেখাচ্ছে না সত্যিই সাবধান করছে তবে যাই হোক না কেন সে ভয় পাবেনা, এই পরীক্ষায় তাকে পাশ করতেই হবে। সাতাশ তারিখ রাত পৌনে এগারটা বাজতে না বাজতেই তপু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে কাদেরগঞ্জ কবরস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেল। তপুদের বাসা থেকে কাদেরগঞ্জ কবরস্থানে রিকশায় যেতে সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা। ঠিক পৌনে বারোটায় তপু কবরস্থানের গেটে পৌঁছে গেল। এতক্ষণ প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস থাকলেও, কবরস্থানের ভয়াবহ নিস্তব্ধতা তপুর আত্মবিশ্বাসকে অনেকটা দমিয়ে দিল। দুরুদুরু বুকেকবরস্থানের গেটে আস্তে ধাক্কা দিল তপু। প্রায় নিঃশব্দেই খুলে গেল গেটটা। কোনদিকে না তাকিয়েসোজা সামনের দিকে হাটা দিল তপু।
চাচার নির্দেশমতো কিছুক্ষণ চলার পরে অবশেষে ভাঙা কবরটার পাশের ফাঁকা মাঠটাখুঁজে পেল। মাঠটার মাঝখানে ছোট্ট একটা চুলা খুঁড়ল। এরপর চারটা দাঁতন একসঙ্গে ধরিয়ে চুলায় আগুনজ্বালাল। হাঁড়িতে চাল আর পানি দিয়ে চুলার উপর চড়িয়ে দিল। এরপর একটা একটা করে চুলায় দাঁতন দিতে থাকল তপু। সময় যেন খুব ধীরে কাটতে লাগল। তেরটা দাঁতন শেষ, ভাত ফুটতে আর খুব বেশি দেরি নাই। কোথায় যেন একটা কুকুর ডেকে উঠল। অকারণেই শরীরটা একটু ছমছম করে উঠল তপুর। হঠাৎ খেয়াল করল, ওর থেকে বড়জোর সাত-আট হাত দূরে একজন মহিলা বসে একটা চুলা খুঁড়ছে। কোলে একটা বাচচা। ঘোমটা দিয়ে ঢেকে রাখার কারণে মহিলার চেহারা দেখতে পারলনা তপু।অবাক হয়ে তপু দেখল, ওই মহিলাটাও ঠিক তারই মত করে দাঁতন দিয়ে চুলা জ্বালিয়েভাত রাঁধতে লাগল। আশ্চর্য, পাশে যে একজন লোকবসে আছে তা যেন মহিলাটা দেখেইনি। আপন মনে একটা একটা দাঁতন দিয়ে চুলায় জ্বাল দিতে থাকল। তপু ঠিক বুঝতে পারেনা, ওই মহিলাও কি তপুর মত কালো যাদু শিখতে চায়? কেন? নিজের কাজ ফেলে সম্মোহনী দৃষ্টিতে মহিলার কাজ দেখতে থাকে তপু। দেখতে দেখতে মহিলার দাঁতনশেষ হয়ে আসল। চুলার চারদিকে হাত বুলাল কিন্তুজ্বালানোর মত আর কিছু না পেয়ে শেষে নিজের কোল থেকে বাচচাটাকে তুলে নিয়ে চুলার ভিতরে ছুড়ে মারল। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা তপু। আর একটু হলেই চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিল এই নৃশংস দৃশ্য দেখে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে নিল। ওদিকে মহিলার চুলার আগুন আবার প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আবার মহিলাটা চুলার চারপাশে জ্বালানীর জন্য হাত বুলাল, কিন্তু কিছুই পেল না। হঠাৎ মহিলাটা খ্যাঁনখ্যাঁনে গলায় বলে উঠল, “ দাঁতন পুড়ে শেষ হল, ভাত ফুটল না।নিজের বাচচাটাকে পুড়িয়ে ফেললাম, তাও ভাত হলনা। এইবার ওই মিনসেটাকে পুড়িয়ে ভাত ফোটাবো,” বলে একটানে নিজের ঘোমটাটা খুলে ফেলে তপুর দিকে ঘুরে তাকাল। মহিলাটা তপুর দিকে তাকাতেই ভয়ের একটা শীতল শিহরন বয়ে গেল তপুর শরীর বেয়ে। কোথায় মহিলা, একটা পিশাচীনি ভয়ংকর চোখে তাকিয়ে আছে তপুর দিকে। মুখ থেকে মাংস পচে গলে পড়ছে, চোখের জায়গায় দুটো শুন্য কোটর ভয়ংকর ভাবে তাকিয়ে আছে তপুর দিকে। আবার খ্যাঁনখ্যাঁনে কন্ঠে বলে উঠল পিশাচীটা, “আয়, আমার কাছে আয়। আয় মিনসে, আজ তোকে দিয়েই আমারসাধনা শেষ করব।” বলে শাড়ির ভিতর থেকে একটা লোমশ কুৎসিত হাত বের করে তপুর দিকে বাড়িয়ে দিল পিশাচীটা। পরদিন। কাদেরগঞ্জ কবরস্থানের গেটের ঠিক সামনে এসে একটা গাড়ি থামল। গাড়ির দরজা খুলে আহসান সাহেব বের হয়ে আসলেন। কবরস্থানের গেট খুলে সোজা পথ ধরে হেঁটে গেলেন। বটগাছটার সামনে যেতেই দেখতে পেলেন অচেতন তপুকে। একটু হাসলেন তিনি।তপুকে ঘাড়ে করে তুলে নিয়ে গাড়ির পিছনের সিটে শুইয়ে দিলেন তারপর গাড়ি ছুটালেনসোজা বাড়ির দিকে। ‘সব কাজ সবার দ্বারা সম্ভবনা।’, বিড়বিড় করে বলে উঠলেন তিনি। গল্পটি পাঠিয়েছেনঃ tintin_001@gmail.com থেকে ।
ভৌতিক গল্পঃ রুম নাম্বার ২১৩
আবু দারিন
১৩ই জুন, ২০১১, সকাল ১১টা “বার বার বলছি, এই নাম্বারের কোন রুম আমাদেরনেই। আর দিমিত্রি শোভন নামে কোন ভদ্রলোকও আমাদেরএখানে কাজ করেন না। আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন” অসহিষ্ণুতা ফুটে উঠলো মারুফের কন্ঠে। রুমানার কন্ঠে আকুতি, “কিন্তু আমি ফোনে ইন্টারভিউ দিয়েছি। এই যে দেখুন জয়েনিং লেটার। এটা তো আপনাদেরই অফিসের ঠিকানা, তাই না?” কাগজের উপরে মতিঝিলের স্বনামধন্য অফিসের ঠিকানাটি মনোগ্রাম সহকারে লেখা। এটা যে তাদেরই অফিসিয়াল কাজে ব্যবহৃত কাগজ, তা নিয়ে মারুফেরও কোন সন্দেহ নেই।মারুফের কপালে ভাঁজ পড়ে। সে এই অফিসে জয়েন করেছে পাঁচ মাস হলো। প্রতি মাসে কেউ না কেউ তাদের অফিসে জয়েনিং লেটার নিয়ে আসছে। তাদেরকে ২১৩ নং রুমে দিমিত্রি শোভন সাহেবের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। তাদের অফিসের কোন ব্যক্তিই যে কাগজ চুরি করে এই কান্ডটা ঘটাচ্ছে; সেটা পাগলেও বুঝবে। কিন্তু মারুফের মাথায় আসেনা যে এই প্রাক্টিকাল জোকটা করে মানুষকে কষ্ট দেয়ার মানে কি? রুমানার চোখে জল আসি আসি করছে। মায়া কাড়া চেহারার তরুনীর দিকে তাকিয়ে মারুফের একটু মন নরম হলো। “দেখুন, মনে হয় আপনার সাথেকেউ মজা করেছে। এটা আমাদের অফিসেরই কাগজ, মানছি। কিন্তু আমাদের এখনকোন টাইপিস্টের পোস্ট খালি নেই।এবং আমরা পেপারেসার্কুলারও দেইনি। আপনি কোথা থেকে খবর পেলেন?” “আমাকে ফোন করা হয়েছিলো। আমি ডাক বাক্সের নাম্বারেসিভি পাঠাই। এরপর ১ সপ্তাহ আগে ফোনেই আমার ইন্টারভিউ নেয়া হয়। জয়েনিং লেটার ডাকে পেয়ে তারপরে এসেছি”। রুমানা থেমে থেমে বলে। “আমি অত্যন্ত দুঃখিত ম্যাম। কিন্তু আমাদের অফিসে ফোনে ইন্টারভিউ নেবার কোন নিয়ম নেই। আর আমরা লোক লাগলে পেপারে প্রকাশ করি। কারো বাসায় ফোন করে নয়। আর দেখতেই পাচ্ছেন আমাদের অফিস ৬ তলা। এখানে আমরা প্রতি ফ্লোর এ,বি,সি এভাবে মার্ককরি। সুতরাং ২১৩ নং রুম থাকার প্রশ্নই ওঠে না”। কথা শেষ করেই মারুফ তার ফাইল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রুমানার চোখে জল টলমল করছে। এরকম নিষ্ঠুর মজা তার সাথে কে করতে পারে? অবসন্ন ভাবে সে সামনে আগায়। জানেও না কোনদিকে যাচ্ছে। এখন সে কিভাবে বাসায় যাবে? চাকরি হয়েছে শুনে মা আর ছোট বোনটা কি খুশীটাই না হয়েছিলো। বাবামারা যাবার পর থেকে তার মাসেলাইএর কাজ করে বহু কষ্টে দুই বোনকে বড় করেছে। বাংলায় অনার্স করেসে প্রায় ১ বছর ধরে চাকরীরচেষ্টা করছে; হয়নি। অযাচিতভাবে এই খবর আসায় তার মা আনন্দে কাল মিষ্টি কিনে এনেছিলো। এখন সে কোন মুখে বাসায় যাবে? চারপাশেসবাই ব্যস্ত ভাবে ফাইল আর কাগজের স্তুপে মাথা ডুবিয়ে বসে আছে। তার কষ্টে কারো কিচ্ছু যায় আসে না। তৃষ্ণায় তার গলা শুকিয়ে কাঠ। করিডোরের শেষপ্রান্তে একটা ফিল্টার দেখা যাচ্ছে। রুমানা অবসন্ন ভাবে তার দিকে এগিয়ে যায়। পানির গ্লাস ঠোঁটে ছোঁয়ায়সে। শীতল পানি তির তির করেগলা বেয়ে নেমে পুরো শরীরে শীতলতার আবেশ ছড়িয়ে দেয়। ডানে তাকিয়েই রুমানা অবাকহয়ে যায়। পিতলের ঝকঝকে প্লেটে কালো রঙ দিয়ে লেখা,রুম নং ২১৩। পানি নেয়ার সময়ও তো আশে পাশে কোন দরজাছিলো না। নাকি সে খেয়াল করেনি? আনন্দে তার বুক কাঁপতে থাকে। সামনের লোকটি মিথ্যুক ছাড়া কিছু না। কেন মিথ্যে বলবে? নির্ঘাত তার পরিচিত কেউ এই চাকরীর জন্য আবেদন করেছে। আশে পাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না; এমনকি দরজার সামনে কোন পিয়নও নেই। রুমানা একটু অস্বস্তিবোধ করতে থাকে। বড় স্যারের রুমে কি খবর নাপাঠিয়ে ঢোকা ঠিক হবে? দ্বিধা দ্বন্দে শেষ পর্যন্ত রুমানা দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সাবেকী আমলের ভারী কাঠের নকশা করা দরজা। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে কালো রঙ দিয়ে আঁকা খুবই হিজিবিজি ধরনের নকশা। রুমানার প্রাচীন ভাষা নিয়ে প্রচুরআগ্রহ। দরজায় হাত বুলিয়ে তার মনে হতে লাগলো এটা হায়ারোগ্লিফিক লেখা। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে সে নক করে।একবার, দুইবার। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার। ভেতর থেকে ভারী কন্ঠ ভেসে আসে, “কে?” “মে আই কাম ইন স্যার?” বহুবার প্রাকটিস করা লাইনটি চমৎকার আত্মবিশ্বাসের স্বরে বলে রুমানা। ভেতর থেকে নীচু স্বরের হাসি শোনা যায়। “ইয়েস, ইয়েস”। হাসিটার মাঝে কি আছে রুমানা জানে না, তবে তার গা শিউরে ওঠে। হাতল ঘুরিয়ে দরজা সামান্য ফাঁককরে সে। ভিতরে আবছা অন্ধকার। রুমানা থমকে যায়। আলো ছাড়া কি রুমে ঢোকা ঠিক হবে? আবার ভারী স্বরে কেউ বলে, “হু আর ইউ অ্যান্ড হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট?” রুমানা দরজা ধরেই বলে, “স্যার, আমি ফেরদৌসি রুমানা। টাইপিস্ট পদের জন্য আপনি ফোনে ইন্টারভিউনিয়েছিলেন। জয়েনিং লেটার নিয়ে এসেছি”। “হুমম, কাম ইন”। রুমানা কি করবে বুঝতে পারে না। ভারী কন্ঠ যেন তার অস্বস্তি বুঝতে পারলো। “আমার মাইগ্রেনের সমস্যা আছে। অ্যাটাকের সময় আলো সহ্য করতে পারিনা। কিছুক্ষন ধরে আমার মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে”। এই চাকরী তার চাইই চাই। মায়ের চোখে ছানি পড়া শুরু হয়েছে, অপারেশনের টাকাও তাদের নেই। মায়ের কথা মনে হতেই রুমানার সব দ্বিধা দূর হয়ে গেলো। সে ভেতরে ঢুকে পড়লো। ভারী দরজা একা একাই বন্ধ হয়ে গেলো। পুরোপুরি অন্ধকার নয় রুম।এক পাশে ভীষন ম্রিয়মান একটি টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে। আবছা আলোতে রুমানা বুঝলো ঘর কেন এত অন্ধকার। বিশ্রী রকমের কালো রঙ দিয়ে ঘরে রঙ করা। অথবা সেটি অন্য কোন গাঢ় রঙ; এই আলোতে কালো মনে হচ্ছে। টেবিলে স্তুপিকৃত বই; তার ওপর রাশি রাশি ধূলা। দেয়ালের দিকে মুখ করে রাখা চেয়ারের গায়ে এলিয়ে একজন মানুষ বসে আছে। আবছা আলোতেও ল্যাম্পের উপরে মাকড়সার জাল স্পস্ট। এরকম নোংরা পুরানো ঘরে কেউ কাজ করতে পারে? রুমানা নাক কুঁচকায়। ইঁদুর মরেছে নাকি? এরকম বিশ্রী পচা গন্ধ কেন রুমে? হ্যাঁ, ইঁদুরই। কিচ কিচ শব্দ হচ্ছে কোথা থেকে যেন। নাকে ওরনা চাপা দেয় সে। ডান পাশে তাকিয়ে রুমানা ভীষন চমকে ওঠে। তিনটা চোখ তাকে গভীরভাবে নিরীক্ষণ করছে। অনেক কষ্টে চিৎকারটাকে সে চেপে রাখে।একটা মুখোস। তবে পৃথিবীতেযে এরকম ভীতিকর ভয়ংকর মুখোসের কোন নির্মাতা থাকতে পারে, সেটাই তার ধারণাতে ছিলো না। একটা পশুর মুখোস; বাঁকানো শিং, সিংহের কেশরের মত কেশর আছে। আবার মানুষের মত থুতনিতে দাঁড়িও আছে। কপালের তৃতীয় চোখ কি দিয়ে বানানো কে জানে, মনে হচ্ছেধক ধক করে জ্বলছে। রুমানার মনে হতে থাকে মুখোসটা জ্যন্ত। “স্যার?” রুমানা ভীত কন্ঠে বলে। কোন উত্তর নেই।
“স্যার, আমি জয়েনিং লেটারটা কোথায় জমা দেব? আর আমার কাজটা কি হবে স্যার?” অদ্ভুত রকমের নিরবতা। রুমানা দুই পা এগোয়। গন্ধটা আর সহ্য হচ্ছে না। কিচ কিচ শব্দটাও বেড়েই চলেছে। বের হয়ে যাবে নাকি? ছোটবোন টার কথা কানে ভেসে এলো, “বুবু, আমাকে কিন্তু এই ঈদে একটা জামা কিনে দিস। মাত্র দুইটা জামাই রোজ কলেজে পড়ে যাই। সবাই কেমন করে তাকায়”। “স্যার? শুনতে পাচ্ছেন?” নিস্তব্ধতা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। এগিয়ে গিয়ে রুমানা চেয়ার ঘোরায়। কয়েক মূহুর্তের নিরবতা। এরপর ভয়ংকর চিৎকার করে রুমানা পিছিয়ে যায়। কিসে পা পড়ে সে বলতে পারবে না, এক রাশ বই আর আবর্জনার উপরে সে আছড়ে পড়ে। রুমানা চিৎকার করতেই থাকে। সামনের চেয়ারে একটা মেয়েরমৃতদেহ বসে আছে। চোখ দুইটা খোলা। রুমানার দিকেস্থির দৃষ্টিতে যেন তাকিয়ে আছে। মাংস পচে গলে জায়গায় জায়গায় খসে পড়েছে।মাথার লম্বা চুল আর কাপড় ছাড়া বোঝার উপায় নেই যে সেনারী না পুরুষ। পাশের ফাইল রাখার শেলফটা ধরে রুমানা উঠতে যায়, হাতেশক্ত স্যাঁতস্যাঁতে কি যেন লাগে। তাকিয়ে দেখে সে বুক শেলফ ভেবে ধরে আছে একটা কঙ্কালের বাহু। সব দাঁত বের করে কংকাল হাত পাছড়িয়ে পড়ে আছে। রুমানা পিছনে তাকায়। একটা না, অনেক কংকাল। সবাই স্থির ভাবে রুমানার দিকে তাকিয়েআছে। রুমানার মাথা কাজ করে না। চিৎকার করতে করতে কোন রকমে কঙ্কাল গুলিকে লাথি মেরে সরিয়ে দরজার দিকে ছুটে যায়। কিন্তু দরজা কোথায়? চারিদিকে শুধু কালো রঙের দেয়াল। রুমানা চিৎকার করেদেয়াল হাতড়াতে থাকে। এই তো, একটু আগে এখানে একটা দরজা ছিলো। এখন কোথায় গেল? বদ্ধ ঘরে মাংস পচা বিশ্রী গন্ধে রুমানার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় প্রায়। হঠাৎ কিচ কিচ শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। সামনের ভারী কাঠের ডিজাইন করা আয়নার দিকে তাকিয়ে রুমানাদেখে পিছের দেয়ালের মুখোসের মুখে ভয়ংকর হাসি ফুটে উঠছে। জিহবা লকলক করছে, তৃতীয় নয়ন ভীষন ক্ষুধা আর লালসার উল্লাসেউল্লসিত। রুমানা চোখ বন্ধকরে। ১৩ই জুলাই, ২০১১, সকাল ১১টা ডেস্কের সামনে অধীর আগ্রহে মিঃ মারুফের জন্য অপেক্ষা করছে আভা। বহু আকাংখিত চাকরীটি অবশেষে সে পেয়েছে। ২১৩ নং রুমটি এখন খুঁজে পেলেই হয়।
ভাড়া বাড়ি
মিঃ ভূত
হামিদ মিঞা কথা দিয়েছিল বিয়ের পর লাকি বেগমকে নিয়ে এমন একটা বাসায় উঠবে যেখানে অন্য মানুষের সাথেটয়লেট বা রান্নাঘর ভাগাভাগি করতে হয় না। আলফা ফ্যাশন গার্মেন্টস এর ফ্লোর সুপারভাইজার হামিদ প্রেমে পড়েছিল শিক্ষানবীস লাকি বেগমের। গরীবের ঘরে এমন অনিন্দ্য সুন্দরী মেয়ে জন্ম নিতে পারে তা লাকিকে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। লাকির বাবা-মা নেই, চাচার বাসায় থেকে কাজ করে। একদিন ধমক দিয়েছিল হামিদ বেমাক্কা। তার পর এক অপ্রত্যাশিত চোখ ভাসানো ভেউভেউ কান্না। সেদিনই হামিদ সিদ্ধান্ত নেয় এই মেয়েকে জীবনে আর কখনো কষ্ট দেবে না। তারপর মেয়েটিকে বিয়ে করা।গত পরশু লাকির চাচার বাসায় সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জোড় বেঁধে গেল হামিদ-লাকির। লাকির আতিœয়-স্বজনরা তাড়াহুড়ো করছিল, বলছিল শুভ কাজে দেরী করতে নেই। তো সেই হুড়োহুড়ীতে লাকির বিয়েটা অনেকটা অগ্রিমই হয়ে গেল যেন। বিয়ের দিনক্ষণ যখন পাকা তখন হামিদ হণ্যে হয়ে ঘুরছে একটা সুবিধাজনক বাড়ী খুজে পেতে। পরিচিত লোকজনদের অনুরোধ করেছে তেমন সন্ধান পেলে হামিদকেজানাতে। এভাবেই সন্ধান পেয়ে গেল আলেখা লজ নামের বাড়ীটির। গাজীপুরে এমন বাড়ী রয়েছে তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। কোন ব্রিটিশ আমলে বানানো বাড়ী। মূল মালিকের খোঁজ নেই, নানান হাত বদল হয়ে বর্তমান মালিকের হাতে এসেছে। মালিক ঢাকায় থাকে, কেয়ারটেকার আহাম্মদ আলীর হাতে বাড়ীর দেখভালের দায়িত্ব। লাকিকে নিয়ে আজ সকালেই নতুন বাড়ীতে উঠেছে হামিদ।বিয়ে উপলক্ষ্যে তিনদিন ছুটি পেয়েছিল। আজ তার শেষ দিন। হামিদ ব্যাগ, রংচটা সুটকেস আর টিনের ট্রাঙ্কটা রিক্সা থেকে নামিয়ে সেই রিক্সা নিয়েই ছুটল বাজারের দিকে। সাথে লাকি। আনন্দ আর ধরে না। আজপ্রথম বৌয়ের হাতের রান্নাখাবে হামিদ। তাই বেশ ক’টা টাকা বেরিয়ে গেলেও মাঝারীএকটা ইলিশ মাছ কিনে ফেলে সে, সাথে তাজা পুঁই পাতা। চাল, আলু, পেয়াজ আর সরিষার তেলে চলে গেল আরো,বেশ কিছুটাকা। হামিদের পকেটের স্বাস্থ্য তখন বেশ ক্ষীণ।তবু মনে আনন্দের জোয়ার, সুন্দরী নতুন বউ ঘরে, তার জন্য রান্না করবে, তাকে আদর করে ঘুম পাড়াবে! ভরপেট রাতের রান্না খেয়ে শোয়ার আয়োজন করছে হামিদ দম্পতি। কাল সকালে আবার কাজে লেগে পড়তে হবে। ঘুম থেকে উঠতে হবে সুর্য্য উঠার সাথে। তাই হামিদ যখন আধশোয়া হয়ে বিছানায় কম্পমান অপেক্ষায় তখন দেরী না করে আরো কিছু গোপনীয়তার আশায় লাকি উঠে গেল রাস্তার পাশের জানালাটি সাঁটিয়ে দিতে। রাস্তাটি এরই মধ্যে বেশ নির্জন হয়ে গেছে। এমনিতে এই বাড়ীর ত্রিসীমানায় অন্য কোন বাড়ী নেই তার উপরঘর গোছাতে গোছাতে রাত প্রায় সাড়ে দশটা। লাকি আলগোছে দৃষ্টিপাত করে রাস্তার পরে। হঠাৎ বুকের মধ্যে ধক্ব করে ওঠে তার। কেপেঁ ওঠে সারা শরীর। একটা খনখনে বুড়ি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। পরনে সাদা শাড়ী,বয়সের ভারে কুঁজো হয়ে আছে সামনের দিকে। চোখের দৃষ্টিতে শত জন্মের বিতৃষ্ণা আর ঘৃণা। চোখ নয়,যেন দুটো চকচকে রৌপ মুদ্রা বসানো অক্ষি কোটরে। গা শিরশির করে উঠে লাকির। মনের কোণায় বাসা বাধে গুমোট একটা ভয়ের অনুভূতি। তাড়াতাড়ি জানালা বন্ধ করে বিছানায় উঠে আসে সে। নিজ সংসারে বাতি নেভানো প্রথম সোহাগের সময় কেমন একটা নিস্পৃহ শীতলতা গ্রাস করেলাকিকে। সে রাতে ভাল ঘুম হলো না লাকির। অবচেতন মনের কোনে ভেসে ভেসে আসে বুড়ী ঘৃণা মাখানো তীব্র দৃষ্টি। ছেঁড়া ছেঁড়া স্বপ্নে দেখলো বুড়ী তাকে আঙ্গুল তুলে শাসাচ্ছে আর কুত্তি, মাগী ইত্যাদি সহ নানান অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করছে, শ্লেষের সাথে অভিসম্পাত করছে স্বামীর গোপন সোহাগকে। অস্বস্তি নিয়ে ঘুম ভাঙ্গে লাকির। ভোরে ভোরেই হামিদ মিঞা কাজে গিয়েছে। পান্তা ভাত, কাঁচা পিঁয়াজ আর বাসী তরকারীর ঝোলই ছিল নাস্তা।যদিও ইচ্ছে ছিল পরোটা-আলুভাজি করার কিন্তু গত রাতের অস্বস্তি হেতু অনিদ্রা আর প্রথম সোহাগী অভিজ্ঞতার ক্লান্তি লাকিকে এগুতে দিল না। বিয়েতে উপহার পাওয়া একটা নতুন সুতির শাড়ী নিয়ে গোসলখানায় ঢোকে লাকি। গোসলখানাটি বাড়ীর বাহিরের দিকে। শ্যাওলা পড়া পুরানো পাঁচিল, টিনের দুমড়ানো দরজা। সকালের আলোফুটে উঠছে তখন। ধীরে ধীরে নিরাভরণ হয় লাকি, শরীরের আনাচে কানাচে বইয়ে দেয় বরফ শীতল পানি। সদ্য মোড়ক খোলা সুগন্ধি সাবানের গন্ধে ম ম করছে পুরো গোসলখানা। ঠিক এমন সময় একটা অদ্ভুত অনুভূতি গ্রাস করে লাকিকে। মনে হচ্ছে কোন এক গোপন গবাক্ষপথে লাকির সুঢৌল গোলাপী দেহলতা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেকেউ। লজ্জা, ভয়, অস্বস্তি আর রাগে সারাদেহে চুমকুড়িখেয়ে ওঠে সহস্্র রোমকুপগুলো। নিশ্চিত হওয়ার জন্য হঠাৎ টিনের দরজাটার হুড়কো খুলে বাহিরে চোখ বোলালো লাকি। দেখে নাহ্ কেউই নেই। আবেশ মুছে দ্রুত গোসল সেরে ঘরে ঢুকে পড়ে। চুল এলিয়ে দিয়ে চালের কাঁকর বাছতে বসে লাকি। বিগত জীবনের কত স্মৃতি মনে উঁকি ঝুঁকি দেয়! আসলে মানুষের জীবনটা কত বিচিত্র। সে কোথায় ছিল আর এখন কোথায় এলো । ভাবতে ভাবতে একটু তন্দ্রা মত আসে, আটকে থাকা বাঁধ ভেঙ্গে কোথা থেকে যেন আছড়ে পড়ে এক রাশ ঘুম তার চোখের জমীনে। একটু শীত শীতও লেগে উঠে। দু’চার বারঝিমিয়ে চালের থালার উপর পড়তে গিয়ে লাকি চৌকিতে গিয়ে উঠে। ঘুমিয়ে নিতে হবে খানিকটা ক্ষণ। বেহেড মাতালের মত অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঘুমিয়ে পড়ে সে। কত সময় পেরিয়ে গেল, লাকির ঘুম অশান্তিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। মনে হয় কোন অন্ধ জগতে আটকে গেছে তার আতœা। শরীরে আর ফেরত আসতে পারছে না। নিঃশ্বাসেবদ্ধ বদ্ধ ভাব আর অনিয়মিত হৃদস্পন্দন। গলাটাও শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। হঠাৎ বোধ হলো তার নাকে, চোখে, মুখে অস্বস্তিকর সুড়সুড়ি লাগছে। মুখটাকে এদিক ওদিকঘুরিয়ে অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাবার চেষ্টা করে সে। কিন্তু ক্রমশ বাড়তে থাকে তা। ঝট করে চোখ মেলে লাকি। ঠিক একফুট উপরে সমান্তরাল ভাবে শুণ্যে ভেসে আছে একটা বুড়ি। ঘোলা চোখে তীব্রভাবে লাকির দিকে তাকিয়ে আছে সে। অন্তরাত্তা ছিটকে বেরিয়ে আসতে চায় লাকির, মুখ দিয়ে গোঙ্গানীর শব্দ বের হয় তবুও নড়তে পারে না একচুলও। হঠাৎ একটা বুকভাঙ্গা আতœচিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠে লাকি। সাথে সাথে ঘোর ভাঙ্গে যেন। দেখে কেউই নেই ঘরে। সারা শরীর ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে আছে। ছাতিফাটা তৃষ্ণায় শুষ্ক হয়ে আছে কন্ঠনালী। টলতে টলতে উঠে বসে লাকি।
হাফ টাইম শেষে দুপুরে খাবার খেতে বাসায় আসছিল হামিদ মিঞা। দূর থেকে টিনের গেটটা হাট করে খোলা দেখে বিরক্ত বোধ করে সে। যাওয়ার সময় লাকিকে বারবারবলে গেছে নতুন এলাকা তাই সামনের গেটটা বন্ধ রাখতে।এই সময় হঠাৎ দেখে ভেতর থেকে শশব্যস্ত হয়ে বের হয়ে আসে এক বুড়ি। মুখে কাপড় চাঁপা দিয়ে ব্যস্ত পায়ে ঢুকে গেল পাশের গলিতে। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠানিয়ে দ্রুত পায়ে বাড়ি ঢুকলো হামিদ মিঞা। উ™£ান্তের মত চৌকিতে বসেআছে লাকি। মানুষের সাড়া পেয়ে ম্যাও করে হাড়ি পাতিল উল্টে পালিয়ে গেল একটা কালো বিড়াল। কাছে গিয়ে জোরে কয়েক বার ঝাকি দেয়ার পর ধীরে ধীরে মুখ তুলে চাইলো লাকি। স্বামীকে দেখে ঝাপিয়ে কান্না এলো তার দুচোখে। নাহ্, হামিদ মিঞা বিশ্বাস করলো না লাকির কথা। ঘুরে ফিরে শ্বান্তনা দিতে গিয়েবলল দুঃস্বপ্ন দেখেছে সে।দিনে দুপুরে তার রুদ্ধঘরেকিভাবে ঢুকবে বুড়ি! আর বাতাসেই বা ভাসবে কিভাবে?লাকি যতই বলুক হামিদ শ্বান্তনা দেয় তাকে। বলে নতুন বাসা গোছানোর ক্লান্তিতে গভীর ঘুম হয়েছিল তার আর ঘুমের ঘোরে দেখেছিল দুঃস্বপ্ন। লাকির শারীরিক আর মানসিক অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেয় যে আজ আর কাজে যাবে না। লোডশেডিং এ হারিকেনের টিমটিমে আলোতে রাতের খাবার খেতে বসে হামিদ আর লাকি। বিকেল থেকে লাকি ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে উঠে। আর কোন অসুবিধা হয়নি তার পর। বরং সন্ধ্যায় চা বানিয়ে আগুন গরম পুরি সিঙ্গারা দিয়ে খেয়েছিল দুই টোনাটুনি। আর গুটগুট করে গল্প করেছিল ভবিষ্যতের। খেতে বসে হামিদ ভাবে এক ফালি লেবু হলে ভাল জমতো খাবারটা। লাকি কে বলতেই রহস্যময় হাসি হেসে উঠে গেল সে। একমনে খাচ্ছিল হামিদ মিঞা। হঠাৎ সামনের দেয়ালেঝিকমিক করে উঠলো ধাতব প্রতিফলন। তড়িৎ গতিতে পেছনে ফিরে পাথরের মত জমে গেল হামিদ। লাকি এক হাতে ছোরা উচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার পেছনে। হামিদের মাথারতালুর দিকে তাক করা। চোখে কোন কালো অংশ নেই, পুরোটাইসাদা। বন বন করে ঘুরছে চারপাশে। আরেক হাতে অর্ধ কাটা কাগজী লেবু থেকে ঝর ঝর করে গড়িয়ে পড়ছে তাজা রক্ত। লাকির হাতের তালু বরাবর ফালি ফালি গভীর ক্ষত। ‘লাকি’! বলে তীব্র কন্ঠে আর্তনাদ করে উঠে হামিদ। কা কা করে কর্কশ কন্ঠে ডেকে উঠে পাশের আমগাছে আশ্রয় নেয়া কয়েক শত কাক। নরক গুলজার শুরু হয়ে গেছে যেন চারপাশে। এবার বিস্ফোরিত চোখে হামিদ দেখে লাকির লম্বা চুলগুলো উপরে উঠে যাচ্ছে।সাথে সাথে লাকিও। চুল ধরে কেউ তাকে ঝুলিয়ে রেখেছে ছাদের সাথে। হঠাৎ হঠাৎ মুখের চামড়া কুঁচকে গিয়ে রূপ নিতে চায় কোন বিভৎস বুড়ির। যেন ভেতর থেকে জোর করে ফেঁড়ে ফুঁড়ে বের হতে চায় অন্য কোন স্বত্তা। এমনি সময় কোথা থেকে এক বুকসাহস এসে ভর করলো হামিদ মিঞার কলিজায়। লাকির প্রতি স্নেহে আচ্ছন্ন হয়েউঠল মন। এক লাফে চৌকির উপরদাঁড়িয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে লাকির হাটু ধরে নীচের দিকে টান দিল সে। নারিকেল গাছের মৃত শাখার মত ঝুপ করে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো লাকি। জ্ঞানহীন। ফস করে শাড়ির আঁচল ছিড়ে লাকির হাতের ক্ষত বাঁধলো হামিদ। তারপর তাকে পাঁজাকোলে তুলে ছুট দিল বাহিরে। আপাততঃ কোন হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করতে হবে তাকে। মালপত্র যা আছে পড়ে থাক, এই সর্বনাশা অভিশপ্ত বাড়িতে আর এক মুহূর্তও নয়। মানুষের জীবন বাঁচলে তবেই তো মাল পত্র! উদ্ধশ্বাসে হামিদ ছুটতে থাকে সদর রাস্তা ধরে। অন্ধকার ফুঁড়ে আঁধার গলি থেকে বের হয়ে এলো এক বুড়ি।নাক উচিয়ে এদিক ওদিক কি যেন শুকলো বাতাসে। রাস্তাথেকে কুড়িয়ে নিল রক্তে ভেজা এক টুকরো শাড়রি আঁচল। কুচকুচে কালো আর সরু জিভ বের করে একটু চাটলো সেটা। মুখের মধ্যে টাস টাস করে শব্দ করলো দুবার। কোমরে গুঁজে নিল টুকরোটি। তারপর চাপা কন্ঠে খল খল করে হাসতে হাসতে স্বাগোক্তি করলো ‘যাবি কই’! আবারো অন্ধ গলিতে ঢুকে গেলো বুড়িটা। (সংগৃহীত)
শিয়াল দেবতার প্রতিহিংসা [শেষ পর্ব]
মূল : রবার্ট ব্লচ রূপান্তর : অনীশ দাস অপু
আবার ফিরে আসে সেই ভয় এবং দুশ্চিন্তা। স্যার রোনাল্ড একবার তাকেমিসরীয়দের প্রেততত্ত্বেরওপর কিছু কথা বলেছিলেন, প্রধান ধর্মযাজকদের অনেক আশ্চর্য গল্প শুনেছে সে তার বাবার কাছে। এটা তাদের সেই জন্মস্থান। পিটারের দু একজন বন্ধুর সবাই অভিশাপের ব্যাপারটি বিশ্বাস করতো। এদের প্রত্যেকের মৃত্যু ঘটেছে অদ্ভুতভাবে। এ ছাড়াও রয়েছে তুতানখামেন এবং পট মন্দিরের রোমহর্ষক ঘটনা। গভীর রাতে, তারা জ্বলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে এ সব গল্প মনে করতো। সামনে তার জন্য না জানি কী বিপদ ওত পেতে আছে ভেবে শিউরে উঠতো। তারপর, মানচিত্রে চিহ্নিত নির্দিষ্ট জায়গায় স্যার রোনাল্ড তাঁবু বসালে নতুনআরেক অশুভ সঙ্কেতের সূচনাহয়। আস্তানা গাড়ার প্রথম রাতেই স্যার রোনাল্ডকে তাঁবুর পেছনের দিকের পাহাড়ে একা যেতে দেখে কৌতূহলী হয়ে ওঠে পিটার। বাবার হাতে রশি বাঁধা একটি সাদা ছাগল এবং মস্ত ধারাল ছুরি দেখে সন্দেহ আরও বেড়ে যায় তার। পিছু নেয় সে। তারপর ঘটে সেই ঘটনা। ছাগলটি জবাই করেন স্যার রোনাল্ড। অবোধ পশুটার ফিনকি ছোটা রক্ত মুহূর্তে শুষে নেয় শুকনো বালু। বাবার চোখে তখন কসাইদের উৎকট উল্লাস। একটি ঢিবির আড়ালে লুকিয়ে থেকে পিটার শোনে বাবা দুর্বোধ্য উচ্চারণে মিসরীয় স্তোত্র আউড়ে চলেছেন। পিটার ভয় পাচ্ছিলো ভেবে বাবা তার উপস্থিতির কথা জেনে গেলে হয়তো আর তাকে সঙ্গে নিতে রাজি হবেন না। তবে বাবার আচরণে কেমন ক্ষ্যাপামো একটা ভাব তাকে অস্বস্তিতেফেলে দেয়। কিন্তু বাবার কাছে বলি বলি করেও সে জিজ্ঞেস করতেপারছিলো না। পার্চমেন্টের সেই রহস্য নয়, গোপন ‘অভিশাপ’ নিয়ে। মাঝরাতের ওই ঘটনার পর দিনস্যার রোনাল্ড চার্ট দেখেবলেন এখন খনন শুরু করা চলে। ম্যাপে চোখ রেখে, বালিতে প্রতিটি পা মেপে তিনি তাঁর লোকদের কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন। সন্ধ্যার দিকে দশ ফুট ব্যাসার্ধের বিরাট একটি গর্ত খোঁড়ার কাজ শেষ হয়েযায়, যেন হাঁ করে আছে কোনওদানব মুখ। খনন পর্ব শেষ হতেই স্থানীয় শ্রমিকরা উল্লসিত চিৎকার দিয়ে জানায় গর্তের নিচে একটি দরজা দেখতে পেয়েছে তারা। দুই টেনশনের চোটে পিটারের অবস্থা কাহিল। বাবা ওকে নিচে নামতে বলেছেন। সামনেভীষণ বিপদ, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে দিচ্ছে পিটারকে। কিন্তু বাবাকে যেতে নিষেধকরার সাহস তার নেই। যাবো না কথাটি উচ্চারণ করতে পারেনি সে। কারণ তার ভয় এতে প্রচণ্ড রেগে গিয়ে স্যার রোনাল্ড কোনও অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। বিশ্রী, পেট গুলিয়ে ওঠা গর্তটার মধ্যে প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাবার সঙ্গে নেমে পড়ে পিটার। পাণ্ডুলিপিতে বর্ণিত দরজাই ছিলো ওটা। দরজার গায়ে, ঠিক মাঝখানে মিসরীয়দের সাত প্রধান দেবতার মাথার ছবি-অসিরিস,ইসিস, রা, বাস্ত, থথ, সেট এবং অ্যানুবিস। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার সাতটা মাথার অধিকারী সাতজন নয়, একজন। আর ওটা কোনোও মানুষের শরীরও ছিলোনা, ভয়াবহ এই আকৃতির সঙ্গেতুলনা করার মতো উপমা বোধহয় মিসরীয় কোনও বইতেও নেই। অন্তত ওই মুহূর্তে পিটারের কিছু মনে পড়েনি। সাত মাথার ভয়াল ভয়ঙ্কর জিনিসটা দেখামাত্র ভয়ে প্রায় জমে যাচ্ছিলো পিটার, আতঙ্কের অক্টোপাস যেন চারপাশ থেকে ওকে তড়িৎগতিতে চেপে ধরেছিলো। সাত মাথার নিচের অংশটার যেন দ্রুত রূপান্তর ঘটছিলো; মনে হচ্ছিলো গলে যাচ্ছে। অবিশ্বাস্য এবং অদ্ভুত সবআকার ধারণ করছিলো ওটা। কখনও ওটাকে মনে হয়েছে সর্পিণী মায়াবিনী মেডুসা,কখনও বিশার, বিকট ফুলের চেহারা ধারণ করেছে, ছড়িয়ে দিয়েছে বিরাট পাতা, যেন রক্ত-তৃষ্ণায় বাতাসে দুলছিলো। তারপরই চোখের পলকে ওটা পরিণত হয়েছে একদলা চকচকে রুপালি খুলিতে। আবার পরক্ষণে রুপালি খুলির রূপান্তর ঘটেছে নিখিল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে, অজস্র তারকা আর গ্রহসহ। এ যেন এক দুঃস্বপ্ন। কোনওশিল্পীর পক্ষে এমন বীভৎস ছবি আঁকা সম্ভব নয়। একমাত্র শয়তানের পক্ষেই একাজ সম্ভব। সাত মাথার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেপ্রায় সম্মোহিত হয়ে পড়েছিলো পিটার। বাস্তবে ফিরে আসে বাবার ডাক শুনে।স্যার রোলান্ড সকালবেলাতেও কাঠখোট্টা ব্যবহার করলেও এখন তাঁর চেহারা আমূল বদলে গেছে। রীতিমত উৎসুক গলায় তিনি ঘোষণা করেন। ‘এটাই সেই দরজা। এই দরজার কথাই পার্চমেন্টে লেখা আছে। এখন বুঝতে পারছি প্রিন তাঁর শয়তানের পূজা অধ্যায়ে কিসের কথা বলতে চেয়েছেন। ওই অংশে তিনি দরজায় প্রতীকের কথা উল্লেখ করেছেন। যাকগে, কাজ শেষ হবার পর আমরা এটার কয়েকটা ছবি তুলব। আশা করি ছবি নিয়ে নিরাপদেই ফিরতে পারব। স্থানীয়রা কোনও ঝামেলা করবে না।’ স্যার রোনাল্ডের কণ্ঠে খুব বেশি উৎসাহের সুর। ব্যাপারটা ভাল লাগলো না পিটারের, বরং ভয় হলো। হঠাৎমনে হলো সে তার বাবাকে খুব কম চেনে। বাপের সাম্প্রতিক গোপন কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও সে কত কম জানে। গতরাতেও সে তার বাবাকে দেখেছে একটা সমাধি থেকে বেরিয়ে আসতে, হাতে মরা বাদুড়। বাবাকে পাগল সন্ন্যাসীদের মত মনে হচ্ছিলো। বাবা কি সত্যি এসব ছাইপাঁশ বিশ্বাস করেন! ‘এখন!’ বিজয় উল্লাস বৃদ্ধের কণ্ঠে। ‘ছুরিটা নিয়েছি। পিছনে যাও।’ ভীত, বিস্মিত চোখে পিটার দেখলো বাবা ছুরির ডগাটা সপ্তম মাথা অর্থাৎ অ্যানুবিসের নিচে গাঁথলেন। খরখর শব্দ হলো, তারপর কুকুরমুখো মাথাটা ধীরে ঘুর যেতে লাগল যেন গোপন কোনও হাতলের সাহায্যে। ঝনঝন শব্দে খুলে গেলো দরজা, প্রতিধ্বনিটা অনেকক্ষণ রইলো। একটা তীব্র, ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে বাড়ি খেলো। গন্ধটা নাক সয়ে এলে স্যার রোনাল্ড দ্রুত পা রাখলেন ভেতরে। সঙ্গে পিটার। পাণ্ডুলিপির নির্দেশ অনুযায়ী গুনে গুনে তেত্রিশ পা এগোলেন। তারপরমুখোমুখি হলেন অ্যানুবিসের। মশালের আলোয়, পিটারের মনে হলো...মূর্তিটার গায়ের রং পাল্টে যাচ্ছে। ঠোঁটের হাসিটা হঠাৎই যেন অদৃশ্য হয়ে গেলো, কঠিন হয়ে উঠলো চেহারা, দুই ঠোঁট ফুটলো প্রবল নিষ্ঠুর ভাব। হাঁ করে অ্যানুবিসের এই পরিবর্তন দেখছে পিটার, চমক ভাঙলো স্যার রোনাল্ডের ডাকে।
‘শোন, খোকা, সেদিন রাতে পার্চমেন্টের সমস্ত কথা তোকে বলিনি। তোর নিশ্চয়ই মনে আছে একটা অংশ আমি মনে মনে পড়েছিলাম। হ্যাঁ, ওই অংশটা। তোকে জানতে না দেয়ার পেছনে অবশ্যই কারণ ছিলো। কারণ পুরোটা জানলে তুই হয়তো ভুল বুঝে এখানে আসতে চাইতি না। তাই সব কথা বলার ঝুঁকিটা ও সময় নিতে চাইনি। ‘তুই জানিস না, পিটার, এই মুহূর্তটি আমার কাছে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। বহু বছর আমি এমন সব গোপন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছি যা অন্যের কাছে স্রেফ আজগুবি কুসংস্কারাচ্ছন্নব্যাপার ছাড়া অন্য কিছু নয়। কিন্তু আমি এসব বিশ্বাস করতাম। প্রতিটি বিস্মৃত কর্মের পেছনে একটি নগ্ন সত্য থাকে; বিকৃত ঘটনাও বৈধতা পেয়ে বাস্তবতায় নতুন ধারণা সৃষ্টি করতে পারে। আর এ ধরনের কোনও ঘটনার সন্ধানেআমি বহুদিন নিরলস কাজ করেছি-বিশ্বাস করতাম এরকম কোনোও সমাধি যদি আবিষ্কার করতে পারি তা হলে গোটা বিশ্বকে প্রমাণ এবং যুক্তি দিয়ে বোঝাতে সমর্থ হব। এই মূর্তির মধ্যে সম্ভবত গোপন প্রেতপূজারীদের মমি রয়েছে। তবে তার জন্য আমি আসিনি। আমি এসেছি তাদের জ্ঞানের সন্ধানে। যে জ্ঞান তাদের সঙ্গে একই সময় কবর দেয়া হয়। এসেছি সেই প্যাপিরাসের পাণ্ডুলিপির খোঁজে যাতে আছে নিষিদ্ধ গোপন সব তথ্য-জ্ঞান, যার কথা পৃথিবীর মানুষ কখনও জানারসুযোগ পায়নি। জ্ঞান-এবং ক্ষমতা! ‘ক্ষমতা! আমি ব্ল্যাক টেম্পলের কথা পড়েছি, পড়েছি সেই গভীর ধর্মবিশ্বাসের কথা যে ধর্মকে পরিচালনা করতেন পার্চমেন্টে উল্লিখিত প্রভুরা। তাঁরা জাদুটোনা করার মতো সাধারণ সন্ন্যাসী ছিলেন না; তাঁরা এ ভূলোক ছেড়েও দ্যুলোকে বিচরণ করতেন। তাঁদের অভিশাপকে সবাই ভয় পেতো, আশীর্বাদকে করতো সম্মান। কেন? কারণ তাঁদেরজ্ঞানভাণ্ডার অসীম ছিলো বলে। বিশ্বাস কর পিটার, এইসমাধির মধ্যে আমরা যে গোপন তথ্যের খোঁজ পাব তাদিয়ে অর্ধেক পৃথিবীতে রাজত্ব করতে পারবো। মৃত্যু-রশ্মি, তীব্র বিষ, প্রাচীন গ্রন্থ আর জাদুবিদ্যার সম্মিলিত শক্তি দিয়ে আবার অন্ধযুগের দেবতাদের পুনর্জন্ম ঘটাতে পারবো। ভাব একবার ব্যাপারটা। এই ক্ষমতার অধিকারী যে কেউ গোটা দেশকে হাতের মুঠোয় পুরে রাখতে পারবে, পারবে শাসন করতে এবং তার শত্রুদের ধ্বংস করতেও সে এ জ্ঞান ব্যবহার করবে। তার থাকবে অজস্র ধনরত্ন, সম্পদের পাহাড়, বিলাস বৈভব, হাজার সিংহাসনের বিপুল সমারোহ!’ বাবা নির্ঘাত পাগল হয়ে গেছে, ভাবলো পিটার। ঝেড়ে দৌড় দেয়ার ইচ্ছে হলো। এই ভয়াল অন্ধকার জগৎ থেকে বেরিয়ে সুনীল আকাশ দেখার প্রচণ্ড তৃষ্ণা অনুভব করলো সে, খাঁটি, তাজা হাওয়ায় বুক ভরে শ্বাস নেয়ার আকাক্সক্ষায় আই ঢাইশুরু করল ফুসফুস। এই মৃত-শতাব্দীর ধুলাবালির কবল থেকে মুক্তি চায় সে। দৌড় দিয়েও ছিলো পিটার, কিন্তু স্যার রোনাল্ড খপ করে ওর কাঁধ চেপে ধরলেন, টান দিয়ে ওকে ঘোরালেন তাঁর দিকে। ‘তুই দেখছি আমার কথা কিছুইবুঝতে পারিসনি।’ বললেন তিনি। ‘ঘটে হলুদ পদার্থ থাকলে অবশ্যই বুঝতি। যাকগে, তাতে কিছু যায় আসে না। আমি আমার মিশন সম্পর্কে নিশ্চিত। তুইও হবি। তবে আগে আমাকে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে ফেলতে হবে। এখন তোকে পার্চমেন্টের সেই অংশটা, যেটা আমি পড়ে শোনাইনি, তাতে কী লেখা ছিলো, বলব।’ পিটারের মস্তিষ্কে যেন সতর্ক ঘণ্টি বেজে উঠল। কেযেন বলতে লাগলো পালাও-পালাও! কিন্তু স্যার রোনাল্ড ওকে শক্ত মুঠোয় চেপে ধরে আছেন। পালাবার উপায় নেই। তাঁর গলা কাঁপছে। ‘যে অংশের কথা আমি বলছি তাতে লেখা ছিলো কীভাবে এইমূর্তি পার হয়ে সমাধিতে ঢুকতে হবে। মূর্তির দিকে চেয়ে থেকে লাভ নেই, নতুন কিছু আবিষ্কার হবে না; আর এর মধ্যে গোপনীয়তা বলেও কিছু নেই, দেবতার এই শরীরেকোনও যন্ত্রাংশও নেই। মহাপ্রভু এবং তাঁর উপাসকরা এসব কাঁচা কাজ করতে যাননি। সমাধিতে ঢোকার রাস্তা একটাই-দেবতার শরীরের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে হবে।’ অ্যানুবিসের মুখোশের মত ভয়ঙ্করদর্শন চেহারাটার দিকে আবার তাকাল পিটার। শেয়াল মুখটাতে ধূর্ততার ছাপ সুস্পষ্ট নাকি এ স্রেফ আলোছায়ার খেলা? ‘কথাটা অদ্ভুত শোনালেও সত্যি।’ বলে চলেছেন স্যার রোনাল্ড। ‘তোর নিশ্চয়ই মনে আছে পার্চমেন্টে এই মূর্তিটিকে অন্য সবার থেকে আলাদা বলা হয়েছে? কিন্তু অ্যানুবিস কী করে পথপ্রদর্শক হলো আর এর গোপন আত্মার ব্যাপারটিই বা কী? পরের লাইনেই অবশ্যএ কথার জবাব আছে। মনে হয় মূর্তিটি একটি পিভট (চরাড়ঃ)-এর ওপর ভর করে ঘুরতে পারে আর ওটার পেছনের একটা অংশ খুলে ফাঁকা হয়ে যায়। সংযোগ ঘটেসমাধির সঙ্গে। কিন্তু এটাতখনই সম্ভব হবে যখন মূর্তির মধ্যে জাগবে মনুষ্য সচেতনতা।’ আমরা আসলে সবাই পাগল, ভাবলো পিটার। আমি, বাবা, প্রাচীন সন্ন্যাসীরা এমনকী এই মূর্তিটাও। সমস্ত অশুভ যেন এক গিঁটঠুতে বাঁধা। ‘এর অর্থ একটাই। আমি দেবতার দিকে তাকিয়ে নিজেকে সম্মোহিত করবো। ততক্ষণ পর্যন্ত সমাহিত থাকবো যতক্ষণ পর্যন্ত না আমার আত্মা এইমূর্তির শরীরে প্রবেশ করেএবং সমাধিস্তম্ভের প্রবেশদ্বার খুলে যায়।’ ভয়ের ঠাণ্ডা একটা স্রোত যেন জমিয়ে দিলো পিটারকে। ‘তবে এটাকে উদ্ভট কোনোও চিন্তা ভেবে অবজ্ঞা করিস না। যোগীরা বিশ্বাস করেন এভাবে অন্যের শরীরে প্রবেশ করা সম্ভব। আত্মসম্মোহন সব জাতির মধ্যেই স্বীকৃত একটি বিষয়। আর সম্মোহনবিদ্যা একটি বৈজ্ঞানিক সত্য। হাজার বছরেরও আগে থেকে এইসত্যের চর্চা হয়ে আসছে। প্রাচীন সন্ন্যাসীরা সম্মোহনের ব্যাপারটি খুব ভাল জানতেন। আর আমিও এখন তাই করতে যাচ্ছি। নিজেকে সম্মোহন করব আমি এবং আমারআত্মা বা সচেতনতা মূর্তিরমধ্যে ঢুকে যাবে। আর আমি তখনই শুধু সমাধিস্তম্ভ খুলতে পারব।’ ‘কিন্তু ওই অভিশাপ!’ বিড়বিড় করে বললো পিটার। ‘অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে ওতে কী বলা হয়েছে তুমি তো জানোই-যারা বিশ্বাস করে না যে প্রভু অ্যানুবিস এইসমাধিস্তম্ভের পথপ্রদর্শকই শুধু নয়, রক্ষাকর্তাও বটে। এই অবিশ্বাসীদের ওপর অভিশাপ নেমে আস্যার কথাও তো বলা হয়েছে। তার কী হবে?’ ‘দূর দূর ওসব খেলো কথা।’ স্যার রোনাল্ড দৃঢ় গলায় বললেন। ‘সমাধি লুটেরাদের ভয় দেখাতে ওসব অভিশাপ-টভিশাপের কথা বলা হয়েছে। যা থাকুক কপালে ঝুঁকি আমিনেবোই। তুই শুধু দেখ আমি কী করি। আমি যখন সম্মোহিতহয়ে পড়বো তখন মূর্তিটা নড়ে উঠবে এবং ওটার নিচের অংশটা খুলে যাবে।
সঙ্গে সঙ্গে তুই ভেতরে ঢুকে যাবি। তারপর আমাকে জোরে ঝাঁকুনি দিলেই আমি আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবো।’ বাবার আদেশ অমান্য করতে পারলো না পিটার। মশালটা উঁচু করে ধরলো, আলো সরাসরিবিচ্ছুরিত হতে লাগলো অ্যানুবিসের মুখের উপর। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো পিটার, দেখলো বাবা শেয়াল দেবতার চোখে চোখ রেখেছেন।পাথুরে, ঠাণ্ডা দু’ জোড়া চোখ। দৃশ্যটা ভয়ঙ্কর : দুজন মানুষ, বারো ফুট লম্বা এক দেবতা, মাটির নিচে এক অন্ধকার ঘরে পরস্পরের দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে আছে। স্যার রোনাল্ডের ঠোঁট নড়তে শুরু করল। প্রাচীন মিসরীয় স্তোত্র পাঠ করছেন। অ্যানুবিসের কপালে আলো জ্বলজ্বল করছে, সেদিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন তিনি। আস্তে আস্তে তাঁর দৃষ্টি চকচকে হয়ে এল; চোখে পলক পড়ছে না, তারায় ফুটে উঠলো অদ্ভুত এক নিস্প্রাণ জ্যোতি। হঠাৎ তাঁর শরীর একদিকে নুয়ে পড়লো, যেন পৈশাচিকভাবে সমস্ত শক্তি কেড়ে নেয়া হয়েছে। আতঙ্কিতপিটার দেখলো তার বাবার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেছে, তিনি হাঁটু ভেঙে পড়ে গেলেন মেঝের ওপর। কিন্তু দেবতার চোখ থেকে একবারও দৃষ্টি ফেরালেন না। এভাবেকেটে গেল বেশ ক’টি মুহূর্ত। মশাল উঁচিয়ে রাখতে রাখতে পিটারের বাঁ পায়ে ঝিঁঝি ধরে গেলো। পিটার, কিছু ভাবতে পারছে না। তার বাবাকে এর আগেও বহুবার আত্মসম্মোহন করতে দেখেছে সে আয়না আর আলো নিয়ে। কিন্তু বদ্ধ ঘরে বিপদের কোনও আশঙ্কা ছিলো না। আর এখানকার অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাবা কি পারবেন মিসরীয় এই দেবতার শরীরে প্রবেশ করতে? যদি পারেনই তা হলে ওই অভিশাপ?প্রশ্ন দুটো বার বার আলোড়িত হতে থাকে পিটারের মনে। কিন্তু কোনও জবাব পায় না। হঠাৎ ব্যাপারটা লক্ষ করল সে। প্রচণ্ড ভয়েযেন জমে গেলো। ওর বাবার চোখে মরা মানুষের শেষ চাউনি, সচেতন ভাবটা সম্পূর্ণ উধাও। কিন্তু দেবতার চোখ-অ্যানুবিসের দৃষ্টি এখন আর নিস্প্রাণ এবং পাথুরে নয়। ভয়ঙ্কর মূর্তিটা জেগে উঠেছে! ওর বাবা তা হলে ঠিকই বলেছিলেন। কাজটা করেছেন তিনি-সম্মোহনের মাধ্যমে নিজের সচেতনতাবোধ মূর্তির মধ্যে প্রবেশ করিয়েছেন। কিন্তু এখন? এরপর কী ঘটবে? বাবা বলেছিলেন তাঁর আত্মা সরাসরি সমাধিস্তম্ভে প্রবেশের পথ খুলে দেবে। কই, সেরকম তো কিছুই ঘটছে না। কারণ কী? শঙ্কিত এবং ভীত পিটার উবুহয়ে পরীক্ষা করলো স্যার রোনাল্ডের শরীর, নিস্তেজ, নিস্প্রাণ একটা শরীর। মারা গেছেন স্যার রোনাল্ডবার্টন। ঝট করে পিটারের মনে পড়ল পার্চমেন্টের সেইভয়ঙ্কর সাবধানবাণী : যারা বিশ্বাস করবে না তারা মরবে। প্রভু অ্যানুবিসকে পাশ কাটিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়া হয়তো সম্ভব হবে, কিন্তু তিনি আরঅনুপ্রবেশকারীকে বাইরের পৃথিবীতে ফেরত যেতে দেবেননা। মনে রেখ, অ্যানুবিস একঅদ্ভুত দেবতা যার মধ্যে রয়েছে এক গোপন আত্মা। গোপন আত্মা! কেঁপে উঠলো পিটার। মশালটা উঁচিয়ে ধরেসোজা শেয়াল দেবতার চোখের দিকে চাইলো। অ্যানুবিসের ঠাণ্ডা পাথুরে চোখ দুটো জ্যান্ত! পৈশাচিকভাবে জ্বলজ্বল করছে অশুভ দেবতার দুই চোখ। ওদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই যেন উন্মাদ হয়ে গেল পিটার। ওর মাথা শূন্য হয়ে গেছে। কিছুই ভাবতে পারছে না। তার মাথায় দড়াম দড়াম বাড়ি খাচ্ছে শুধু একটাই ব্যাপার-তার বাবা মারা গেছেন। আর এই মৃত্যুর জন্য দায়ী ওই মূর্তিটা। যেভাবেই হোক বাবাকে হত্যাকরে সে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।বিকট চিৎকার দিয়ে সামনের দিকে ছুটে গেলো পিটার বার্টন, দমাদম ঘুসি মারতে লাগলো পাথরের মূর্তির বুকে। হাত ফেটে রক্ত বেরুতে শুরু করলো, রক্তাক্ত মুঠিতে চেপে ধরলো সে অ্যানুবিসের শীতলদুই পা, টানতে লাগলো। যেন উল্টে ফেলবে। কিন্তু এক চুল নড়লো না দানব-মূর্তি।বিকট চোখে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। অশ্রাব্য গালিগালাজ শুরু করলো পিটার। বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে ওকে। কী করছে নিজেও জানে না। মূর্তিটা যেন ওর দুর্দশা দেখে আনন্দ পাচ্ছে, ভেঙচি কাটছে। পাগলের মত ওটার গাবেয়ে ওপরে উঠতে শুরু করলোপিটার। থেকে থেকে ঝাঁকি খাচ্ছে ওর শরীর, ফোঁপাচ্ছে, বাবার কথা বলছে ফোঁপাতে ফোঁপাতে। চোখে খুনের নেশা। যেন ভেঙচি কাটা মুখটাকে ধ্বংসকরে দেবে। অ্যানুবিসের মাথার কাছে পৌঁছুতে কত সময় লেগেছে জানে না পিটার। হঠাৎ ওর সম্বিত ফিরে এলো। লক্ষ করলো মূর্তিটার ঘাড়ের কাছে চলে এসেছে। পা ঝুলছেমূর্তির পেটের কাছে। উন্মাদ দৃষ্টিতে চেয়ে আছেভয়ঙ্কর এবং জ্যান্ত চোখ দুটোর দিকে। হঠাৎ গোটা মুখটা যেন বেঁকে যেতে শুরু করলো। ফাঁক হয়ে গেলো পাথুরে ঠোঁট, বিশাল এক গহ্বরের সৃষ্টি হলো মুখে, নড়ে উঠল হাত। লম্বা, প্রসারিত হাত দুটোর আঙুলগুলো বাঁকানো, যেন ছোবল দেবে কালনাগিনী।বিদ্যুদ্বেগে হাত দুটো পিটারকে শক্ত, পাথুরে বুকের সঙ্গে মরণ আলিঙ্গনেবেঁধে ফেললো, পরক্ষণে আঙুলগুলো চেপে বসলো ওর গলায়। হাঁ করা মুখটা নেমেএলো নিচে, ধারালো দাঁতে কামড় বসালো পিটারের ঘাড়ে।ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা উষ্ণ রক্ত ভিজিয়ে দিলো প্রতিহিংসায় উল্লসিত তিন হাজার বছরের পুরোনো অশুভ দেবতার মুখ। পরদিন স্থানীয় লোকেরা পিটারের রক্তশূন্য, হাড়গোড় ভাঙা লাশটা আবিষ্কার করলো অ্যানুবিসের পায়ের নিচে। স্যার রোনাল্ডের প্রাণহীন দেহটাও তার পাশেচিৎ হয়ে আছে। দেবতার অভিশাপের ভয়ে সমাধিতে ঢোকার সাহস কারও হলো না। বরং দরজা বন্ধ করে যে যার বাড়ি ফিরে গেলো। তারা বললো বুড়ো এবং তরুণকে ‘ইফেন্দি’ হত্যা করেছে। আরএই মৃত্যু স্বাভাবিক ছিলো। কারণ দেবতা অ্যানুবিস অনুপ্রবেশকারীদের সহ্য করেন না। সবাই চলে যাবার পর আবার কবরের নিস্তব্ধতা এবং অমাবস্যার কালো অন্ধকার নেমে এলো পাতাল ঘরটিতে। স্থানীয়রা এখান থেকে চলে যাবার আগে দেখে গেছে অ্যানুবিসের নিস্প্রাণ পাথুরে মূর্তির চোখে জীবনের কোনও আভাস নেই। কিন্তু মৃত্যুর আগে পিটারবার্টন যা জেনে গেছে তা কেউ জানতে পারেনি, কোনওদিন জানবেও না। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে পিটার দেখেছে অ্যানুবিসের পৈশাচিক পাথুরে চোখের জায়গায় ছলছলকরছে ওর বাবার দুই চোখ!
: ফুটা টোস্ট ভুত নাকি মানুষ
: kaza maa
ফুটা টোস্ট নামের এক অদ্ভুত মানুষের দেখা মেলেছে ঘোস্ট নাথিং দ্বিপে । সে পানির নিচে বেশ কয়েক দিন থাকতে পারে ।নিল তিমি সে আস্ত খেয়ে ফেলে । সে যে কোন পাথরের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে । সে ফু দিলে মানুষের ভিতরের কাল চিন্তা দূর হয়ে যায় । সে ধ্বংস করে ফেলছে অবৈধ টাকার প্রাসাদ। টেনে ফেলছে মিথ্যে বাদিদের জিভ । আজ তার অনেকশত্রু তাকে মেরে ফেলতে মানুষ ব্যাথ হয়ে । মানুষ ভূতদের কাজে লাগাচ্ছে তাকে মেরে ফেলার জন্য কিন্তু কোন ভুত তার সাথে পেরে উঠেনি ভুতের লাশের পাহাড় টি হিমালয়ের চেয়ে উঁচু হয়েছে । সেই পাহাড় দেখতে যাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন । কিন্তু দু একজন ছাড়া কেউ সেই পাহাড় দেখতে পাচ্ছেনা । আসলে ভুত তো সবায় দেখতে পায়না ভুতের লাশ দেখবে কিভাবে আপনারায় বলুন । বিজ্ঞানী রা গবেষণা করে যে টুকু জানতে পেড়েছে তা হল । ফুটা টোস্ট এর রক্তে মিশে আছে প অফ বা । এর ভাল পতিক্রিয়ার সে আজ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে এবং খারাপ পতিক্রিয়ার গুল তার শক্তিজগিয়েছে । প অফ বা তার রক্তে মিশে যেতে সাহায্য করেছে ঘোড়ার সিং নামের এক মহা দৈত্য । প অফ বা কি ? এ প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানীরা বলেছেন বাংলাদেশের রাজনিতি । যে দেশের রাজনিতির ছায়া অবলম্বন করে একজন মানুষ এত শক্তি শালী হতে পারে । যে দেশের রাজনিতির শক্তি ভুতের চেয়েও বেশী । আমরা সে দেশেজন্ম নেয়নি বলে দুঃখ বোধ করছি । আসলে পৃথিবীতে সময়ের ব্যাবধানে অনেক কিছু হয় যা কখনো ভাবা হয়নি । আমরা সকলে জানি একদিন মৃত্যু হবে । পৃথিবী ধ্বংস হবে । তবু ইন্দ্রজাল থেকে মুক্তি হতে পারছি কি ? প্রকৃতির নিয়মে ফুটা টোস্ট তার সব শক্তি একদিন হারাল । সমুদ্রের হিংস্র প্রাণীরা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেলতার লাশ । বেড়ে গেল আবার অবৈধ ব্যাবসা , ঘুষ , দুর্নীতি , পৃথিবীর নষ্টামি । ফুটা টোস্টের মত আর কারো জন্ম এই পৃথিবী তে হবে কি আবার ?
মন্ত্র বা জীন পরীদের ক্ষমতা নেই(প্রমানিত)
Kaza maa
দুই বছর ধরে কোন বৃষ্টি নেই , নদীতে ,পাতালে , পুকুরে পানি নেয় বাংলাদেশে । আল্লা মেঘ দেপানি দে , কোরআন , গিতা , বাইবেল পড়ে কোন লাভ হলনা ।কামরূপ কামাক্ষা থেকে আগতবড় বড় সাধক , সর্প রাজা রানী , বেদে ,ইন্ডিয়া,আফ্রিকা ,বাংলাদেশের ব্ল্যাক আর্ট ( শয়তানী শক্তি ) কিছু করতে পারল না। জীনদের কাজে লাগিয়ে এক জমিতে পানি দিতে পারল না সাধক রা । বিশুদ্ধ বোতলের পানি পান করে কোন রকমে বেঁচে আছে একটি বদ্বীপের জনপদ । সবুজ স্যামলা বাংলাদেশ আজহলুদ সাড়ি পরেছে কিন্তু একটু ও মানাচ্ছে না । গাছেরা নীরবে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে । এই পরিস্তিতির সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করল ব্ল্যাক নামের একটি কালছেলে । সে নামাজ পড়ে কোরআন পড়ে নিয়মিত কিন্তু আজ সে আশা হত সিধান্ত নিল শয়তান ও জীনকে গোলাম বানাবে প্রয়জনে সুরা উল্টা করে পড়ে কুফুরি করবে যেই করে হোক একটা অদৃশ্য শক্তি অর্জন করবে । জীন সুরা পড়েও একটি জীনের দেখা পেলনা সে । ব্ল্যাক সাধন করতে গিয়ে তার ঘরের চালে জীন এসেছিল ভেবে খুশি হল কিন্তু শেষে দেখল তাদের পোষা বেড়াল কোন জীন না । জীনকে দাস বানানোর অনেক চেষ্টা করে ব্যাথ হল । কাল যাদুর ডেভিল , জীন , পরীর দল ভয়েব্ল্যাকের থেকে দূরে থাকতে লাগল । ব্ল্যাকের ভয়ে মানুষের ঘাড়ে বসে জীনদের মিষ্টি ,দুধ ,কলা খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল । মাজার পুজা বন্ধ হয়ে গেল । বছরের পর বছর চেষ্টা করে ওব্ল্যাক কোন জীন ,পরী বা শয়তান ধরতে পারলনা । শুরু করল সলেমানি যাদু শিখতে । যাদুর টুপি , আংটি,লাঠি বানানোর জন্য রাতের বেলা বাঁশের কঞ্চী কেটে নিয়ে আসল , সর্ষে চুরি করল, রাহু চণ্ডালের হাড় , মৃত মানুষের চুল সংগ্রহ করল , সাত ঘাটের পানি নিল , মেশকজাফরান দিয়ে আরবি লিখে নদীতে ভাসিয়ে আসল ।আম্বস্যার রাতে নগ্ন হয়েঅনেক কিছু সংগ্রহ করল ইত্যাদি ইত্যাদি করে সে ব্যাথ হল । তার এ কাজ গুল করার আগে কিন্তু তার গুরু রা অনেক ভয় দেখিয়েছিল সে ভয় পায়নি কারন সে জানে একদিন মৃত্যু হবে সে আগুনে পুরতে হবে তাকে । মৃত্যু নিয়ে সে খেলা যখন শুরু করেছে শেষ দেখেই ছাড়বে । আজ মনে প্রানে বিশ্বাস করে ব্ল্যাক সুরা উল্টো করে পড়ে পণ্ড শ্রম হবে তাইসম্পূর্ণ নিষেধ রয়েছে । কক্ষপথ থেকে ঝড়ে পড়া তারার মত সে ধর্ম থেকে ঝড়েপরেছে । অনেক জীন সাধক ব্ল্যাককে বলেছে তোমার রাশি ভারী ও তুমি তুলা রাশি তাই জীন পরীরা তোমাকে ভূতের মা মনে করে দূরে দূরে থাকে । আজ কাল ব্ল্যাকের নাম শুনলে মানুষের ঘেন্না হয় । কিন্তু ব্ল্যাক খারাপ হলেও তো একটা মানুষ ।ব্ল্যাকের সামনে পৃথিবীর কেউ কি প্রমান করে দিতে পারবে জীন পরীর মানুষের চেয়ে বেশী ক্ষমতাআছে । আসলে এক দল লোক মানুষের মন নিয়ে খেলা করে ফায়দা লুটছে । ব্ল্যাক বিশ্বাস করবে দৈবশক্তি যদি মন্ত্র বা জীন পরীদের ক্ষমতা প্রয়োগ করেমাথা ন্যাড়া করতে । যদি দূর থেকে ন্যাড়া করতে নায় পারে কেউ তাহলে অবস্যয় মন্ত্র বা জীন পরীদের ক্ষমতা নেই প্রমানিত । পারলে ৫০ হাজার টাকা উপহার । প্রয়োজনে যোগাযোগ kaza-maa420@hotmail.com
মাসিক ভৌতিক অক্টোবর সংখ্যা এখানেই শেষ ।নভেম্বর সংখ্যায় আপনার লেখা পাঠানঃ Jabed.bhoiyan@gmail.com।আমাদের এই সংখ্যাটি অনলাইনে
Pain Relief meds
জন পড়েছেন ।