Duck hunt
তিনগোয়েন্দা
হলিউডে রওনা হলো দুই গোয়েন্দা, কিশোর আর মুসা। রবিন আসতেপারেনি। কাজের চাপ বেশি। লাইব্রেরিতে চলে গেছে। প্যাসিফিক স্টুডিওর ফটকে এসে থামল রোলস রয়েস। আজ আর কোন অসুবিধে হল না। কেরি ওয়াইল্ডার জানে ওরাআসছে, জানিয়ে রেখেছে গার্ডকে। খুলে গেল দরজা। ভেতরে ঢুকে পড়ল রোলস রয়েস। কয়েক মিনিট পরেই মিস্টার ক্রিস্টোফারের অফিসে এসে ঢুকল দুই গোয়েন্দা।ডেভিস ক্রিস্টোফার: "এসে গেছ। বস,"
ভারি গলা পরিচালকের,
--"তারপর ? কি খবর ?"
কিশোর পাশা: "ভূতুড়ে বাড়ি খুঁজে পেয়েছি, স্যার,"
বসতে বসতে বলল কিশোর।
ডেভিস ক্রিস্টোফার: "তাই নাকি ?"
ভুরু কোঁচকালেন পরিচালক।
--"কি ধরনের ভূত ?"
কিশোর পাশা: "ধরন ঠিক করা কঠিন, আসলে ভূতুড়ে করে রেখেছিলেন একজন মানুষ। মরা নয়, জ্যান্ত।"
ডেভিস ক্রিস্টোফার: "তাই! মজার ব্যাপার !"
চেয়ারে হেলান দিলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার।
--"খুলে বল তো, সব।"
চুপচাপ সব শুনলেন পরিচালক। তারপর বললেন,
ডেভিস ক্রিস্টোফার: "জন ফিলবি বেঁচে আছে জেনে ভালই লাগছে। এককালের মস্তঅভিনেতা কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু একটা ব্যাপার তো বললে না। নার্ভাস করত কি করে লোককে ?"
কিশোর পাশা: "গতরাতে মিস্টার ফিলবির ওখান থেকেফিরে অনেক ভেবেছি, স্যার।শেষে বুঝে ফেলেছি ব্যাপারটা। পাইপ অর্গান।"
ডেভিস ক্রিস্টোফার: "পাইপঅর্গান !"
কিশোর পাশা: "হ্যাঁ, স্যার। চাচার বুক শেলফে অর্গানের ওপর একটা বই আছে। এক জায়গায় লেখা আছে: সাবসোনিক ভাইব্রেশন অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া করে মানুষের স্নায়ুর ওপর। একধরনের চাপ সৃষ্টি করে। প্রথমে অস্বস্তি বোধ শুরুহয়। বাড়তে থাকে অস্বস্তি, তারপর ভয়, এবং সব শেষে আতঙ্কিত করে তোলে।"
ডেভিস ক্রিস্টোফার:"বুদ্ধি আছে লোকটার ! কিন্তু, ভূতুড়ে ক্যাসলেরভূতকে লোকের সামনে বের করে আনাটা কি উচিত হবে ? একেবারে ধ্বংস হয়ে যাবে ফিলবি।"
কিশোর পাশা: "এখন একমাত্রআপনিই বাঁচাতে পারেন ওঁকে।"
ডেভিস ক্রিস্টোফার: "আমি?"
কিশোর পাশা: "হ্যাঁ, স্যার, আপনি। ওঁর সমস্ত নির্বাক ছবিকে সবাক করে তুলতে পারেন। কণ্ঠ উনিই দিতে পারবেন এখন। গলায় আর কোন দোষ নেই। প্রচুর আয় হবে। ক্যাসলটা আবার কিনে নিতে পারবেন মিস্টারফিলবি। এতদিন ভূত সেজে মানুষকে কি করে ভয় দেখিয়েছেন, প্রকাশিত হবেখবরের কাগজে। লোকে দেখতে আসবে টেরর ক্যসল। ভেরের অদ্ভুত সব কাণ্ডকারখানা পয়সার বিনিময়ে দেখাতে পারবেন তিনি। বেশ ভালই আয় হবে ওখান থেকেও। মস্তবড় একটা প্রতিভাকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিল লোকে না বুঝে। এতগুলো বছরে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে তাঁর, তবে আপনি সাহায্য করলে পুষিয়ে নিতে পারবেন কিছুটা।"
ডেভিস ক্রিস্টোফার:"হুমমম !"
হালকা পাতলা ছেলেটার দিকেচেয়ে আছে মিস্টার ক্রিস্টোফার। ---"তোমার অনুরোধ আমি রাখব, কিশোর পাশা, কথা দিলাম।"
কিশোর পাশা: "থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার, থ্যাঙ্ক ইউ ! মিস্টার ফিলবির অভিনীত ছবিগুলো এবার দেখতে পাব।"
মুসা আমান: "হ্যাঁ, এবার দেখতে পাব।"
বলল পাশে বসা মুসা।

ডেভিস ক্রিস্টোফার:"হ্যাঁ, ভাল কথা, অনেক খোঁজ-খবর করেছি আমি, কিন্তু সত্যি সত্যি কোন ভূতুড়ে বাড়ি নেই কোথাও।গুজব থাকে, ভূত আছে ভূত আছে।
কিন্তু ভালমত খোঁজখবর করলেই বেরিয়ে পড়ে অন্য কিছু।
যাই হোক, ওই প্রোজেক্ট বাদ দিতে হচ্ছে আমার।"
কিশোর পাশা: "তাহলে কি. .."
সামনে ঝুঁকল কিশোর। হাত তুললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার।
ডেভিস ক্রিস্টোফার: "আগে শোন সব কথা। কথা দিয়েছিলাম, তোমাদের নাম প্রচার করব। ব্যবস্থাটা আসলে তোমরাই করে দিলে। চমৎকার এক গল্প হবে, সত্যি ঘটনার ওপর ভিত্তি করে। টেলিভিশনের জন্য যদিএকটা ফিল্ম তৈরি করি ?
নাম দিই: মিস্টার ফিলবি অভ টেরর ক্যাসল, কেমন হয়?"
প্রায় লাফিয়ে উঠল কিশোরআর মুসা। হততালি দিয়ে উঠল। চেঁচিয়ে উঠল,
-- "খুব ভাল হয়, স্যার, খুব ভাল !" ডেভিস ক্রিস্টোফার:"হ্যাঁ, আরেকটা ব্যাপার। তোমাদের মাঝে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি আমি। গোয়েন্দা হিসেবে ভালই নাম করতে পারবে।
চালিয়ে যাও। দরকার হলে আমিও সাহায্য করব তোমাদের।"
খুশিতে ধেই ধেই করে লাফানো বাকি রাখল শুধু দুই গোয়েন্দা। কিশোর বলল,
কিশোর পাশা: "আমরা যাই, স্যার। রবিনকে খবরটা দিতেহবে।"
ঘর থেকে প্রায় ছুটে বেরিয়ে এল দুই কিশোর। পেছনে তাকালে, দেখতে পেত, সারাক্ষণ সদা-গম্ভীর চিত্র-পরিচালকের মাঝেও সংক্রমিত হয়েছে তাদের আনন্দ।
কুৎসিত ঠোঁটে ফুটেছে নিষ্পাপ সুন্দর এক চিলতে হাসি।

||দুই||

'বাপরে !'
চিত্‍কার করে উঠলো কিশোর আর মুসা ।প্রচন্ড জোরে ঝাকি খেতে খেতে চলেছে বাসটা ।জিম হ্যাগেনের সামার ক্যাম্পে চলে ওরা ।তিন গোয়েন্দা একসাথে ।
আবার ব্রেক কষার ঝাকুনি ।আরেকবার সিট থেকে পিছলে নেমে যাওয়ার মতো অবস্থ ।ড্রাইভারের রাগত চিত্‍কার শুনা গেল ।
জোর জোর হাঁপানোর শব্দ ।সামনের দরজার কাছে ।
কোন মতে সীটে উঠে বসে ঘুরে তাকাল কিশোর ।
দরজা দিয়ে জোর করে বাসে উঠার চেষ্টা করছে একটা লোক ।আগাগোড়া কালো পোশাকে মোড়া ।মুখে কালো মুখে ।লাফ দিয়ে ড্রাইভারের পিছনে চলে গেল লোকটা ।কালো দস্তানা পরা ।ড্রাইভারকে এক পলকে দরজা দিয়ে বাইরে ফেল দিল লোকটা ।দরাম করে দরজা লাগিয়ে আবার এক লাফে ড্রাইভারের সিটে বসে পড়লো লোকটা ।
কিছু বুঝে উঠার আগেই বাস চলতে শুরু করল ।
'কে লোকটা ' চিত্‍কার করে বলল রবিন ।'কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাদের' !

||তিন||
বাসটা প্রায় ৩০ মিনিট চলার পর হঠাত্‍ করে থেম গেল । খোলে গেল দরজা ।দম দম বাসের মানুষগুলোকে আরও ভয়ঙ্কর অসহায় আর অদ্ভূত ভয়ের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে বাসে প্রবেশ করলেন আরও চার পাঁচ জন মানুষ ।একই পোশাক ।একই মুখোশ পড়া ।
হাতে অনেকগুলো দড়ি ।একে একে সবাইকে একসাথে বেঁধে ফেলা হল ।একে অপরের দিকে আরও একবার করে তাকাল তিন গোয়েন্দা ।একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এল কিশোরের মুখ থেকে ।
কিছুই করার নেই ওদের !

বাসটা আরও একটু সামনে যাওয়ার পর হঠাত্‍ করে আগের মতোই থেমে গেল ।দরজা দিয়ে একজনের সাথে আরেকজনকে বেধেঁ লাইন ধরে নামাতে শুরু করল অচেনা লোকগুলো ।চট করে কিশোরের হাতে দিকে চোখ পড়ল রবিনের ।হাতদুটো ফাঁক করে রাখা ।তাঁরমানে একটু চেষ্টা করলেই খোলে ফেলতে পারবে কিশোর ।মুখে দিকে তাকাল কিশোরের ।চাঁদের আলোয় মূসা আর রবিনের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল কিশোর ।

ধীরে ধীরে দড়ি দিয়ে বাধা মানুষের শেকলটা একটা জঙ্গলে প্রবেশ করল ।আর একটু গিয়ে হাত থেকে দড়িটা খুলে ফলল কিশোর ।সাথে সাথে রবিন আর মুসারটাও ।তাঁরপর একসাথে জট বেধে হঠাত্‍ করেই একটা ঝুপের আড়ালে বসে পড়ল ওরা ।নাকের কাছ দিয়ে ট্রেনের মতো হেটে পার হয়ে গেল মানুষের লাইনটা ।জমানো শ্বাস ফেলে আড়াল থেকে বেরিয়ে এল ওরা ।
:বড় বাচা গেছে ।
কথা শেষ হলোনা কিশোরের ।তাঁর আগেই চিত্‍কার শুনা গেল ।
:খাইছে !দেখে ফেলেছে ।
মূসার কথায় দৌড়তে লাগল ওরা ।একটানা ঝার ঝুপ ভেঙ্গে ।

||চার||
দৌড়তে দৌড়তে থমকে দাড়াল একটা পুরনো বাড়ির সামনে ।হাত বাড়িয়ে দরজার নব চেপে ধরল কিশোর। জোরে মোচড় দিয়ে ঠেলা দিতেই তীক্ষ্ণ একটা ক্যাঁ-এঁ-চ-চ আওয়াজ উঠল।
ভয়ানক জোরে বুকের খাঁচায় বাড়ি মারল একবারমুসার হৃৎপিণ্ড। পেছন ফিরে দৌড় মারতে যাচ্ছিল,থেমে গেল শেষ মুহূর্তে। খুলে গেছে বিশাল দরজা। দরজার কব্জার আওয়াজ হয়েছে, বুঝতে পারল।
কিশোরের অবস্থাও বিশেষ সুবিধের নয়। বুকের ভেতর দুরদুর করছে তারও।
ফিরে ছুট লাগাতে ইচ্ছে করছে। মনোবল পুরো ভেঙে পড়ার আগেই বন্ধুর হাত চেপে ধরল। তাকে নিয়ে ঢুকে পড়ল ভেতরে।


কিশোর পাশা: "দরজা কয়েকটা. . . কোনটা দিয়ে যাব ?"
মুসা আমান: "ফিরে গেলেই ভাল. . . ওরেব্বাপরে !"
কিশোর পাশা: "কি, ক্কি হল?"
মুসা আমান: "ও-ওই যে ! . . . ও-ওটা !"
.
.
.
.
মুসার নির্দেশিত দিকে তাকাল কিশোর। স্থির হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গে। আবছা আলোয় দেখল, লম্বা একটা মেয়ে চেয়ে আছে তাদের দিকে। পরনে তিনশো বছর আগের পোশাক। গলায় দড়ির ফাঁস। দড়ির অন্য মাথা বুকের ওপর দিয়ে ঝুলছে, নেমে এসেছে মাটিতে।
অপলকে চেয়ে আছে মুসা আর কিশোর। মেয়েটাও চেয়ে আছে ওদের দিকে।
হঠাৎ গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠল মুসা। নরম হালকা কিছু একটা তার মুখ-মাথা পেঁচিয়ে ধরেছে। টেনে সরাতে গিয়েইবুঝল, মখমলের ছেঁড়া পর্দার কাপড়।
কোণ ঘুরে আবার এগোল ওরা। কয়েক পা এগিয়েই থমকে দাঁড়াল কিশোর।
হাত চেপে ধরল মুসা। ভাঙ্গা অর্গানের সামনে নড়াচড়া করছে ম্লান নীল আলো।
অন্ধকারেই বুঝতে পারল মুসা, ক্যামেরা রেডি করছেতার সঙ্গী।ক্যামেরা হাতেই ধরা রইল কিশোরের। জ্বলে উঠল মুসারহাতের টর্চ। আটকা পড়ে গেল দু'জনে। মাথার ওপর থেকে নেমে এসেছে জাল। এতইআচমকা, কিছু করারই সুযোগ পেল না ওরা। কাছেই দাঁড়িয়ে আছে দু'জন আরব।

||পাঁচ||
জীবনে এমন বিপদে আর পড়েনি মুসা। ভাবছে। এই সময় দেখা গেল আলো। এগিয়ে আসছে দুলেদুলে। কাছে এসে দাঁড়াল এক লোক।হাতে একটা বৈদ্যুতিক লণ্ঠন। সিল্কের আলখাল্লা গায়ে। ঝুঁকল লোকটা। হাতের লণ্ঠন তুলে ভাল করেদেখল মুসাকে। নিষ্ঠুর এক জোড়া চোখ, কেমন ঘোলাটে চাহনি। হাসল লোকটা। ঝকঝক করে উঠল সোনার দাঁত।
-- "বোকা ছেলে ! আর সবার মত ভয় পেয়ে চলে গেলেই ভাল করতে। এখন মরবে।"
জবাই করার ভঙ্গিতে নিজের গলায় আঙ্গুল চালাল লোকটা। বিচ্ছিরি ঘরঘরে একটা আওয়াজ করল। ইঙ্গিতটা বুঝল মুসা। দুরুদুরু করে উঠল বুকের ভেতর।
মুসা আমান: "কে আপনি ? এখানে কি করছেন ?"
গলা দিয়ে কোলা ব্যাঙের আওয়াজ বেরোল তার।
-- "কি করছি ?"
হাসল লোকটা।
-- "পাতালে গেলেই বুঝতে পারবে।"
লণ্ঠন নামিয়ে রাখল লোকটা। উবু হয়ে দু'হাতে ধরে তুলে নিল মুসাকে। যেনএকটা কোলবালিশ, এমনি ভাবে,কাঁধে ফেলল মুসার ভারি দেহটা। লণ্ঠনটা আবার হাতেতুলে নিয়ে এগোল যেদিক থেকে এসেছিল।বেরিয়ে গেছে লোক দুটো। মিলিয়ে গেল ওদের পায়ের আওয়াজ। ভারি পাথর ঘষা লাগার আওয়াজ হল। তারপর সব চুপচাপ।
কিশোর পাশা: "মুসা,"
ডাকল কিশোর,
"ঠিকঠাক আছ ?"
মুসা আমান: "ঠিকঠাক বলতে কি বোঝাতে চাইছ ?"
নিরস গলায় বলল মুসা।
"হাড়-টাড় ভাঙেনি, এটুকুঠিক আছি।"
কিশোর পাশা: "ভালো,"
কিশোরের গলায় ক্ষোভ, নিজের প্রতি।
"বোকার মত তোমাকে এই বিপদে এনে ফেললাম ! নিজের বুদ্ধির ওপর খুব বেশি ভরসা ছিল আমার !"
মুসা আমান: "খামোখা ভেবে মন খারাপ কোরো না, একদল ডাকাত এসে আস্তানা গেড়েছে টেরর ক্যাসলে, কিকরে জানবে ? কোন প্রমাণ তো পাওয়া যায়নি আগে।"
কিশোর পাশা: "হ্যাঁ। আমি শিওর ছিলাম, টেরর ক্যাসলের সব কিছুর মূলে শুধু জন ফিলবি। কল্পনাই করিনি, আর কেও থাকতে পারে।
যা হবার হয়ে গেছে, ওসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। তা হাত -পা নাড়াতে পারছ কিছু ?"
মুসা আমান: "পারছি। শুধু বাঁ হাতের কড়ে আঙুল।"
কিশোর পাশা: "আমি ডান হাত নাড়াতে পারছি, নিজেকে ছাড়াতে পারব মনে হয়। ঠিক জায়গায় পোঁছাচ্ছি কিনা, দেখো।"
কাত হয়ে পরে আছে কিশোর। মুসা আছে চিত হয়ে। শরীরটাকে বান মাছের মত বাঁকিয়ে-চুরিয় ে অনেক কষ্টে কাত হল। কিশোরের পিঠ এখন তার দিকে। দেখল, কোমরের বেল্টে আটকানো সুইস ছুরিটা খুলে ফেলতে পেরেছে কিশোর। বিভিন্ন আকারের ছোটবড় আটটা ব্লেড, ছোট একটা স্ক্রু-ড্রাইভার আর একটা কাঁচিও লাগানো আছে বিশেষ কায়দায়। কাঁচি দিয়ে জালের কয়েকটা ঘর কেটে ফেলল কিশোর। কাটা জায়গা দিয়ে বের করতে পারছে ডানহাত।
মুসা আমান: "বাঁ পাশে কাটতে পার কিনা দেখো,"
ফিসফিস করে বলল মুসা।
"ওই হাতটা বের করতে পারলেই কেল্লা ফতে।"
ছোট্ট কাঁচি। নাইলনের শক্ত সুতোয় তৈরি জাল। এগোতে চাইছে না কাজ। থামলনা কিশোর। চেষ্টা চালিয়েগেল। শেষ পর্যন্ত মুক্ত করে ফেলল দুই হাত। কোমরেরকাছে কাটা শুরু করল। নিচের দিকে ফুট খানেক কেটে ফেলেছে, এই সময় শোনা গেল পায়ের আওয়াজ। তাড়াতাড়ি কাটা জায়গাটা টেনে পিঠের দিকেনিয়ে গিয়ে চিত হয়ে শুয়ে পড়ল সে। দু'হাত ঢুকিয়ে নিলো জালের ভেতর।কয়েক মুহূর্ত পরেই ঘরে এসে ঢুকল এক বুড়ি। হাতে বৈদ্যুতিক লণ্ঠন। পরনে জিপসি-আলখাল্লা। কানে সোনার বড় বড় রিঙ।
-- "বেশ বেশ,"
হাঁসের মত প্যাঁকপ্যাঁক করে উঠল যেন বুড়িটা।
"খুব আরামেই আছো দেখছি, বাছারা। জিপসি কাটির হুঁশিয়ারি তো মানলে না, বিপদে পড়বেই।
আমার কথা শুনলে আর এ-অবস্থা হত না।"
লণ্ঠন তুলে দেখছে বুড়ি। হঠাৎই মনে হল তার, বড় বেশি স্থির হয়ে আছে ছেলেদুটো। কোন কথা বলছে না, নড়ছে না চড়ছে না। সন্দেহ হল। মুসার কাছে এসে দাঁড়াল। সন্দেহজনক কিছু দেখল না। ঘুরে কিশোরের পাশে গিয়ে দাঁড়াল।
-- "তুমি একটু কাত হও তো, বাছা,"
প্যাঁকপ্যাঁক করে উঠল হাঁসের গলা।
"পারছ না ? বেশ, এই যে, আমিসাহায্য করছি।"
লণ্ঠনটা নামিয়ে রাখল সে।উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে রবিনআর হ্যানসন। এক ঘণ্টা হল গেছে মুসা আর কিশোর, ফেরার নাম নেই। প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর রোলস রয়েস থেকে বেরিয়ে আসছে রবিন, ব্ল্যাক ক্যানিয়নের দিকে তাকাচ্ছে। বন্ধুরা আসছে কিনা দেখছে। প্রতি দশ মিনিট পর পর বেরোচ্ছে হ্যানসন।
হ্যানসন: "মাস্টার রবিন,"
আর থাকতে না পেরে বলল হ্যানসন।
"মনে হয় এবার যাওয়া উচিত।"
রবিন মিলফোর্ড: "কিন্তু গাড়ি ফেলে যাবার হুকুম নেই আপনার," মনে করিয়ে দিল রবিন
"চোখের আড়াল করা নিষেধ।'
হ্যানসন: "তা হোক, মানুষের জীবনের কাছে রোলসরয়েস কিচ্ছু না। আমি ওদের খুঁজতে যাব।"
গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো হ্যানসন। বুট খুলে বড় একটা বৈদ্যুতিক লন্ঠন বেরকরলো পাশে এসে দাঁড়িয়েছে রবিন তার দিকে চেয়ে বলল,
হ্যানসন: "আমি যাচ্ছি।"
রবিন মিলফোর্ড: "আমিও যাব।"
হ্যানসন: "ঠিক আছে, আসুন যাই।"
বুট বন্ধ করতে গিয়েও থেমে গেল হ্যানসন। বড় একটা হাতুড়ি বের করে নিলো, দরকার পড়তে পারে। একটা অস্ত্র তো বটেই।জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল হ্যানসন। রবিনকে ঢুকতে সাহায্য করল। লণ্ঠনের আলোয় বুঝতে পারলওরা, একটা ডাইনিং রুমে এসে ঢুকেছে।
হ্যানসন: "এরপর ? এরপর কোনদিকে গেলেন ! কয়েকটা দরজা। কোথাও চিহ্ন নেই।"
এই সময় রবিনের চোখ পড়ল আয়নার ওপর। বড় করে আঁকারয়েছে প্রশ্নবোধক চিহ্ন? দেখাল হ্যানসনকে।
হ্যানসন: "অসম্ভব !
আয়নার ভেতর দিয়ে কেউ যেতে পারে না ! দেখতে হচ্ছে !"

টর্চ জ্বালল রবিন। প্রথমেএগিয়ে গেল বাঁয়ের সুরঙ্গের দিকে। সুরঙ্গের মুখে দাঁড়িয়ে জোরে চেঁচাল হ্যানসন,
হ্যানসন: "মাস্টার কিশোর,আপনারা কোথায় !"
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জবাবএলো। কার গলা, চিনতে ভুল হল না হ্যানসনের। রবিনের হাত থেকে টর্চটা নিয়ে এগোল। কয়েক গজ এগোতেই দরজা দেখতে পেল। ঠেলা দিতেই খুলে গেল ভেজানো পাল্লা। আলো ফেলল ভেতরে।
মুসা আমান: "উফফ ! রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে !"
বাঁধনের দাগগুলো জোরে জোরে ডলছে মুসা। কিশোরও ডলছে। সংক্ষেপে হ্যানসন আর রবিনকে জানাল, কি করে বন্দি হয়েছিল ওরা।
হ্যানসন: "তাড়াতাড়ি করাদরকার, পুলিশ নিয়ে আসতে হবে। ভয়ানক লোক ওরা ! আমরা না এলে তো গেছিলেন !"
ছোট ঘরটায় ফিরে এলো ওরা।সিঁড়ির দিকে পা বাড়াতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালো কিশোর। কান পাতল।
কিশোর পাশা: "কিসের শব্দ!"
রবিন মিলফোর্ড: "পাখি !"
কিশোর পাশা: "পাখি !"
কি করে মেয়েমানুষটাকে তাড়া করে গিয়েছিল, জানাল রবিন। সবশেষে জানালো, কি পাখি ওগুলো।
কিশোর পাশা: "কাকাতুয়া!"
কিশোরের মুখ দেখে মনে হল বোলতা হুল ফুটিয়েছে।
কিশোর পাশা: "জলদি এস আমার সঙ্গে !"
এক থাবায় হ্যানসনের হাত থেকে টর্চটা নিয়ে ছুটল। ঢুকে পড়ল মাঝের সুরঙ্গে।

একটু এগিয়ে গিয়েই ব্যপারটা বুঝতে পালল ওরা ।মানুষের দলটাকে এখানেই বন্ধি করে রাখা হয়েছে ।

||ছয়||
পুলিশ ইন্সপেক্টর কার্ড়ন ব্রাউন কে ফোন করে সুরঙ্ক আর ভৌতিক বাড়িটার বর্ননা দিতেই তিনি এক ঘন্টার মধ্যেই সেখানে হাজির হলেন ।চার পাচারকারীকে ধরা হল ।

||সর্বশেষ||
কিশোর পাশা: "টাকা পয়সা কিচ্ছু চাই না আমরা, স্যার,
শুধু প্রচার চাই। এজন্যে কাউকে লিখতে হবে আমাদের কথা। যেমন লেখা হয়েছে শার্লক হোমস, এরকুল পোয়ারোর কাহিনী। আমার ধারণা, ওদের কথা লেখা হয়েছে বলেই আজ ওরা এত নামী গোয়েন্দা।"
চিত্র পরিচালক চশমা রেখে ওদের দিকে ভাল করে তাকালেন ।থম থমে মুখটায হঠাত্‍ করেই হাসি ফুলে উঠলো ওনার ।
:-আমি চিন্তা করেছি তোমাদের মিশনটা নিয়ে একটা ছবি তৈরী করব ।নাম ...
:-তিন গোয়েন্দা !খাওয়া ভরতি মুখে কোন রকমে বলল মূসা আমান ।
:-Okey my বয় ! তিন গোয়েন্দার পিঠ চাপরে দিলেন তিনি ।হাসি ছড়িয়ে পড়ল সবার মুখে ।
||সমাপ্ত||