Disneyland 1972 Love the old s
মাসিক ভৌতিক
জুলাই ২০১২
সংখ্যাঃ ০৭
বর্ষঃ ০২
প্রভাতী ই- প্রকাশনি
আমাদের কথা
একে একে ৬টি সংখ্যা প্রকাশিত হল মাসিক ভৌতিক ।নিয়মিত প্রকাশনা মূলত শুরু এ মাস থেকেই ।এখন থেকে মাসিক ভৌতিক দুটি ফরম্যাটে প্রকাশিত হবে ।.mob (মোবাইলের জন্য) এবং .pdf (কম্পিউটারের জন্য) । মাসিক ভৌতিকের এবারের সংখ্যায় রয়েছে বেশ কিছু চমক ।আকার ও গল্পের দিক দিয়েও এ সংখ্যা থেকে মাসিক ভৌতিকে আসছে নতুনত্ব ।তো চলুন ঘুরে আসি মাসিক ভৌতিকের ভৌতিক ভুবনে । বিণিতঃ সম্পাদক (মাসিক ভৌতিক) =Provati-EPublication=
চৌধুরী সাহেবের ভৌতিক জীপগাড়ি।
সংগৃহিত গল্প
তখন চলতে ছিল আষাঢ় মাস। আষাঢ় মাস ভ্রমনের জন্য মোটেও সুবিধার নয়। যখন তখন বৃষ্টির ফলে রাস্তা-ঘাট কাদায় সয়লাব হয়ে থাকে। তারপরও আমাকে যেতে হয়েছিল। কথা ছিল ভ্রমন সংঙ্গি হিসাবে আমার বাল্যবন্ধু ইমরান থাকবে। কিন্তু যাবার আগের দিন ইমরান আমাকে চৌধুরী সাহেবের বাড়ি যাবার বিস্তারিত ঠিকানাটা হাতে ধরিয়ে দিল। করুন গলায় বললো, দোস্ত প্লিজ তুই একাগিয়ে ঘুরে আয়। আমার অফিসের জরুরী কাজে আমাকে চট্রগ্রাম যেতে হবে। কণে তোর পছন্দ হলে পরের বার আমি আর তুই যাব।
ওর এমন অনায্য দাবী শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।সাথে সাথে তির্ব প্রতিবাদকরে বললাম, এটা তোর খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তুইজানিস আমি কেমন। আমার পক্ষে কিছুতেই অপরিচিত জায়গায় একা যাওয়া সম্ভব নয়। আর নিজের পাত্রী দেখতে যাব নিজেই! ছিঃ কেউ একা কণে দেখতে যায়?
আমার ভৎসনায় ওরে খুব বিচলিত দেখায়। ও ভাল করেইজানে মেয়েদের ব্যাপারে আমার সিমাহিন অস্বস্তির কথা। ২৮ বছর পেরিয়ে যাবারপরও মেয়েদের ব্যাপারে আমার লাজুকতা ভয়াবহ পর্যায়ে। কিন্তু ইমরানের নানা যুক্তির কাছে, আর সারা জীবনের সবচেয়ে কাছেরবন্ধুর দাবীর কাছে পরাজয় হয় সব কিছুর। আমি গিয়ে ছিলাম কুসুমপুর। তার গল্পই বলব আজ।
সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল খুব।রেলের কাচের জানালা দিয়ে সেই বৃষ্টি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে ছিলাম। কতক্ষনঘুমিয়ে ছিলাম আমি জানিনা।রেল যখন ঝাকুনি দিয়ে থামলধরমর করে উঠলাম। ততক্ষনে বেশিরভাগ যাত্রী নেমে গিয়েছে। বৃষ্টিপাত তখনও চলতেছিল। দৌড়ে প্লাটফর্মে ঢুকলাম বটে তবে শরীরের বেশ কিছুটা ভিজে গেল আষাঢ়ের বৃষ্টিতে। ষ্টেশন মাষ্টারের কক্ষের সামনে দাড়িয়ে ভিজে যাওয়া চশমার গ্লাস পরিস্কার করলাম। কেমন যেন ঝাপসা দেখছি সব।মাথাটাও ঝিমঝিম করছে। টানা সাত ঘন্টার রেল ভ্রমনের ক্লান্তিতে এমনটা হয়েছে বোধহয়।
ষ্টেশন মাষ্টারের কক্ষটা বহুদিন চুনকাম করা হয়নি। অনেক জায়গায় প্লাস্টার উঠে গিয়ে লাল ইট বেরিয়ে আছে। স্যাতসেতে দেয়াল। ষ্টেশন মাষ্টারের চেয়ারের বাম পাশে একটা কাঠের আলমারী। আলমারীর দরজা আটকানো থাকলেও আলমারীর উপরে পুরাতন রেজিষ্টার খাতা আর ময়লা ফাইলের স্তুব। ষ্টেশন মাষ্টারের চেয়ারের একটা হাতল নেই। তেল চিটচিটে হয়ে চেয়ারটা তার আসল চেহারাটা হারিয়ে ফেলেছে। ভদ্রলোকের গায়ের রং কালো।বয়স ৫০বছরের বেশি হবে। গালে বিশ্রি একটা কাটা দাগ। তবে গোফটা বেশ ভারি।যতœ করে গোফটাকে কামিয়েছেন ষ্টেশন মাষ্টার।
আমি তাকে সালাম দিলাম । তিনি বিরক্তিভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। টাই পরা সুশ্রী আমাকে অন্যরা সমিহ করলেও তিনি আমাকে যেন খেয়ালই করতে চাইল না। গলা পরিস্কার করে আমি তাকে কিছু বলতে গেলাম ঠিক তখনিসে মাথা ঘুরিয়ে বললো, ঢাকার ট্রেন আগামীকাল সকাল ৯টায়।
- আমি কিছুক্ষন আগের ট্রেনে ঢাকা হতে এসেছি। এসেই একটা ভয়ানক সমস্যায় পড়েছি। কথা ছিল শরিফ চৌধুরীর লোকজন আমার জন্য গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবেন।কিন্তু এখন ষ্টেশনে কাউকেখুজে পাচ্ছিনা। এমনকি কোথাও একটা রিকশাও পেলাম না।
আমার কণ্ঠে অসহয়ত্ব প্রকাশ পেলো। কিন্তু ষ্টেশন মাষ্টার বেশ নির্বিকার ভাবে বললো, জমিদারী চলে গিয়েছে ৪০ বছর আগে, কিন্তু ওনার ডাট কমে নাই!
আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম ষ্টেশন মাষ্টারের ধৃষ্টতা দেখে। বিস্ফোরিত চোখে প্রশ্ন করলাম, কি বলছেন এসব? আমার কথার উত্তর না দিয়ে তিনি বললেন,চৌধুরী সাহেবের বাড়িতো মহল্লার শেষ মাথায়। তাছাড়া দু’দিন ধরে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে রাস্তায় হাটু পানি জমে গেছে। চৌধুরী সাহেব আপনারজন্য একটা রিকশা পাঠিয়ে ছিলেন, তবে রেল দুই ঘন্টা লেট করে আসায় আর তুফান থাকায় সে হয়ত চলে গিয়েছে।
আমি হাতঘড়িতে চোখ রাখলাম, রাত ১০টা বেজে ৩৬ মিনিট। গ্রামে অবশ্য সাড়ে দশটাই অনেক রাত। আর সেটা যদি হয় ঝড় বৃষ্টির রাত!
ওয়েটিং রুমের বেঞ্চিতে এসে বসে পড়লাম। ভারি ক্লান্তি লাগছে। পেটের ভেতর খিদেরাও আক্রমন চালাতে শুরু করে দিয়েছে। অসহ্য লাগতে ছিল। বুঝতে পারছিলাম না কি করে এই অনাকাঙ্খিত বিপদ হতে উদ্ধার পাবো। বন্ধু ইমরানের চৌদ্দ্যগুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলাম। বার বার ঘড়ি দেখতে ছিলাম। সেকেন্ডের কাটা গুলি যেন ঘন্টার কাঠা হয়ে গেল, সময় কাটতে চাইছিল না। তারপরও বসে বসে একঘন্টা কাটিয়ে দিলাম, কিন্তু বৃষ্টি থামার কোন লক্ষন দেখলাম না। দেয়ালের পেরেকের সাথেহারিকেন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বাতাসে হারিকেনের আলো কাঁপছে। ঘোলা কাচের ভেতর থেকে লাল ফ্যাকাসে আলো গভির অন্ধকারের কাছে তেমন পাত্তা পাচ্ছেনা।
ওয়েটিং রুমে এখন আর কেউ নেই আমি ছাড়া। বাইরের বৃষ্টির শব্দ আর রাতের নিঃসঙ্গ নিজর্ণতা মিলে ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমার গা ছমছম করছিল। ভয় পাচ্ছিলাম। মনেহচ্ছিল অচেনা পৃথীবিতে চলে এসেছি আমি। জানালা দিয়ে বাইরের নিকষ কালো অন্ধকার ঘরে ঢুকছে। ভয়াবহএমন সময়ে হঠাৎ মনে পড়ল আরে আমার কাছেতো চৌধুরী সাহেবের বাসার নাম্বার আছে! কি বোকাই না আমি! উঠেদ্রুত ষ্টেশন মাষ্টারের কক্ষের দিকে ছুটলাম। হতাশহলাম, কক্ষে তালা ঝুলছে। দুরে একজন প্রহরীকে দেখলাম সিমেন্টের বেঞ্চে গুটিসুটি মেরে ঘুমুচ্ছে।
আবার আগের জায়গায় চলে এলাম। কেন যেন বার বার মনে হচ্ছিল আমি একটা দুঃস্বপ্নের মধ্যে ডুবে আছি। সারাটা রাত হয়ত আমাকে নিঘুর্ম এখানে কাটাতে হবে। হাতঘড়ির দিকেতাকাতেও বিরক্ত লাগতে ছিল। নিজেকে অভিসাব দিয়ে ভাবছিলাম কেন ঝোকের মাথায়এভাবে চলে এলাম?
বিরক্তি কাটানোর জন্য চৌধুরী সাহেবের অদেখা মেয়েটার কথা ভাবতে লাগলাম। ইমরান বলছিল মেয়েটার চেহারা নাকি অনেকসুন্দর। মায়া ভরা মুখ। দেখলেই মনে ভরে যাবে। গলার স্বরও নাকি খুব মিষ্টি। ভাল রবীন্দ্র সংগীত গায়। যাক বিকেলে বারান্দায় বসে কফি খেতে খেতে ওর রবীন্দ্র সংগীত শোনা যাবে।
চোখে তন্দ্রামত এসেছিল বোধহয়। হঠাৎ নারী কণ্ঠের শব্দে চোখ খুলে তাকালাম। আর তাকাতেই বিস্মিত হলাম।আমার সামনে দাড়িয়ে আছে অপূর্ব সুন্দরী একটি মেয়ে। সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লাল শাড়িটা তাকে খুব মানিয়েছে। মনে হচ্ছে স্বর্গের হুর ভুল করে মর্তে চলে এসেছে। মায়াবি চেহারার দিকে তাকিয়ে চোখ ফেরাতে পারতে ছিলাম না। হাসনে হেনার তির্ব গন্ধে সারা রুম ভরেগিয়েছে। তরুণী কি হাসনে হেনার গন্ধযুক্ত কোন পারফিউম ব্যবহার করেছে?

তার ফর্শা হাতের দিক তাকালাম। মেহেদি দেওয়া হাতে কাচের চুড়ি।অদ্ভদ ঘোরলাগা মুহূর্ত। সে বললো, আপনি নিশ্চয় শফিক সাহেব, তাইনা?
আমি বললাম, হ্যা। কিন্তু আপনি কে?
আমি মেহজাবিন চৌধুরী। বাবা আপনার জন্য যাকে পাঠিয়ে ছিল সে অবিবেচকের মত চলে যাওয়ায় আমি খুবই দুঃখিত। আমি গাড়ি নিয়ে এসেছি। উঠুন। সে আমার দিকে তাকিয়ে নির্দেশ করে।
বিস্মিত আমি কিছুটা ঘাবড়েগেলাম মেহজাবিন এর আচরনে।এতরাতে একটি মেয়ে কি কওে অচেনা এক পুরুষের জন্য গাড়ি নিয়ে ষ্টেশনে আসে? আর গাড়ি থাকলে তার বাবা কেন রিকশা পাঠিয়ে ছিলেন? বুঝতে পারছিনা কি করবো। আমার দ্বিধা দেখে বিরক্তিভরা কণ্ঠে বলে, কি হলো আসুন। আমার হাতে সময় খুব কম।
ব্রিফকেসটা হাতে নিয়ে মেহজাবিনকে অনুসরন করি।
পুরানো দিনের নীল রংয়ের একটি জিপ গাড়ি। গাড়ির ভেতরের লাইট নেই। সামনে হেড লাইটের আলোয় মেহজাবিনকে দেখছি। অসিম শূন্যতা মেয়েটার চোখে। কিছুটা দুঃচিন্তাগ্রস্থ বলেও মনে হল। মেয়েদের পাশে অনেক বার বসেছি, কিন্তু আজ কেন জানিনা অন্যরকম লাগছে। আমি বললাম, আপনাদের এখানে কি বিদুৎ নেই? সে গভির ভাবনায় ডুবে ছিল উত্তর দিলনা। আমিও কথা বলার মত কিছু খুজে পেলামনা। আমি তাকে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেলাম। কি আশ্চর্য ২৮ বছরের জীবনে এমনটা কখনো ঘটেনি। এত সহজে কারো প্রেমে পড়া যায়আমার ভাবনায় তা ছিলনা। আমি খুবই আশ্চর্য! ইচ্ছে করছে এখুনি তাকে বলি যে আমার কণে পছন্দ হয়েছে। মেহজাবিন আপনাকে আমার খুবভাললেগেছে।
কিন্তু তাকি উচিৎ হবে? ব্যাপারটা বেশ হাস্যকর হয়ে যাবে ,তাই ওপথে না গিয়ে প্রশ্নকরি আপনাদের বাড়িতে যেতে আর কতক্ষন লাগবে?
সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো, বেশি না আর পনেরো মিনিট লাগতে পারে। আপনি নিশ্চয় খুব ক্লান্তি অনুভব করছেন?
না না, তেমন নয়। তবে অন্ধকারে একা বসে থাকার সময় বেশ ভয় পাচ্ছিলাম। শহরের মানুষতো!
সে হাসলো শব্দ করে, বলেন কি? ভুতের ভয় আছে আপনার?
না তেমনটা নয়। আসলে একা ছিলামতো!
ও আচ্ছা।
সে জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। বিদুৎ চমকাচ্ছে। বৃষ্টি কমেছে। বাতাস বইছেখুব। আমি ষ্টেশনে বসে থাকা বিরক্তিকর সময় গুলো ভুলে গেলাম। মেহজাবীনকে মনে হল আমার বনলতা সেন। ইচ্ছে করছিল সারারাত তার সাথে গাড়িতে বসে থাকি। মনে মনে ইমরানকে ধন্যবাদ দিলাম আর তখনি হঠাৎ করে মনে হল, ইমরান বলেছিল চৌধুরী সাহেব তার বড় মেয়ের জন্য পাত্র খুজছেন।দ্বিধায় পড়ে গেলাম। মেহজাবীন কি বড় না ছোট?
যদি ছোট হয়? তবে বড় মেয়ে রেখে নিশ্চয় চৌধুরী সাহেবতার ছোট মেয়েকে বিয়ে দিবেন না। তেমনটা হলে আমিনা হয় মেহজাবিন এর জন্য অপেক্ষা করবো। মনকে স্বান্তনা দিলাম।
ভাবনায় ছেদ পড়ল মেহজাবীনের কণ্ঠে ও বললো, নামুন আমরা চলে এসেছি। ঝাকি দিয়ে থেমে গেল গাড়িটা। সাথে সাথে হেড লাইট অফ হয়ে গেল। ব্রিফকেসটা নিয়ে নিচে নামলাম। আবছা আলোয় শ্যাওলা পড়া পুরাতন আমলেরবিসাল এক লোহার গেট দেখলাম। ইটের তৈরী বেশ চওড়া একটা রাস্তা দেখলাম।এটা যে এককালে জমিদার বাড়ি ছিল তা আধারের মাঝেওটের পাওয়া গেল। মেহজাবীন বললো, আপনি ভেতওে যান, বাবা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
আপনি?
আমি পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকবো। বাবা যদি জানে ষ্টেশনে আপনাকে আনতে গিয়েছিলাম তাহলে অনেক বকাদিবে। উনি খুব রক্ষনশীল স্বভাবের। সে হাসল। তার হাসিটা বেশ অদ্ভুদ লাগতে ছিল। তাকিয়ে দেখি জিপের ভেতর কোন ড্রাইভার নেই। বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। মুখ শুকিয়ে গেল আমার। আমার ঘাবড়ে যাওয়া বেশ উপভোগ করছে মেহজাবীন। হিহি করে হেসে উঠল সে। কি হলো যান, দরজায় কড়া নাড়–ন।
হাওয়ায় মিলিয়ে গেল যেন মেহজাবীন। হাসনে হেনার তির্ব গন্ধটাও মিলিয়ে গেল। কাপা হাতে দ্রুত দরজায় কড়া নাড়তে লাগলাম।
হাওয়ায় মিলিয়ে গেল যেন মেহজাবীন। হাসনে হেনার তির্ব গন্ধটাও মিলিয়ে গেল। কাপা হাতে দ্রুত দরজায় কড়া নাড়তে লাগলাম। আমার শরীরও কাপতে ছিল। পেছনে তাকাতে ভয় পাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল কেউ একজন আমার পেছনে দাড়িয়ে আছে। জীবনে এমন অভিজ্ঞতা খখনো হয়নি আর, তাই বেশ অস্বস্তিতে ছিলাম। কি জানি হয়ত মেহজাবীন আমাকে শহরের মানুষ পেয়ে ভড়কে দিচ্ছে। ওর রহস্যময়ী আচরন আমাকে দ্বিধায় ফেলে দিল। কেউ কিনেই ঘরে? দরজায় পাল্লায় ক্রমাগত আঘাত করছি, কোন সাড়া নেই?
হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার পায়ের উপর কেউ একজন হাত রাখছে। বরফের মত ঠান্ডা হাত। ভয়ে শিড়দারা শক্ত হয়ে যাচ্ছিল। চিৎকার করতেচাইলাম কিন্তু গলা দিয়ে কোন শব্দ বের হলোনা। হার্টফেল করার পূর্ব মুর্হূতে বিকট শব্দে দরজাখুলে গেল। মুখের উপর হারিকেন উচু করে ধরলো কেউএকজন। হঠাৎ চোখে আলো পড়ায়কিছুই দেখতে পাচ্ছিলামনা। কোনমতে বললাম, আমি শফিক আহমেদ ঢাকা থেকে আসছি। এটা কি চৌধুরী বাড়ি?
এবার হারিকেন নিচে নামলো।চৌধুরী সাহেব বললো, আহারে বাবা আপনাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। কি করবো যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছিল। আসেন আসেন ঘরে আসুন। আমি বিব্রত কন্ঠে বললাম, আমার পায়ের দিক আলো ফেলুন কি যেন আমার পায়ে। আলো ফেলতেই দেখি একটি বড়সড় আকারের ব্যাঙ আমার পায়ের উপর বসে আছে।
ঘরে ঢুকে অন্যরকম এক অভিজ্ঞতা হল। জমিদার বাড়িএতদিন সিনেমা আর নাটকে দেখেছিলাম কিন্তু বাস্তবে যে তা আরো বেশি আর্কষনীয় হয় তা বুঝলাম। দেয়ালে দু’নলা বন্দুক ঝুলানো। দুটো তলোয়ারও সাজিয়ে রাখা হয়েছে। হরিনের মাথা আর বাঘের চামড়াও ঝুলানো আছে। আসবাবপত্রগুলি আভিজাত্যর ছাপ বয়ে বেড়াচ্ছে।
খাবার টেবিলে আরেক জন বৃদ্ধ ভৃত্যকে পেলাম। চৌধুরী সাহেবও বসলেন আমারসাথে কিন্তু তার দু’মেয়ের কাউকেই ঘরে দেখলাম না। মনটার ভেতর খুব টান অনুভবকরছিলাম। মেহজাবীন একবারের জন্য উকি দিলেও পারতো। ধুর মেয়েটা যে কিনা!
খাওয় দাওয়া শেষে কিছুক্ষনগল্প করলাম চৌধুরী সাহেবের সাথে। তিনি খুব আগ্রহ নিয়ে তার বাবার জমিদারীর সময়ের নানা ঘটনাবলতে লাগলেন। তিনি জানালেন দেয়ালে ঝুলানো বাঘটাকে তিনি নিজে শিকার করেছেন। তার শিকারের গল্পও শুনলাম। একবার তিনিঅল্পের জন্য বাঘের হাত থেকে বেচে গিয়ে ছিলেন সে কথাও জানলেন তিনি। তার গল্প শুনতে বেশ লাগতে ছিলেন। কিন্তু রাত অনেক হওয়ায় তা থামাতে হল। পরিস্কার বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। ক্লান্ত ছিলাম বলে খুব সহজেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাঙলো পরদিন সকাল ৯টায়।

কক্ষের সামনের বারান্দায় দাড়ালাম। সামনের সুন্দর ফুলের বাগান দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। অনেক ফুল ফুটেছে। বাতাশে ফুলের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে। নানা জাতের অসংখ্য ফুলের গাছ। চারপাশের সবুজ গাছ পালা আর পাখির কিচির মিচির শব্দ ভীষণ ভাল লাগছিল। মুগ্ধ হয়ে অপরুপ প্রকৃতি দেখতে ছিলাম।
হঠাৎ কেউ একজন আমার হাত ধরলো। চমকে পেছনে তাকিয়ে দেখি একটা নয় দশ বছরের একটা মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কে তুমি? প্রশ্ন করতেই হাত ছেড়ে দৌড়ে পালালো মেয়েটি। আমি তার দৌড়ে যাওয়া দেখলাম। হেটে সামনেযেতেই গতরাতের বৃদ্ধ ভৃত্যটার সাথে দেখা হল। বয়স ৭০বছর হবে। ভাল করে দিনের আলোতে তার দিকে তাকালাম সে কাস্তে হাতে বাগানের আগাছা পরিস্কার করছে। বাগান ভরা ফুল, লাল নীল সবুজ ফুল। একসাথে এত ফুল দেখিনি কখনো। বৃদ্ধ একমনে কাজ করতে ছিল, কাছে গিয়ে বললাম ঐ মেয়েটি কে?
সে চোখ তুলে তাকালো, তারপরবললো, ওর নাম ময়না। আমার নাতি, বোবা কথা বলতে পারেনা। ভয় পায় ও সবাইরে ভয় পায়।
আমি প্রশ্ন করি এই বাগান কে গড়ে তুলে ছিল? সে দীর্ঘঃশ্বাস ছেড়ে বললো মেহজাবীন। বৃদ্ধর কথাটা শুনে ভাল লাগলো। তারমানে মেহজাবীন ফুল খুব পছন্দ করে, না?
উত্তর না পেয়ে পেছনে তাকাতেই দেখি বৃদ্ধ নেই। আমি সামনের দিকে এগুতে থাকি। বিশাল বড় বাড়িটার চারদিকে সবুজের সমরোহ আমাকে মুগ্ধ করে। এমন বাড়িতে বিয়ে হলে ভালই হবে। আজ নিশ্চয় চৌধুরী সাহেবের কন্যাদ্বয়ের সাথে দেখা হবে। আচ্ছা মেহজাবীন কি আমাকে পছন্দ করেবে? কি জানি! নারী হৃদয়তো বড় বিচিত্র। তাছাড়া আমাকে তো কোন নারীকখনো সেভাবে চায়নি। হালকাটেনশনও ফিল করছিলাম।
কিছুদুর সামনে গিয়ে দেখলাম বাগানের পাশে সুন্দর সান বাধানো ঘাটের পুকুর। পুকুরে লাল রংয়ের শাপলা ফুল ফুটে আছে। আর স্বচ্ছজলের উপর মাছেরা হাকরে জল খাচ্ছে! না, বোধহয় অক্সিজেন নিচ্ছে। তাকিয়ে ছিলাম মুগ্ধ নয়নে, হঠাৎ পেছন থেকে চৌধুরী সাহেবেরকণ্ঠ‘ বাবা তুমি এখানে আর আমি সারা বাড়ি খুজতেছি। চল নাস্তা খাবে।
হেসে বললাম পুকুরের মাছ দেখতে খুব ভাল লাগতে ছিল।অপূর্ব!
পরে এসে বড়শি দিয়ে না হয় মাছ ধরিও। আমি তাকে অনুসরন করে পিছন পিছন যাচ্ছিলাম। ডান দিকে ঘুরতেই টিনের চালের গ্যারেজের নিচে একটা জীপ গাড়ি দেখে চমকে উঠলাম। থমকে দাড়িয়ে জিপটাকে ভাল করে পর্যাবেক্ষন করতে লাগলাম। বিস্মিত হলাম যখনদেখলাম গাড়িটার দুটো চাকাখোলা, ব্যাকডালা ভাঙা। একটা হেডলাইটও নেই। মরিচায় জর্জরিত বডি। সিটের উপর পাখির মল মুত্র। মনেহয় গত দুই এক বছর কেউ এটা ছুয়েও দেখেনি। গতরাতে কি আমি এইগাড়িতে চড়ে এসেছিলাম?
চৌধুরী সাহেব পিছন ফিরে বললো কি হলো? কি দেখছো?
আমি তাকে প্রশ্ন করলাম আপনার এরকম গাড়ি কয়টা?
একটাইতো ছিল। এটা এ্যাকসিডেন্টের পর আর সারিনি। ও আমার সব কিছু কেড়ে নিয়েছে। তিনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন।
আমি আতংকিত হয়ে পড়লাম। গলা দিয়ে কথা বের হতে চাচ্ছিলনা বিস্ময়ে। কোনমতে বললাম মেহজাবীনতো কাল রাতে…!
এবার চৌধুরী সাহেবের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। বিস্মিত নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন তুমিওদেখেছো! দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি। তার চোখে জ্বল টলমল করে।
সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, মেহজাবীন ছিল আমার বড় মেয়ে। খুব ভালবাসতাম ওরে আমরা। লেখা পড়ায় খুব ভাল ছিল। অসাধারণ ছিল ও। কিন্তু বেশি ভাল কিছু আল্লাহ পৃথিবীতে বেশি দিনরাখেন না। এই গাড়িটা ওর খুব প্রিয় ছিল। নিজে ডাইভিংও শিখেছিল। আজ থেকেছয় বছর পূর্বের ঘটনা। সেদিন সন্ধায় ওর বান্ধবীরগায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠান শেষ করে যখন ফিরতে ছিল তখন বাইরে ছিল আষাঢ়ের বৃষ্টি। রাস্তার অবস্থাও ভাল ছিলনা। একটা ট্রাককে সাইডদিতে গিয়ে ড্রাইভার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খালে পড়ে যায়। এ্যাকসিডেন্টে দু’জনই মারা যায়।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন চৌধুরী সাহেব। আমি নিবার্ক পাথরের মূর্তির মত তার দিকে তাকিয়ে থাকি।যন্ত্রনায় আমার গলার কাছেআটকে যায় আমার খুব কাদতে ইচ্ছে করে, কিন্তু পারিনা। হৃদয় ভাঙার কষ্টযে এত কঠিন আমার জানাছিলনা। অসহয় দৃষ্টি মেলে দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকি।
তুমি কাদছো কেন?
কাল তাহলে মেহজাবীন আমাকেকি করে ষ্টেশন হতে এবাড়িতে নিয়ে এল?
কি বলছো তুমি! আঁতকে উঠে তিনি বিস্ফোরিত নয়নে তাকান আমার দিকে। আমি গত রাতের ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা তাকে বলি। সব শুনে নিশ্চুব হয়ে যায় চৌধুরী সাহেব। কিছুক্ষন পরে বলেন, তোমার মত এমন করে অনেকেই তাকে দেখেছে। তবে আমি তা বিশ্বাস করিনি। আজকরছি। প্রতি বছর আষাঢ় মাসএলেই নাকি ওরে জীপগাড়ি নিয়ে ঘরতে দেখা যায়।
চোখ মুছে তিনি জীপ গাড়িটার দিকে তাকিয়ে বলেন, আর মায়া করে লাভ নেই। অভিসপ্ত গাড়িটাকে বিক্রি করে দিতে হবে।
তাই ভাল হবে। মাথা নিচু করে তার পেছন হাটতে হাটতেবলি।

হরর স্পেশাল
খুনি বাড়ি
ভূত বা ভৌতিক বিষয় কোনটিতেই আমার বিশ্বাস নেই। নিজের সাহসের উপর যথেষ্ট আস্থা আছে বলেই অপরিচিত এলাকার এই ভৌতিক পরিবেশে থাকতে রাজি হয়েছি। যে বাড়িটাতে আমিআছি সেটাকে ঘিরে বেশ মুখরোচক গল্প প্রচালিত আছে। এসব গল্প শুনতে বেশ মজাই লাগে। আমার কলিগরা আমার কাছ থেকে ঐ বাড়ি সম্পর্কে নতুন কোন গল্প শোনার জন্য মাঝে মাঝে আগ্রহ দেখাতো। তাদের ধারণা আমি লজ্জায় এ বাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছি না।এ বাড়িতে অনেকেই থাকার দুঃসাহস দেখিয়েছে কিন্তু কেউ নাকি টিকতে পারে নি। বাড়িয়লা এখানেথাকে না। বাড়িটি ২/৩ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। বাড়িওলা কিছুতেই ভাড়া দিতে রাজি হচ্ছিল না। আমিএক প্রকার জোরপূর্বক বাড়িটি ভাড়া নিলাম। বিরাট বড় বাড়ি। বাড়িটার বাইরের পরিবেশ দেখলেই গাঁ ছমছম করে। বাড়ির দক্ষিণ দিকে বড় বাঁশ ঝাড়, উত্তর দিকে বেশবড়সড় একটা পুকুর। পুকুরটার পানি খুবই পরিষ্কার। গরমের সময়। তাই বেছে বেছে দক্ষিণ দিকের রুমটাই থাকার জন্য ঠিক করলাম। আমাকে সব সময়সাহায্য করার জন্য গ্রামের একটা সাহসি ছেলেকে কাছে রাখলাম। ১৭ বছর বয়সি ছেলেটার নাম কাদের। সুঠাম দেহ। কোন কাজেই অনিহা নেই। সারা দিন কাজ করলেও ক্লান্তি তার শরীরে ভর করতে পারে না। ও আমার পাশের রুমটাতেথাকে। ৫-৭ দিন বেশ নির্বিঘ্নেই কাটিয়ে দিলাম। প্রথম অস্বাভাবিক ঘটনার কথা বলছি। সেদিন অফিস থেকে ফিরলাম সন্ধ্যা৭টার দিকে। এসে জামা কাপড় ছেড়ে বেসিনে গেলামচোখে মুখে পানি দিতে। পানি ছেড়ে আয়নাতে তাকাতেই মনে হল একটা আলোররেখা পিছন থেকে সরে গেল। পিছনে তাকিয়ে কিছুই পেলাম না। ভাবলাম দেখার ভুল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর একই ঘটনা আবার ঘটল। আলোটাএকদেয়াল থেকে অন্য দেয়ালে যেয়ে মিলিয়ে গেল। যেহেতু এটা ছিল আমারদেখা প্রথম অস্বাভাবিক ঘটনা তাই কেমন জানি একটা শিহরণ অনুভব করলাম। কাদেরএকটু পরেই বাজার থেকে আসল। দুজন মিলে রান্নার কাজটা সেরে খাওয়া দাওয়াকরতে সাড়ে ১০টা বেজে গেল। খাওয়া শেষ করেই ও ঘুমাতে গেল। আমি শুয়ে শুয়ে সন্ধ্যার ঘটনার পিছনে কারণ সন্ধান করছি। এমন সময় কারেন্ট চলে গেল। আমার খাটটা উত্তর দক্ষিণ ভাবে সেট করায় দক্ষিণ দিকে পা দিয়ে শুয়ে আছি। কারেন্ট যাওয়া বাইরে থেকে চাঁদেরআলো দক্ষিণ দিকের জানালা দিয়ে ভিতরে এসে একটা অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হল। জানালা দিয়ে বাইরের পরিবেশটা দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। বাঁশ বাগানের আলো ছায়ার খেলা দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। আমার একটা অভ্যাস হল শত গরমের মধ্যেও ঘুমানোর সময় হাটু পর্যন্ত কাথা টেনে ঘুমানো। ঘুমের এক পর্যায়ে টের পেলাম পায়ের উপর কাথা নেই, সরে গেছে। কাথাটা হাটু পর্যন্ত টেনে আবার চোখ বুজলাম। কিছুক্ষণ পর মনে হল কাথাটা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। শরীরের ক্লান্তির জন্য চোখ খুলতেইচ্ছা হল না। ভাবলাম মনেরভুল। কিন্তু হঠাত্‍ করেই মনে হল কাথাটা দ্রুত সরে যাচ্ছে। ধড়ফড় করে উঠে বসতেই জানালায় চোখ গেল। মনে হল একটা ছায়া দ্রুত সরে গেল। কাথার একটা অংশ জানালার মধ্যে ঢুকে আছে। হেচকা টানে কাথা ভিতরে নিয়ে নিলাম। সাথে সাথে বাঁশ বাগানের ভিতর থেকে খলখল হাঁসির শব্দ ভেসে এল।মেরুদণ্ডের উপর দিয়ে একটা ঠাণ্ডা শ্রোত বয়ে গেল। সারা শরীর অবস হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে আমি মারাযাচ্ছি। অসাড় দেহ নিয়ে আমি জানালা দিয়ে তাকিয়েআছি। এসময় দুরে বাঁশবাগানের মধ্যে একটা স্পষ্ট নারী ছায়ার সরে যাওয়া দেখলাম। হারিয়ে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে সে আমার দিকে একঝলক তাকালো। তার চাহনিতে যেন ক্রোধ ফুটে উঠেছে। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এ মুহূর্তে আমার করণীয় কি।এনেকক্ষণ যাবত চুপচাপ বসার পর একটু নড়েচড়ে বসলাম। ঠিক তখনই দেখলাম পাশের চেয়ারে ঘটে চলা অপার্থিব এক ঘটনা। চেয়ারটা ১ইঞ্চি উপর দিয়ে ভেসে ভেসে নড়াচড়াকরছে। একটা ছন্দে চেয়ারটা ঘুরছে। হঠাত্‍ করে চেয়ারটা ফুট দুয়েক উপরে উঠে গেল এবং চেয়ারটার পিছনে থাকা অদৃশ্য কেউ চেয়ারটাকে স্বশব্দে মাটিতে ছুড়ে দিল।গলা থেকে একটা ভয়াল আর্তচিত্‍কার বেরিয়ে এল। সাথে সাথে পাশের রুম থেকে কাদের ছুটে এল। কি হইছে ভাইয়া, খারাপ স্বপ্ন দেখছেন? আমি কোন কথা বলতে পারছিনা। কোন রকমে উচ্চারণ করলাম পানি।পানি খাওয়ার পরপরই কারেন্ট এসে গেল। কাদের রুমে চলে গেল। জানালা বন্ধ করে বাতি জ্বালিয়ে সারা রাত মিউজিক শুনলাম। বিষয়টা জানতে পারলে কলিগদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে যাবে। এটা ভেবেই আমিকাউকে কিছু বললাম না এমনকি কাদেরকে ও না। বিকালে বাসায় ফিরে যতক্ষণ সম্বব কাদেরের সাথে থাকার চেষ্টা করলাম।রাত ১১টার দিকে কাদের শুতে গেল। আজ জানালা বন্ধরাখলাম এবং সারা রাত বাতিজ্বালানো ব্যবস্থা করলাম। সে রাতে বিশেষ কিছু ঘটল না। তবে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম। পরের দিন বিকালে অফিস থেকে ফিরে যথারীতি বেসিনেহাতমুখ ধুতে গেলাম। ট্যাপছাড়লাম কিন্তু পানি পড়ছে না। ভাবলাম পানি নেই। কাদেরকে মটরটা ছাড়তে বলব তখন দেখি ফুল স্পিডে পানি পড়ছে। পানিতে হাত দিতেই পানি পড়া বন্ধ হয়ে গেল। ট্যাপ বন্ধ করে যখন রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি তখন কোথা থেকে একঝাপটা পানি এসে সমস্ত শরীর ভিজিয়ে দিল। আমি দ্রুত রুমে চলে গেলাম। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। কাদেরকে ডেকে একটু কথা বলায় ভয়টা হালকা কমলো। রাত ১১টার দিকে কাদের ঘুমাতে যাওয়ার পর আমারো হালকা তন্দ্রা আসলো। একটা অদ্ভূত শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। মনেহল কেউ নুপুর পায়ে হাটছে। প্রায় ১ঘন্টা জেগে শব্দটি আবার শোনার জন্য অপেক্ষা করলাম। কিন্তু কোন শব্দ শুনলাম না। এবার ঘুমানোর চেষ্টা করবো ঠিক তখন স্পষ্ট শুনলাম আমার মাথাথেকে একটা নুপুরের শব্দ পায়েরপাশদিয়ে জানালা পর্যন্ত যেয়ে থেমে গেল। সারা রাতে আর কিছুই ঘটেনি। তবেসেই অদ্ভুত স্বপ্নটা আজো দেখলাম।৬-৭ টা রাত পার হয়ে গেলো। রাত গুলোতে মাঝে মাঝে আমি গভীর কান্নার শব্দ শুনেছি। তবেপ্রতিরাতেই আমি ঐ অদ্ভুত স্বপ্নটা দেখেছি।স্বপ্নটা ছিল এরকমঃ বাড়িটার সামনে শতশত লোক। সবার চোখে মুখেআতঙ্ক। বাড়িয়লার চোখ অশ্রুসিক্ত। সে সবাইকে কিছু একটা বলছে।
এই স্বপ্নটাই প্রতিদিন দেখেছি। তবে আজ রাতের স্বপ্নটার কথা মনে হলেই গা শিউরে উঠছে, অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। আজ দেখলামঃ
বাড়িটার সামনে শতশত লোক।সবার চোখে মুখে আতঙ্ক। বাড়িয়লা অশ্রুসিক্ত চোখে বলছে আমি ওকে বাড়ি ভাড়া দিতে চাই নি, আমার কথা শোনে নি, এখানে আসার পর এত কিছু ঘটল কিন্তু আমাকে কিছুই জানায় নি”
সবাই দুটি কাফনে মোড়া লাশকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে।কারো কারো মুখে বেশ কয়েকবার সুইসাইট কথাটা শুনলাম। সবচেয়ে স্পষ্ট যে কথাটা শুনলাম সেটা হল অমাবস্যা । কেউ কেউ বলছে অমাবস্যা রাতে এ বাড়িতে এমনই হয়।
স্বপ্নটা দেখে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। কপালে হাত দিয়ে বুঝলাম জ্বর হয়েছে।থার্মোমিটারে ১০৪ডিগ্রী শো করল। অসুস্থ্য শরীর নিয়েই অফিসে গেলাম।কোন কাজেই মন বসাতে পারলাম না। থেকে থেকে আমার শুধু অমবস্যা রাতের কথা মনে আসছে। আমার এক ঘনিষ্ট কলিগকে জিগগেস করলাম ” আচ্ছা ভাই, অমবস্যা রাত কবে বলতে পারবে?”
“কেন ভুত ধরবা নাকি” বলে হাসতে হাসতে চলে গেল।
বিকালে বাসায় ফিরে দেখি কাদের বাজার করেই ফিরেছে।আমি জামা কাপড় ছেড়ে ওর কাছে গিয়ে বসলাম।
আচ্ছা এই বাড়িতে কি ঘটেছিল জানো?
হুম, এখানে একটা বড় ফ্যামিলি থাকত। রাতুল সাহেব, তার স্ত্রী, ২ ছেলেও ১মেয়ে। অভাব অনাটন সব সময় লেগেই থাকত। মেয়েটাকলেজে পড়ত। টাকার অভাবে বেতন দিতে পারত না। সংসারে সারা দিন অশান্তি লেগেই থাকত। তারপর এক অমাবস্যা রাতে সবাই এক সাথে সুইসাইট করল। বাবা মা আর মেয়েটা গলায় দড়িদিল। ছেলে দুইটাকে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল।
কাহিনিটা একনিঃশ্বাসে বলে থামল কাদের। প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য আমার দিকে তাকাল। ভয়ে চাদরটা জোরে আকড়ে ধরে আছি। কাপাকাপা গলায় জিগগেস করলামঃ
“তোমার ভয় করেনা?”
“নাঃ”
“এতো দিন এখানে থাকলে, কিছু দেখেছো?”
“হুম”
“কি দেখেছ?”
“পায়ের ছাপ। প্রায় প্রতিদিন সকালেই অসংখ্য ছোট বাচ্চার পায়ের ছাপ দেখেছি।”
“আর?”
“কান্নার শব্দ শুনতাম। বাচ্চার কান্নার শব্দ।”
“আচ্ছা, অমাবস্যা রাতে এ বাড়িতে অনেক কিছু ঘটে তাইনা?”
“হুম”
“আমাদের তো মেরেও ফেলতে পারে তাই না?”
“হুম”
আমি আর একটা কথা অনেক সাহস করে জিগগেস করলাম
“অমাবস্যা কবে?”
এ প্রশ্নে ও কিছুটা চমকে উঠল। বেশকিছু সময় পর মাথা নেড়ে বলল “জানি না”
সাড়ে ১০টার দিকে শুয়ে পড়লাম। বাইরে একটা ডাহুকপাখি ঘনঘন ডাকছে। ১১টার দিকে কারেন্ট চলে গেল। উঠে মোমবাতিটা জ্বালিয়ে শুয়ে পড়লাম। চোখে ঘুম ঘুম ভাব এসেছে। ঠিক তখনই মনে হল আমার মাথার কাছে কেউ ফিসফিস করে কথা বলছে।আমি নড়েচড়ে উঠলাম। এসময় চোখ গেল ফ্যানের দিকে। দেখি সেটার পাখা গুলো জোরে জোরে কাপছে। ঠিক এমন সময় পাশের রুম থেকে কাদেরের ভয়াল চিত্‍কার শুনে আমিও চিত্‍কার করে ওর রুমে ছুটে গেলাম। যেয়ে দেখি ওমাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর ওর কানের নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আমাকে দেখামাত্রই আমার পাজড়িয়ে ধরে বলল “ওরা আমাকে মেরে ফেলবে আমাকে বাচান”। শক্ত কিছুদিয়ে মারার চিহ্ন দেখলাম। ওকে আমার রুমে নিয়ে এসে ক্ষতজায়গাটা গামছা দিয়ে বেধে দিলাম। দুজন পাশাপাশি বসে আছি। কারো মুখে কোন কথা নেই। পাশে টেবিলে রাখা মোমবাতিটা টিম টিম করে জ্বলছে। হঠাত্‍ করে দরজার পাশ দিয়ে নুপুরের স্পষ্ট শব্দ শোনা গেল। মনে হল নুপূর পায়ে কেউ দৌড়ে গেল। ও আমার আরো কাছে সরে এল। সাথে সাথে পাশের ঘরেরআয়নাটা সশব্দ ভেঙে পড়ল।আবার নুপুরের শব্দ শোনা যাচ্ছে। আমার দরজা পর্যন্ত এসে থেমে গেল। এবার মনে হচ্ছে আমাদের দিকেই আসছে। ঝুম ,ঝুম, ঝুম। হঠাত্‍ করেই মোমবাতিটা নিভে গেল। অন্ধকারের একছত্র অধিপত্য কায়েম হল। অন্ধকারের বুকচিরে আবার নুপুরে শব্দ এদিকেই এগিয়ে আসছে। কাদের আমাকেজড়িয়ে ধরল। হঠাত্‍ কাদের গগন বিদারি চিত্‍কার দিয়ে রুম থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল।মোবাইলের আলো জ্বেলে ওর পিছনে দৌড়াতে যেয়ে কিছু একটাতে বেধে পড়েই জ্ঞান হারালাম। যখন জ্ঞানফিরল দেখি মোবাইলের টর্চটা তখনো জলছে। চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার। একটা ভেজা ফ্লোরে আমি পড়ে আছি। প্রচণ্ড দূর্বলশরীরটাকে কোন রকমে টেনে তুললাম। টর্চের আলোতে দেখি ফ্লোরটা রক্তে ভিজে গেছে। কপালে প্রচণ্ড ব্যাথা। ধীরে ধীরে কাদেরের রুমে ঢুকলাম। ঢুকে এক বিভত্‍স দৃশ্য দেখে চিত্‍কার দিয়ে বেরিয়ে এলাম। কি মনে করেঐ ঘরে আবার ঢুকলাম।ফ্যানের সাথে দড়ি দিয়ে ঝুলে আছে দেহটা। চোখ দুটো কোটর থেকে বেরিয়ে পড়েছে। জিহ্বাটা ইঞ্চি তিনেক বাইরে বেরিয়ে আছে। মাথাটা ঘুরে নিচে পড়ে গেলাম। একটা সাদা কাগজের উপর মোবাইলটা ছিটকে পড়ল।সেখানে অস্পষ্ট ভাবে লেখা“আপনি পালান, আজই অমাবস্যা” অনুভূতিহীন চোখে mobile screen এ দেখলাম battery low shut down. আবার অন্ধকার নেমে এল।অন্ধকারের বুক চিরে নুপুরের শব্দটা আবার শোনাযাচ্ছে।।।

হরর স্পেশাল
লাশ
২১-০৩-১৯৯৭
ফিরোজকে আমি বিশ্বাস করে ভুল করেছি। ওকে আমি ভুল করে খুব ভাল একজন বন্ধু মনে করেছিলাম। তাই ওকে দিয়েছিলাম আমার ভাইয়ের স্থান। আমার মাকে মা বোন কে বোন ডাকার অধিকার। ছোটবেলা থেকে ওকে আমি নিজের ভাইয়ের মত দেখেছি। কিন্তু আজ আমার কাছে সব পরিষ্কার। ও আমার ভাই নয়- ও আমার বোনার ঈজ্জত হরণ করেছে একা পেয়ে। যে বোন হেসে খেলে কাটাত ওর সময়- সে এখন কবরের ভেতর। আত্মহত্যা ছাড়া হয়ত কোন পথ খুঁজে পায়নি।
কদিন আগে সুমি আমাকে বলেছিল-
“ভাইয়া ফিরোজ ভাই আমার দিকে কেমন কেমন করে তাকায়- আমার ভাল লাগেনা”
সেদিন আমি ওকে আদর করে বলেছিলাম -
“বোকা তোকে তো ও নিজের বোনের মত দেখে।”
আমি বিশ্বাস করিনি সেই ফিরোজ যাকে আমি নিজের ভাইমনে করেছিলাম সে রাস্তা থেকে সুমিকে তুলে নিয়ে গিয়ে……
না।। আর ভাবতে পারছিনা। ওকে আমি খুন করে ফেলবো..
২৭-০৩-১৯৯৭
মাত্র আমি ফিরোজকে লোহার রড দিয়ে মেরে মাথার পেছন দিকটা থেতলে দিয়েছি। এক বাড়িতেই শেষ বেচারা। ইচ্ছা ছিল ওকে কেটে টুকরাটুকরা করে ভাসিয়ে দেব বুড়িগঙ্গায়- কিন্তু এখন ঘেন্না লাগছে। এইত কদিন আগেও কোরবানির গোস্ত কাটার জন্য আমাকে ও হাত লাগাতে হত। নিজের হাতে কতমাংস কেটেছি। কিন্তু এই পশুটার দিকে তাকাতেই আমারখুব ঘেন্না হচ্ছে।
কি করা যায় একে? বস্তা ভরে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেব নদীতে?
নাহ- ভুল হবে। কালকেই লাশ ভেসে ঊঠবে- তখন আমাকে ঠিক বের করে ফেলবে পুলিশ।
কাটাকাটির চিন্তা তো আগেইবাদ দিয়েছি।
মাটি চাপা ও দিতে পারতাম- কিন্তু এখন ঢাকা শহরে খালি যায়গা খুঁজেই পাওয়া যায়না। মাটি চাপা দেব কই?এর মাঝেই লাশের গা থেকে গন্ধ বের হওয়া শুরু হয়েছে। মাকে তিনদিন আগে রেখে এসেছিলাম আমার ফুফুরবাড়িতে। না হলে এখন মা এসব দেখলে ঠিক পাগল হয়ে যেতেন।
কি করি এখন?
২৮-০৩-১৯৯৭
টানা দুই দিন হতে চলল আমি কিছু খাইনি। লাশটাকে রেখেছি বাথরুমে ।
একটু আগে দুইবার বমি হয়েছে আমার। ফুফুর বাড়ি থেকে মা ফোন করেছিল। এখানে আসতে চায়। কিন্তু এখন এখানে আসলে আরেক কান্ড বাধবে। তাই এখন আসতে না করে দিয়েছি।
এখন অনেক রাত। এত রাতে শুধু একটা বাড়িতেই আলো জ্বলে। সেটা হল এলাকার নেতা সংসদ সদস্যের বাড়িতে। উনি সারা রাত জেগে দিনে ঘুমান। ভোটের সময় দেখা হয়। তারপর উনি হাপিস হয়ে সারা বছর ঘুমান। এভাবেই চলছে। আমি কি উনার কাছে যাব? গিয়ে বলব যে আমি একটা খুন করেছি?
পুলিশকে ফোন করেছিলাম। বিশ্বাস করেনি আমার কথা। তাই এখন আমাদের নেতাই শেষসম্বল। আমি উনার কাছে গে্লাম……
১৫-০৪-১৯৯৭
আজ আমার দ্বিতীয় মিশন। কিমিশন জানেন? খুন করার মিশন। বিরোধী দল হরতাল দিয়েছে। তাই এখন একটা ইস্যু দরকার যাতে সরকারী দল ও বলতে পারে যে তাদের ওএকজন মারা গেছে। আমাকে সেদিন রাতে নেতা চুপচাপ উনার বাসায় থাকতে বললেন। তারপর দিন থানা থেকে ওসি সাহেব আসলে উনি সব চেপে যান। বাসা থেকে লাশ উদ্ধার হয়। কিন্তু রেডিও টিভি পর্যন্ত খবর পৌছায়না।
দিন কয়েক এর জন্য আমাকে আরেক টা এলাকায় পাঠানো হয়। সেখানে আমি বেশ ভাল ছিলাম। চিকিৎসা করানো হল আমার। সুস্থ হলে আমাকে আমার প্রথম মিশনে পাঠাল নেতা। আমাকে এক জন পাতি নেতাকে খুন করতে হবে। খুনের পর লাশ ও গুম করতে হবে।
সেবার আমি ফাইভ স্টার নিয়ে গিয়েছিলাম খুন করতে।হাত অনেক কেঁপেছিল। মারারপর লাশ টা গুম করতে ও অনেকঝামেলা হয়েছিল। তাই এবার আমাকে আমার পুরোনো অস্ত্রদেয়া হল। সেই লোহার রড। যেটা দিয়ে আমার প্রথম শিকার ছিল ফিরোজ। আমাকে শুধু মাথার পেছন থেকে বাড়ি মেড়ে মেরে ফেলতে হবেসেই পাতি নেতা কে।
নাহ-থুঃ ফিরোজ নামটা মনে আসতেই মুখে থু থু চলে আসল। আমাকে এগিয়ে যেতে হবে খুব আসতে আসতে। সামনেবসে থাকবে খুনি।
অনেক ক্ষন ধরে বসে আছি।কিন্তু কেউ আসছেনা। কি হল- আমাকে একটা খুন করতে বলা হল- সামনে বসে থাকবে খুনি। লম্বা পাচফুটচার- কালো চেহারা। চুল কোঁকড়া। এমন একজন। ও নেতাআবার সবুজ শার্ট ও পড়ে আসবে। এইত আমাকে যা বলা হয়েছে। কিন্তু সে রকম তো কেউ আসছে না। যেখানে বসে আছি- পুরো এলাকা শুনশান। কখন যে আসবে সেই শিকার- আমি শিকারী তাকে খুন করবোকে জা্নে…
ওই ত দেখা যাচ্ছে শিকার আমার- সোনা তুমি আসতে অনেক দেরি করে ফেলেছ। ওই ত- বাইকে করে এসেছে। পাতি নেতা বলে কথা। ঐযে হাতে লাল স্কার্ফ- লাল স্যান্ডো গেঞ্জি- উচ্চতা মাপা যাচ্ছেনা। তবে মাথারচুল কোঁকড়া। আমাকে পেছন থেকে যেতে হবে। পেছন থেকেমাথার বামে এলাকায় জোড়সে একটা মারলেই বেচারা শেষ।
কিন্তু একি? ও যাচ্ছে কোথায়? আমাকে না বলা হল ও অনেক ক্ষন থাকবে। আমাকে তাহলে কি ব্লাফ দিল ওরা? এখন আমি কি করবো? আমি কি ফিরে যাব? চিন্তা করতে করতে ঘুরতে গিয়েই দেখি আমার পেছনে সেই পাতি নেতা।
দূর থেকে আমি তাঁর চোখ দেখিনি। এখন দেখতে পাচ্ছি। টকটকে লাল। আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ও তাকিয়ে আছি ওর দিকে। আমার হাতে লোহার রডটা ধরা। কিন্তু আমি মারারচিন্তা করার আগেই দেখতে পেলাম একটা সাদাটে ঝলক- তারপর সব ফাঁকা …..
………………………………………………………………………………………………………………………………….
দুই দিন পর একটা লাশ নিয়ে মিছিল করছে দুই টা দল। পুলিশের সাথে ধাওয়া পালটা ধাওয়ায় জখম হয়েছে শতাধিক। দুই দলের সব নেতা সেই লাশকে নিজেদের দলের লোকের লাশ বলে দাবি করছে। কিন্তু সেই লাশের আসল পরিচয় কেউ জানেনা………

অচিন্তন ভুত
রাজসাক্ষী
অতনুর পুরো নাম শিহাব শাহিন অতনু, ওর নানার রাখানাম। ওদের বাড়ি উত্তর বঙ্গে, বর্ডারের কাছে। জায়গাটা ভয়াবহ রকমের দুর্গম। ইলেক্ট্রিসিটি তো দূরের কথা, একটা খাম্বাও নেই। যাতায়াতের মাধ্যম পায়ে হাঁটা পথ। প্রায় ১০মাইল হাঁটলে পাকারাস্তা পাওয়া যায়। অতনুর এই অজপাড়াগাঁয়ে জন্ম হলেওওর আধুনিক নামই বলে দেয় ওদের পরিবার গ্রামের আর ১০টা পরিবার থেকে আলাদা। ছোটবেলা বাবা মারা যাওয়ারপর নানা বাড়িতেই …বেড়ে ওঠে। ওর নানারা ওপারের লোক, যুদ্ধের পর এপারে চলেআসে। পরিবারের নামটাই যা ছিল, এছাড়া একেবারে নিঃস্ব হয়ে এপারে আসতে হয়। ও আবছা ভাবে জানে যে নানারা নাকি শুদ্ধ ব্রাহ্মণ ছিলেন, পরে ধর্মান্তরিত হয়েছেন।
ওর পরিবারে ৩টা আজব ঘটনা ঘটেছে। ওর বড় মামা, মেজ খালু আর মেজ নানা তিনজনই খুন হন। বর্ডার এলাকায় এসব স্বাভাবিক ঘটনা, তাই কোন থানা পুলিশ হয়নি। লাশপাওয়ার পর ২-৪ দিন চোখের পানি ফেলে আবার কাজে মন দিয়েছে সবাই। এইসব ঘটনা যখন ঘটে তখন ওর বয়স ১১, আজ থেকে ১৭ বছর আগের কথা। তারপর ও বড় হয়ে এখন ঢাকায় থাকে। তিন দিন হল গ্রামে এসেছে শেষ যেটুকু ভিটামাটি ছিল তা বেঁচে দিতে।
শনিবার রাত। গ্রামে এখন এক ছোট মামা ছাড়া আর কেউ থাকে না। বিশ রুমের একটা টিনশেড দোতলা বাড়ি পুরো ফাঁকা পড়ে থাকে। ও উপরের ঘরটা নিলো। রাতে বেশ চাঁদদেখতে দেখতে ঘুমানো যাবে।গ্রামে কতদিন রাত কাটানো হয়না।
রাত তিনটায় একটু টয়লেট পেলো ওর। এখানের একটা সমস্যা হচ্ছে টয়লেট করতে নিচে নামতে হয়। কি আর করা,নেমে টয়লেট সারলো। কলপাড়েএসে হাত ধুতে যাবে, দেখল দুজন লোক বসে আছে নিচতলারবারান্দায়। কিছু নিয়ে তর্কাতর্কি হচ্ছে ওদের মধ্যে বোঝা গেল। খেয়াল করলো টর্চ আনতে ভুলে গেছেও। কিন্তু এত রাতে এখানে বসে ঝগড়া করছে কারা? ভালমত তাকালো, দেখলো একটা লোক উঠে দাঁড়িয়েছে। তীব্ররেগে গেছে সে, আচমকা একটা ছুরি বের করে আমুল বসিয়ে দিল সে অপর লোকটার বুকে। পিচ করে একটা শব্দ হল। আঁতকে উঠল ও, খুন!! দ্রুত লুকানোর জায়গা খুঁজল ও, পেলোনা। ওদিকে লোকটা এদিকেই এগিয়ে আসছে। মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল ও। কিন্তু লোকটা ওর চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল, ওর দিকে তাকালও না। লোকটা একটু দূরে ডোবার ধারে গেলে চাঁদের আলো পড়লো লাশটার মুখে। চাঁদের আলোয় চিনতে কোন সমস্যা হলনা। বড় মামা!! লাশটা আর কারো না, বড় মামার!!
সারা গা ঝিমঝিম করে উঠল ওর। দ্রুত ছুটল বাম পাশেরঝোপের দিকে, ওখানে বড় মামার কবর আছে। গিয়ে যা দেখল তা এক কথায় অবিশ্বাস্য।
কবরটা খোঁড়া, চারিদিকে মাটি ছড়িয়ে আছে, একটা রক্তমাখা ইট পড়ে আছে পাশে!!
গ্রামের লোকদের ডাকে জ্ঞান ফেরে অতনুর। কবরের পাশে পড়ে আছে ও। চারিদিকেঅনেক লোকজন, এক এক জনের একএক জিজ্ঞাসা। তার মাঝেই কবরের দিকে তাকাল ও, সব সুস্থ, স্বাভাবিক, শান্ত। কবরের মাটি দেখে সহজেই বোঝা যায় গত ১৭ বছরে কেউ তা খোঁড়েনি। তবে কি দুঃস্বপ্ন দেখছিল ও? তাই হবে হয়ত। ধীরে ধীরে লোকেরকাঁধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালও, তখুনি চোখ আটকাল একটা ইটের দিকে। গোল, একপাশে রক্ত মাখা। বুকটা ছাঁৎ করে উঠল ওর! ঠিক তখুনি, একটু গড়িয়ে পাশের ডোবাটায়পড়ে গেলো সেটা।
এই ঘটনার ২ ঘণ্টা পরেই বাসে করে ঢাকায় চলে আসে ও। কাউকে কিছু জানায় না। সবকিছু একটা দুঃস্বপ্ন বলে ভেবে নেয়।
দুই দিন পর। বাসায় কেউ নেই। একা ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল ও, এমন সময় কারেন্ট চলে গেলো। মোম জ্বালাতে রান্নাঘরে যায় ও, আইপিএস টাও আবার নষ্ট।
ফিরে এসে দেখে ড্রয়িংরুম ভর্তি ৬-৭ জন লোক। সবার মুখে লাল কাপড় বাঁধা। একটা লোককে বেঁধে রেখেছে তারা। মোমের আলোয় চিনতে কষ্ট হয়না, ওটা মেজ খালু!!!
হটাৎ লোকগুলো ঝাঁপিয়ে পড়েখালুর উপর। মুহূর্তে টুকরো টুকরো করে ফেলে ছুরি দিয়ে। শুধু ধড় আর মাথাটা রেখে বাকি হাত,পা আলাদা হয়ে যায়। এক ফোঁটা রক্ত ছিটে এসে লাগে ওর শার্টে। ওখানেই জ্ঞান হারায় ও।
জ্ঞান ফেরে পরদিন হসপিটালে। ঘরে ফেরার পর দেখে সব ঠিক আছে, তবে তার শার্টে রক্তের দাগ লাগলো কিভাবে, স্ত্রীর এই প্রশ্নের জবাব সে দিতে পারলনা।
চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখন একটামানুষিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও। তীব্র কঠিনওষুধ খেয়ে স্রেফ বেঁচে আছে। দুটি মৃত্যু ঘটনার রাজসাক্ষী হয়ে, তৃতীয় ঘটনাটি ঘটার অপেক্ষায়।

ধারাবাহিক স্পেশাল
ভয়ঙ্কর দ্বীপ (প্রথম পর্ব)-মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া
এক .
ওয়াও ...
গাড়িটার জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে চেচিয়ে উঠল রুপা ।বিশেষ একটা কাজেই এই দ্বীপটাতে এসেছি আমরা ।আমি অভি ,শিলু এবং রুপা ।এই তিনজন ।দ্বীপটা ঠিক কোন মহাদেশে পড়েছে তা অজানা ।কেউ বলে এশিয়া আবার কেউ বলেআফ্রিকা ।দ্বীপটারঅবস্থানও এমন যে সাত মহাদেশের একটা বললেই মেনে নিতে হয়।মোটা ৫২০০মাইল বিস্তূত দ্বীপটার মোট জন্যসংখ্যা মোটে ৭০০জন ।খুবই কম ।কিন্তু মাত্র ২বছর আগেও এই দ্বীপের জনসংখ্যা ছিল দুই হাজারেরও উপর ।রহস্যজনক ভাবে হঠাত্‍ করে মারা যেতে থাকে তারা ।অনেকেই পালিয়ে যায় অন্য কোথাও।খবর পেয়ে পাশের দ্বীপ থেকে পুলিশ এনে পাহাড়াও বসেয়েছিল ওরা ।রাত পেরোতেই সবার মরদেহ পায় গ্রামের লোক ।
ইন্টারেস্টিং !!
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি সবাই ।এলোমেলো উচু নিচু রাস্তা দিয়ে ছুটে চলেছে গাড়িটা ।ছোট্ট গাড়ি ।সামনে সিটে ড্রাইভারের পাশে বসেছি আমি আর আরফানচাচা ।পিছনে শিলু আর রুপা ।দুই দিকে দুই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ওরা ।শিলুর দিকে তাকালাম ।বাইরে তাকিয়ে আছে ও ।তবু জানি ওর বাইরে মন নেই ।সামনের ফাঁকা মাঠ ,গাছ-পালা ,ছোট ছোট পাহাড় কিছুই ভাসছেনা ওর চোখে ।সুন্দর এই দৃশ্য থেকে তার মনে জেগে উঠছেনা কোন ভাব ।আমি জানি ।জানি আমি কি ঘটছে তার মনে-চোখে-মগজে ।ওর চোখে ভাসছে ছবিতে দেখা সেই বিভত্‍স লাশ আর মগজে চলছে চিন্তা ।খুঁজে চলেছে রহস্যের কিনারা ।সাতরিয়ে উঠতে চায় রহস্য সাগরের পাড়ে ।কিন্তু ক্রমশ যেন চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে তা ।
গাড়িটা ছুটে চলেছে তো চলেছেই ।রাস্তার যেন আর শেষ নেই ।আকাবাক পথপেরোতেই সময় লাগে বেশি।ইতিমধ্যে কয়েকবার দেখলাম শিলু ঘড়ি দেখছে ।তারমানে বিরক্ত ধরে গেছে ওরও ।উচ্ছলময়ী রুপাও দেখলাম বেশে তিতিবিরুক্ত হয়ে আছে ।কপালটা ভয়ঙ্করভাবে কুচকে আছে ওর ।আমি চাইতেইমুচকি হাসল ।জোর করে আনা হাসি ।কৃত্রিমতাকে এড়ানো অতটা সহজনা ।আমরা সবাই চাই প্রকৃতিকে ছুড়ে ফেলে নিজের মতো চলতে ।কিন্তু প্রকৃতির গোলকধাধায় কখন যে আমরা নিজেরাই ধরা দিই তা বুঝতেই পারিনা ।
পিছন থেকে মুখ ঘুরিয়ে আবার সামনে তাকালাম ।সামনে লম্বা পথটা একটা পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেছে ।মনে হচ্ছে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে তৈরী রাস্তা ।জীর্ণ শীর্ণ অবস্থা এখন ।এটার মধ্য দিয়েই যেতে হবে নাকি ?
ভাবতেই কাঁটা দিয়ে উঠল শরিরে ।
:-ভেঙ্গে পড়বে না তো... ?
নিজের অজান্তেই কথাটা বেরিয়ে এল আমার মুখ থেকে ।
:-ফিলু খ না ফিলুখন তোয়াছ !
ড্রাইভার বলল ।কি বলে এসব ।কিছুই বুঝতে পারলাম না ।
:-ও বলেছে ভয়ের কিছুই নেই ।ভাঙ্গবেনা ওটা ।
আমাদের অনুবাদ করে শুনাল আরফান চাচা ।ওনি প্রায় পাঁচ বছর ধরেই আছেন এখানে ।চুনের ব্যবসা ওনার ।এই দ্বীপে ভাল চুনা পাথর পাওয়া যায় ।তাছাড়া গাছপালাও বিপুল পরিমাণে তাকায় চুল্লির খরচও পড়ে কম ।পরিবহণ ব্যবস্থা আর শ্রমিকের মূল্য তালিকাও সহনীয় পর্যায় ।বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা এই দ্বীপের ধারেকাছেও আসতে পারেনি ।সুতরাং ব্যবসার জন্য এরকম স্থান ই উপযুক্ত ।
কিন্তু বর্তমানে চাচার ব্যবসা ততটা ভালো নয় ।চুন উত্‍পাদন এক প্রকার বন্ধই ।যাও কয়েকটি চুল্লি আছে সেগুলোতেও চুন উত্‍পাদন কম আর যা উত্‍পাদিত হচ্ছে তারও মান ভাল নয় ।
ভাল হবেই বা কি করে ।আজকাল কোন শ্রমিকই রাতের বেলা চুল্লিতে থাকতে রাজি নয় ।সন্ধার পরেই দরজায় খিল দিয়ে বসেসবাই ।থাকবেই বা নাকেন ?সবাই জানে রাতে আধারে বাইরে থাকা মানেই মৃত্যু ।বিভত্‍স ভাবে মৃত্যু ।
এই রহস্যে কারনেই চাচা আমাদের খবর দিয়েছেন ।আর রহস্যে যেখানে আমরাও তো সেখানে ।সুতরাং সোজা জাহাজে চরে মস্ত একটা ভ্রমণ সেরে এখানে চলে এলাম ।
দুই অবশেষ শেষ হল রাস্তা।একটা পুরনো বাংলোর সামনে এসে থামল গাড়িটা ।বাংলোটা অনেক বেশিই পুরোনো ।এর মধ্যেই কি সেদবেনাকি আমাদের ?
ভাবতেই আত্‍কে উঠলাম ।এর মধ্যে থাকলে নির্ঘাত্‍ অক্কা পেতে হবে ।ভূতদানোদের কারখানা হবে এটা ।যদিও ভাগ্যের জোড়ে তাঁরা হামলা না চালায় তবে সে যাত্রা বেচে গেলেও ঝড় ঝামটায় অবশ্যই ভেঙ্গে পড়বে ওটা ।
: এইটার মধ্যেই থাকতে হবে নাকি ?
গাড়ি থেকে নেমে সরাসরি চাচাকে প্রশ্ন করলাম ।
: না না সামনে আরেকটাবাংলো আছে ।বেশ ভাল আর নতুন ।ওটাতেই থাকবি তোরা ।
যাক বেশ সস্তি পেলাম।রুপা আর শিলুও নেমেপড়েছে গাড়ি থেকে ।শীত শীত লাগছে কিছুটা ।দ্বীপটা কি শীতে প্রধান নাকি ? কে জানে হয়তো তা ।
: চল তাহলে । সন্ধা হয়ে আসছে ।
তাড়া দিলেন চাচা ।
: এই বাংলোটা কিসের ?
হাটতে গিয়েও থেমে গেলাম আমি ।শিলুর প্রশ্ন ।চাচাকেই করল ।
: সেটা পরে জানা যাবে। এখন চল ।
চাচার কথায় দ্রুততা ।তাড়া ।চাচা বলেছে চুন শ্রমিকদের রাতের বেলায় ধরে বেঁধেও বাইরে রাখা যায়না ,আমার তো মনে হচ্ছে চাচাকেও কোন প্রকারে বাইরে রাখা যাবেনা ।ভয়টা চাচার মধ্যেও ঢুকে গেছে নির্ঘাত্‍ ।আর ঢুকবেই বা না কেন ? চোখের সামনে পর পর কয়েকটা বিদঘুটে লাশ দেখলে যে কেউই ভয় পাবে ।ভয় পেতে বাধ্য।
এগিয়ে চললাম আমরা ।আধো আলো আর আধো অন্ধকারে একটা ঘুপছি মতো জায়গা দিয়েছি চলেছি । চাচার হাতে লাইট ।তিনিই রাস্তা দেখিয়ে আগে আগে চলেছেন ।
তাঁর পিছনে আমি ।আমার পিছনে রুপা আরসবার পিছনে শিলু ।ঘাড় ঘুরিয়ে একবার পিছনে তাকালাম ।সন্ধার আধো আঁধারে মাথায় হ্যাট পড়ায় অদ্ভূত দেখাচ্ছে ওকে ।
অসাধারন বাংলো ।এই মান্দাতার আমলের দ্বীপে এমন একটা ভবনআশায় করা যায়না ।আমিতো আশা করিইনি রুপারমুখ দেখে মনে হচ্ছে ও ও আশা করেনি ।শিলুর দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝা গেলনা ।
বাংলোটাতে চারটে রুম ।একটাতে থাকে কেয়ার টেকার তার পরিবার নিয়ে ।আর পিছনের রুমটাকে আপাতত চাচা থাকেন ।দ্বীপে তাঁর বাড়ি অর্ধনির্মিত হয়ে পড়ে আছে ।ব্যবসায় মন্দা চলছে বলে ওটারকাজ শেষ করতে পারছেননা আর ।
বাকি দুটা রুম দখল করে বসলাম আমরা ।একটাতে রুপা ।আর একটাতে আমি আর শিলু ।বেশ বড় বড় রুমই ।আগে থেকেই সব ঠিক করা ।সাফ সুতরো ঘর ।দেখে বুঝায় যায়না ঘরদুটো জন্মলগ্ন থেকে খালি পড়ে ছিল ।
যাহোক খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়লাম ।সারাদিনের ক্লান্তিতে সাথে সাথেই ঘুম নেমে এল চোখে ।
তলিয়ে গেলাম ঘুমের রাজ্যে ।
ক্রমশ থেকে ক্রমশ গাঢ় একটা ঘুমের রাজ্যে ।

তিন হঠাত্‍ করেই ঘুম ভেঙ্গেগেল আমার ।রাত নিঝুম ।বাইরে একটানা রি ..রি..রি ..রি ঝিঝি পোকার ডাক ।বুঝতে পারলাম না কি জন্য ঘুম ভাঙল আমার ।
চোখ বুঝে আবার ঘুমাবার চেষ্টা করলাম ।হয়তো চোকটা লেগেও এসেছিল ।ঠিক সে সময় ,একটা শব্দ শুনলাম ।ভয়ঙ্কর একটা শব্দ ।একটা অমানবীয় আর্তচিত্‍কার ।কানের এপাশ - ওপাশ করে বেরিয়ে গেল শব্দটা ।ভয়ে আত্‍কেউঠলাম আমি ।ঘুম একেবারেই চলে গেল ।সেইসাথে খেয়াল হল আমি কোথায় আছি ।একে একে মনে পড়ল সব ।জাহাজে ভ্রমন,চাচার মুখ আর ভয়ঙ্কর এইদ্বীপটার কথা ।প্রথমেই মনে এল শিলুর কথা ।পাশের বেডেই শুয়েছে ও ।পাশ ফিরে ওদিকে তাকালাম ।একরাশ কালো অন্ধকারে কিছুই ঠাওর করতে পারলাম ।কয়েকবার চোখ বুঝে আবার তাকালাম ।চোখ ঘসে অন্ধকারটাকে চোখে সইতে দিলাম ।এবার আবছা আবছা দেখা গেল শিলুকে ।নাকে মুখে কাথাদিয়ে ঘুমোচ্ছেও ।বেঘোরেঘুমোচ্ছে ও ।এত বড় একটা শব্দ কি কানে যায় নি ওর?
নাকি ,শব্দটা ছোটই ছিল ।হতে পারে বাংলোটার আশেপাশেই হয়েছে শব্দটা ।একে সজাগ ,তারপর নিঝুম রাত ।তাই হয়তো মানবীয় আর্তনাদটা অতিমানবীয় হয়ে ধরা দিয়েছে আমার কাছে ।
নিজেকে বোঝ দেবার চেষ্টা করলাম ।আমার ঘুমুতে চেষ্টা করলাম ।কেমন একটা অসস্থি লাগতে শুরু করল আমার ।মনে হচ্ছে কেউ যেন ঝলঝল চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।ঘোত্‍ ঘোত্‍কয়েকটা শব্দও শুনলাম ঘরের মধ্যে ।তারপর হাটচলার শব্দ ।ধীরে ধীরে সরে গেল ওটা ।একটা ক্যাচ করে শব্দ হল ।মনে হল কেউ দরজা খোলে বাইরে বেরিয়ে গেল এইমাত্র ।তারপর ক্রমশ হারিয়ে গেল হাটচলার শব্দটা ।ঘুমে ঢোলে পড়লাম আমি ।
: এই অভি !অভি ! আরে উঠ !
রুপার ডাকে ঘুম ভাঙলো আমার ।চোখ মেলেই ওর বিরুক্তি মাখা মুখটা দেখলাম ।
: পারিস বটে দুজনে ।মা গো! এত ঘুম কি কোন মানুষে ঘুমায় ?
দুজন মানে ? কি বলছে রুপা !
মুখ ঘুরিয়ে শিলুর বেডেরদিকে তাকালাম ।ঘুম ঘুম চোখে বসেছে ও ।
: এত সাত সকালে দরজাটা খোলে এই দাজ্জালটাকে ঘরে আনলি কেনরে তুই ?
শিলুর দিকে প্রশ্নটা ছুড়ে দিলাম আমি ।
ঘোত্‍ করে একটা শব্দ করল রুপা ।ভয়ে মুখের দিকে তাকালাম না ওর ।তাকালে দেখতাম রেগে টংহওয়া একটা মুখ ।
: আমি কখন খোললাম আবার?আমিত এই মাত্র উঠলাম ।
: তাহলে ?
প্রশ্নোবোধক দৃষ্টিতে রুপার দিকে তাকালাম আমি।সে ঘরে ঢুকলো কি করে ?
: তাহলে আর কি ? দরজা না দিয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিলে তোমরা ।আমি এসে দরজা খোলাই পেয়েছি ।
: মানে ? এবার নড়েচড়ে বসল শিলু ।
দিব্বি মনে আছে আমাদের ।দরজা ভাল করে বন্ধ করেই ঘুমিয়ে ছিলাম আমরা।
: ছার !ফেরেস হয়ে খাইতে আয়েন ।
দরজার বাইর থেকে ভেসে এল কথাটা । কেয়ার টেকারের গলা ।
: আসছি !যাও তুমি !
বলল রুপা ।তারপর আবার আমাদের মুখের দিকে তাকাল ও ।বোকা বোকা একটা দৃষ্টি ওর চোখে ।হয়তো বুঝতে পারছেনা কিছুই ।
: শিলু ...
রাতের সেই চিত্‍কার আর ঘরে হাটাহাটির শব্দের কথাগুলো জানাতে গেলাম ওকে ।
কিন্তু ও হাত দিয়ে থামিয়ে দিল আমাকে ।
: চল ফ্রেস হয়ে খেয়ে আসি ।
অদ্ভূত একটা অবহেলা দেখলাম ওর চোখ মুখে ।
নিশ্চয় কিছু আচ করেছে ও ।হয়তো বা এসব কথা বলা এখন ঠিক হচ্ছেনা ।

ঈদ সংখ্যার পরের সংখ্যায় দ্বিতীয় পর্ব ...

ভৌতিক অভিজ্ঞতা
কে ওখানে ! -আশিকুর রহমান
(১)
যারা ভুত বিশ্বাস করেন না এ লেখাটি তাদের জন্য নয় । কেননা এটা একটি ভুত সংক্রান্ত লেখা বা ঘটনা ।যা কিনা আজো আমার কাছে জীবন্ত । এখন ও আমি মাঝ রাত্রিরে জেগে বসে থাকি ভুতের ভয়ে । ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে । কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এইতো সেদিন ঘটলো ঘটনাটি । ঘটনাটির কথা মনে হলে হাত পা আমার এখনও ঠান্ডা হয়ে যায় ।
আমারা তখন পুরানো ঢাকাতে থাকি । বাবা সরকারি চাকুরি করেন । বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করেই আমরা বড় লোক হয়ে গেলাম । তা ও বাবার এক ফুপুর কল্যাণে ।বাবার বড়লোক ফুপুর মৃত্যুর পর তার বিষয় সম্পতির ছোট একটি অংশ আমাদের বড়লোক করে দিল রাতারাতি ।
আমারা ভাড়া বাসা থেকে আমরা নিজেদের বাড়ীতে উঠলাম । তাও আবার তিন তলা বাড়ী । ৬টা ভাড়াটিয়াসহ বিশাল বাড়ী । আমরা উঠেছি দোতালায় । সারা দিন ভাই বোনদের সঙ্গে আনন্দ করে সময় কাটে । বাড়ীর সামনে দু’টো বড় বড় মেহগনি গাছ । তার একটিতে ছোটকাকু দোলনাটানিয়ে দেয়াতে আমাদের আনন্দের মাত্রা বেড়ে গেছেকয়েক গুন । সারা দিন হৈই চৈই । বিকেল বেলা সবাই মিলে ছাদে খেলা করতাম । এতো বিশাল ছাদ আমি আগে কখনও কল্পনাও করতে পারতামনা তা আবার নিজেদের । ছাদ সাধারনত মা তালা দিয়ে রাখতেন । শুধু বকেল বেলায়খুলে দিতেন । সন্ধ্যার পরশুধু পড়তে বসতাম । রাতে খাওয়া দাওয়ার পর কাকুর কাছে গল্প শুনতে বসা । কাকু নিত্য নতুন ভূতের গল্প বলে আমাদের ভয় পাইয়েদিতেন । মাঝে মাঝে মাও আমাদের সঙ্গে এসে যোগ দিতেন । গল্প শেষে মা প্রায়ই হেসে বলতেন । ভুত বলে কিছু নেই ।
দেখতে দেখতে আমার এস এস সি পরীক্ষা চলে এলো । ভাল রেজাল্ট করতে পারলে বাবা রেসিং সাইকেল কিনে দেবো ।তাই রাত জেগে পড়া শুনা করছি । ভাল রেজাল্ট করার চাইতে আমার সাইকেলটার দিকেই বেশি মনোযোগ । বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেলেও আমি সারা রাত জেগে পড়ি । মাঝে মাঝে ঘরের ভেতর হাটাহাটি করি । বেশি খারাপ লাগলে ছাদে চলে যাই । কাকুর ভাষ্য মতে রাতের একটি ভাষা আছে । তাছাড়া রাতের আকাশ ও আমার দেখতে খুব ভাল লাগে । বিশাল রহস্যময় আকাশের শৈল্পিক কারুকার্য আমাকে সব সময় মুগ্ধ করে ।
(২)
সেদিন ছিল পূণিমার রাত । রাত প্রায় তিনটা বাজে । আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম । বাসার সবাই ঘুম। হঠাৎ ছাদ থেকে ধুপ ধুপ শব্দ ভেসে এলো । বিকেল বেলায় আমরা ছাদে খেললে যেমনটি শব্দ হয় ঠিক তেমনটি । আমি বেশ অবাক হলাম , এতো রাতে ছাদে আবারকে খেলছে !
কাকু আর আমি একই রুমে থাকি । বেশ কয়েকবার শব্দ হওয়ায় কাকুকে ডাক দিলাম ।কাকুর উঠার নামটি নেই । নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে । অনেকক্ষন ডাকা ডাকি করার পরে কোন রকম মাথা তুলে বললেন তুই গিয়ে দেখনা কে?
ইদুর টিদুর হবে হয়তো । বলে কাকু আবার নাক ডাকতে শুরু করলেন । এদিকে ছাদেরশব্দ দৌড়া দৌড়ি পর্যায় পৌছে গেছে । আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম আমার তেমনভয় করছেন । বরং দেখতে ইচ্ছে করছে এতো রাতে ছাদেকে দৌড়া দৌড়ি করছে ।
আমাদের রান্না ঘরের দেয়ালে মা ছাদের চাবি ঝুলিয়ে রাখেন । আমি ঘর থেকে বেড় হয়ে ছাদের চাবি নিলাম । আমাদের ফ্লাট থেকে বেড় হতেই ডান দিক দিয়ে উঠে গেছে ছাদের সিঁড়ি । প্রতিটি বারান্দায় বাতি জ্বলছে । তিন তলার বারান্দা গুরে ছাদের সিঁড়ি । আমি ছাদের সিঁড়িতে উঠার পরও আমার কোন ভয় লাগছিল না । তিন তলা থেকে ছাদের ছাদের দরজা দেখা যায় । বন্ধ দরজা । তালা দেখা যাচ্ছে । তবে ছাদে শব্দ করছে কে ?
আমি ছাদের তালা খুলে ফেললাম । চাঁদের আলোয় ছাদভেসে যাচ্ছে । ছাদে বেড় হলেই সামনে রবিন চাচ্চুদের ৪ তলা বাড়ী । রবিন চাচ্চুদের বাসা থেকেআমাদের পুরো ছাদটা দেখা যায় ।
ছাদের এ মাথা ; ও মাথা বেশ ভাল করে দেখলাম কেউ নেই । আমি বেশ অবাক হলাম । তা হলে শব্দ করলো কে ? পানির ট্যেন্কির উপড় দেখলাম । না । কেউ নেই । এবার কিন্তু আমার গা বেশ কেমন ছমছম করছে । আশে পাশের বাড়িগুলোর দিকে বেশ কয়েকবার তাকিয়ে আমি নীচে নেমে এলাম ।
ঘরে এসে ডকডক করে দু গ্লাস পানি খেলাম । এমনিতেই আমি বারবার হিশু পায় বলে রাতেরবেলা পানি কম খাই । কিন্তু সেদিন তেস্টা যেনো আর মিটছিলো না । ২য় গ্লাস পানি শেষ করার মুর্হুতে আবার ধুপ ধুপ শব্দ ভেসে এলো । আমি গ্লেলাসটি রেখে উঠে পড়লাম। ছাদের সিঁড়িতে এসে দেখিছাদ তালা মারই আছে । দরজা বন্ধ । কিন্তু দরজার ওপাশেই কে যেনো দৌড়াচ্ছে । আমি ভয়ে ভয়ে তালা খুলে ছাদে এলাম । আবারও চাঁদেরআলোয় চোখ ভেসে গেলো । আমি পুরো ছাদ বেশ ভাল করে দেখলাম । না । কেই নেই । নিজেকে কেমন বোকাবোকা মনেহলো । নিজেকে শান্তনা দিলাম হয়তো রাত জেগে পড়ারফলে উল্টা পাল্টা শব্দ শুনছি ।
ছাদ তালা দিয়ে নামার জন্যপেছন গুড়তেই চমকে উঠলাম ।হাতের ডান পাশে সিঁড়ির শেষ মাথার ছাদের দেয়াল ঘেষে কে যেনো বসে আছে । ভয়ে আমার বুক তখন হাপারেরমতো উঠা নামা করছে । আমি কোন রকম জিজ্ঞষ করলাম । কে ! কে ওখানে ? হালকা আলো স্পষ্ট দেখা যাচ্চে দু’হাটুর মাঝ খানে মাথা রেখে কে যেনো বসে আছে ।
ছোট্র শরীরটা দেখে আট দশ বছরের বাচ্চা বলে মনে হলো। আমি কানে তখন কিচ্ছু শুনছি না ।
চোখেও ভাল করে দেখছি বলে মনে হলো না ।
শুধু তাকিয়ে আছি । আর জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে জিজ্ঞেস করছি কে ! কে ওখানে ?
বেশ কয়েক বার চিৎকার করতেই সামনে বসে থাকা কায়াটা হাটু থেকে মাথা তুলে আমার দিকে তাকালো । ভয়ে আমি চমকে উঠলাম । জাপানি ভুতের সিনামায় দেখা আট নয় বছরের একটি ছেলে আমার দিকে হাটু থেকেমুখ তুলে তাকালো । বড় বড় দুটো চোখ । সমস্ত মুখ কেমন ফেকাসে হয়ে আছে ।
অনেকক্ষন পানিতে ভিজলে চামড়া যেরকম ফেকাসে হয় তেমনটি ।
আমি আরো জোড়ে চিৎকার করলাম কে কে ?
ছেলেটি কোন উত্তর দিলো নাশুধু একটি হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো ।
আমি ভয়ে তখন কি ভাবে যে নীচে নেমে এলাম বলতে পারবো না ।
যখন চোখ খুললাম তখন দেখি আমি বিছানায় শুয়ে আছি মা;বাবা,কাকু আর একজন ডাক্টার আমায় ঘিরে আছেন ।
বাবা কাকুকে বকছেন আমদের কেন ভুতের গল্প শুনায় তারজন্য । মা’র হাতের ফাঁক দিয়ে আমার চোখ যখন দরজার কাছে গেলো তখন আবার চমকে উঠলাম । ছাদে দেখা ছেলেটিদরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে ।আমার চোখা চোখি হতেই । ডান হাতটি আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো । আমি আবার জ্ঞান হারালাম ।

সে বার আমাকে অনেকদিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো । কিন্তু আশ্চযের বিষয় সেরাতের পর ঐ ছেলেটিকে আর কোনদিন দেখা যায়নি আমাদেরছাদে দেখা যায়নি। সে রাতেঅবশ্য আরেকটি ঘটনা ঘটেছিলসেটি হলো আমাদের পাশের বাসার রবিন চাচ্চু মারা গিয়েছিলো । ভাল মানুষ হঠাৎ নাকি কি দেখে খুব ভয় পেয়েছিলেন । প্রিয় পাঠক এদুটো ঘটনার মাঝে কোন মিল আছে কিনা আমি বলতে পারবনা।আপনারা ভেবে দেখুন ।।
<div style="background-color: teal; border: 1px dotted red;"><font color="white"><center><b>ভৌতিক বন্ধুরা ।আমাদের এবারের আয়োজন এখানেই শেষ ।পরের সংখ্যার জন্য লেখা পাঠান jabed.bhoiyan@gmail.com এই ঠিকানায়</b></center></font></div><div style="background-color:maroon; border: 1px dotted red;"><font color="white"><center><b>আমাদের কথা</b></center></font></div>