Duck hunt
আমার রম্য লেখা সমগ্র
-মোঃ জাবেদ ভুঁইয়া-
---------
প্রভাতী ই-প্রকাশনী
ডিজিটাল মাতাল
অবশেষে সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিল ছক্কু ।সে এক বিরাট ব্যপার ।একটা ক্লাব তৈরী করবে সে ।কিন্তু ..সিদ্ধান্ত তো আর বেদ বেদান্ত সূত্রনা যে ,জপলেই কাজ হবে ।এর জন্য অনন্ত নিত্য কাজ করতে হবে ।অর্থ্যাত্ কিনা কাজেই সফল ।তা সেদিনরাস্তার পাশের সস্তা একটা চায়ের দোকানে স্বচায়ের বলেই ছক্কুভাইয়ের দেখা মিলল ।সেই ছক্কু ভাই ।লাল শার্ট ,কালো প্যান্ট,সাদা কেডস পায় ।প্যান্টটা নিচে একটু ভাঁজ করা ।সেখানে গোপাল ভাঁড়ের মত করে দাঁত চেগিয়ে আছে দুটো মোজা ।আলাদা নয় একদম মলাট থেকেকেটে এনে নিজের পায়ে সেটেদিয়েছেন ।বেচারা পা ।ভাগ্যই তোদের খারাপ ।পড়বি তো পড়বি এমন লোকেরকাছে পড়েছিস যে কিনা,চৈত্র মাসের গরমেও তোকে আপাদমস্তক মোজার আড়ালে মুড়িয়ে রাখবে ।
কখন থেকে যে দরজায় দাড়িয়েমুখে একটা হাত পুড়ে জোরে সোরে মস্তিস্কের কোনার অফিসে বিরাট পরিসরে চিন্তার জ্বাল বিছিয়ে...গুছিয়ে নেবার চেষ্টায় আছি ।
ঠিক তখুনি কে যেন আমায় বকল ।না না ওটাকে বকা বলেনা ,ওটা ধমকানি ।ধমকানি বললে অন্যায় হবে ।নিছক বলা যেতে পারে জ্বোরে ডাক দেওয়া ।এটাই সই ।কিন্তু ডাকটা দিলকে ।ভাল করে চারপাশ তাকালাম ।স্টলটা একদম ফাকা - ফকফকা ।কোন মানুষ নেই ।ও কিরে বাবা মস্তিস্ক?বেকে বসেছিস নাকি ? ওইতোসামনেই দিব্বি বিরাট ভুড়িওয়ালা একটা লোক বসে আছে ।ছক্কু ভাই ।ও হ্যা স্ক্যানে ভুল বাবা ? এ?ওটা মানুষ নয় ?
থাম ! বেশ একটা ঝাড়ি দিলাম ওটাকে ।দিব্বি দেখতে পাচ্ছি একটা মানুষ ।হাত আছে ,পা আছে ,নখ আছে,চুল আছে ,মাথা আছে ,মাথারভেতরে মস্তক ...
কি বলহে ? মস্তক নেই ?বেশভাল রসিকথা শিখেছ তো ?
যা হোক স্পষ্টভাবে আরেকটা ডাক শুনলাম ।ছক্কু ভাইয়ের ঠোট নড়ছে ।হুম অংক এতখনে মিলল ।ডাকছেন ওনিই ।
:- হ্যারে জগা তোইতো বেশ পাতলা হয়ে গেছিস রে ? মনেহচ্ছে হাওয়া দিতেই উড়ে যাবি ?
বলে কি ছক্কুদা ।পাতলা কিআর সাধে হয়েছি ? বাংলা ছিনেমায় নাম লিখিয়েছি ।পাতলা খান নাম নিয়েছি ।তো তো পাতলা হতেই হবে ।

: বুঝলি আমি কিন্তু শিগগির বিথ্যাত ব্যক্তিদের সাথে নাম লেখাইমু ।
: তা আবার কি গো ছক্কু দা! পাতলা বলার হালকা পাতলাঅপমানটা ভালভাবে পাতিয়ে হজম করে নিয়ে বললাম , তোমার ঐ মোটা খাতাটায় বুঝি তাদের নাম লিখে মাঝখানে আলগোছে বসিয়ে দেবে বুঝি ।
ছক্কুদার হাতে ধরা মোটা খয়েরি রঙ্গের খাতাটার প্রতি ইঙ্গিত করে বললাম ।
: হতচ্ছাড়া ,হাদারাম কি বললি তুই ?? হাসফাসে না গিয়ে ফুস করে উঠলেন তিনি ।
: এই খাতায় নয় ,একদম পরিস্কার সংবাদ পত্রে দেখতে পাবি ।বুঝলি ? কপালখানা প্রসন্ন হলে চার পাঁচটা খাতে নোবেল পেয়েও যেতে পারি ।নিদেন পক্ষে ১টা খাতে তো মাস্ট ।তখন দেখবি রবীন্দ্রনাথ আর ডঃ ইউনুস পাশে আমার নামখানা কিরম করে জ্বলমল করে ।হেডিংটা হবে এই রকম,রবীন্দ্রনাথ আর ডঃ ইউনুসের পর নোবেল পেলেন আরেক বাঙালী ,নাম ...
: ছক্কুদা সর্বদালয়।
কথাটা শেষ করলাম আমিই ।বলেই কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম ।
: আরেব্বাস কি যেন একটা উপাধী দিলি ?
আনন্দের স্বরে বলল ছক্কুদা ।
: সর্বদালয় ।
: হুম ! তবে ছক্কুদা টা রাখা যাবেনা ।বুঝলিরে জগা আগেই নামটাম ভেবে রাখি ,পরে সাংবাদিকদের সামনে নাম নিয়ে না একটা কেলেঙ্কারি বেঁধে যায় ।
: ঠিক বলেছ ছক্কুদা ।যশেরসাথে নামের চেঞ্জ ।দেখলেনা আমাদের পাড়ার হাবুটা কিভাবে ব্যবসা করে হাবিবুর রহমান হয়ে গেল !
উত্সাহ পেয়ে কথা বাড়ালাম আমি ।
: হুম !ঠিক কথা ।
বেশ চিন্তিত দেখাল ছক্কুদাকে ।

--- --- --- ---
আমাদের ছক্কু
আমাদের ছক্কুকে চেনেন?না চেনার কথা ।উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যেমন সবাই চেনেনা তেমনি উদিয়মান প্রতিভাগুলোকেও অনেকেই চিনেনা ।তবে ছক্কুর বিষয়টা অবশ্য পৃথক ।কারন তার প্রতিভা এরিষ্টটলের মত এত দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে যে সে কোনটা রেখে কোনটার চর্চা করবে ভেবে ।ফলসরূপ আজ দেখা যায় ও কালো কাপড় গায়ে দিয়ে ,চোখে চশমা লাগিয়ে কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে গোয়েন্দাগিরিতে নেমেজে ।আবার কালকেই দেখা যায়,সালফিউরিক এসিডে পানি মিশিয়ে তাতে পিতল ,তামা দিয়ে ভোল্টার কোষের উন্নয়ন সাধন করছে ।আবার কিছুখন পরেই ওকে দেখা যায়খেলার মাঠে একটা ইট ছুড়ে তার গতি ,পড়ন্ত বস্তুটির ত্বরন ইত্যাদী নিয়টনিও গবেষণায় মেতে আছে ।পরিশেষে সাপ্তাহ ঘুরতে দেখা যায় সে,গোয়েন্দাগিরি করতে গৃহকর্তা বুঝে ডাকাতের হাতে সব মালামাল দিয়ে ডাকাত বুঝে গৃতকর্তাকে আচ্ছা মত রাম ধোলাই লাগিয়ে হাজতে ।ভোল্টার কোষের উন্নয়ন সাধন করতে গিয়ে ঘরে আগুন ধরানো ।আর নিয়টনিও গবেষনার ফসল তাঁর চাচার টাঁক মাথায় ভয়ানক রকম একটা আলু বিশেষতৈরী ।
এইতো এবার তো পরিচয় শেষ হল আমাদের ছক্কুর সাথে ।ওআমাদের ছক্কুর আর একটা নাম আছে ।তা হল 'ছক্কু ভাই' ।পাড়ার সবার ও ভাই ।এমনকি গোপন সূত্রে আমি জানতে পেরেছি যে ,ওর বাবাও নাকি ওকে ছক্কু ভাইবলে ডাকে ।
চলুন এবার জেনে আসি আমাদের ছক্কু ভাইয়ের নতুন প্রজেক্টঃ"এলিয়েনুক্কুর" কাহিনী ।
এলিয়েনুক্কু
কয়েকটা এলিয়েন মার্কা ছবি দেখে আর এলিয়েন পাওয়ার সৌভাগ্য দেখে ছক্কু ভাইয়ের মাথাটাই গেল বিগড়ে ।একটা এলিয়েন ধরতেই হবে ।কিন্তু এলিয়েনরা যদি পৃথিবীতে না আসে তবে ধরবে কি করে ।আর বন্ধুই হবে কি করে ।ঝোপঝাড় ঘেড়া খড় বিছানো একটা স্থানে বসে এসব ভাবছিল ছক্কু ভাই ।বেলা দুপুর ।
হঠাত্ করেই একটা গাছের মাথায় কি যেন একটা 'কুক্কুরু'বলে ডেকে উঠল ।আরে !কানখাড়া করে আড়চোখে গাছে আগার দিকে তাকাল ছক্কু ভাই ।এটা একটা ট্রিকস ।কারণ প্রথমেই যদি এলিয়েনদের সাথে চোখাচোখি হয়ে যায় তাহলে এলিয়েনরা পালিয়ে যায় ।কিন্তু গাছের ফাঁক দিয়ে ঝিলিক মারা সূর্যের আলো ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ল না ওর ।
ঘটন - অঘটন
সুপ্রিয় পড়ুয়া বন্ধু ।শুরু হচ্ছে প্রজন্ম ফোরাম প্রযোজিত ,তাহমিদ আক্তার [আমার দোষ নাই ।ঘোষণাকারীর দোষ] পরিচালিত অল্পদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি 'ঘটন-অঘটন'।ছবিটিতে অভিনয় করেছেনঃ স্বপ্নীল ,স্বপ্নীলা,পলাশ মামু ,ইলিয়াস কোবরা,নীলা ,মুন ,ফারিয়া খান [Edit:ফারহান খাঁন],তাহমিদ আফসার সহ আরও অনেকে ।
[- - - - - - - - - - -]
শীতে কাঁপতে কাঁপতে খেঁজুর গাছ থেকে খেঁজুরের রস নিয়ে নামছেন ছবির নায়ক স্বপ্নীল ।পরনে কোছ দেয়া লুঙ্গী আরএকটা স্যান্ডু গেঞ্জি ।
:-কি সপু [স্বপ্নীল]মিয়া ।রস কিমুন হইচ্ছে ।
গাছের নিচে দিয়ে যাচ্ছিলেন পলাশ মামু ।রস খাবার লোভে দাড়িয়ে গেলেন ।
:-তা আজ্ঞে পলু মামু ভালোই ।
:-হুম ।
রাস্তা থেকে এসে গাছের নিচে দাড়িয়ে গেলেন পলু মামু ।
:-তা মামু এত সহাল বেলায় যে রাস্তায় বেরোলেন !
:- কি আর কমু ভাই ।পোলাপাইনদের জ্বালায় পুরা অস্তির ।সারাদিন ফোরামে থাকে আর আমার ইষ্টাইল নহল কইরে পেলাচ কামাই করে ।সব কমেন্টো লইয়া যায় [] ।
কাঁদতে কাঁদতে পলাশ ভাই রসের ঘটিটার আর একটু কাছেএগিয়ে গেলেন ।
:-বড়ই তো যন্ত্রনার কথা মামু ।বদমাশরা দেখি ইদানিত্ আমারেও পচাইবার চায় ।হুম ![এক হাতে আর হাত দিয়ে ঘুসি দিয়ে] পাই একবার বদমাশগুলারে নাগালের মধ্যে ।স্বপ্নীলার ভালবাসার কসব এক একটারে ইমুন মাইর দিমু যে ফোরামে আসা তো দূরে কথা ফোরামের নাম শুদ্ধো মুখে উচ্চারণ করতে পারবেনা ।
:-কি রে সপু ,স্বপ্নীলাডা আবার কেডায় ?হবু ভাবী নাহি ।দিমুনি তোর বাপেরে কইয়া ?
:-এই রে ![জিহ্বার কাপড় দিয়ে তারপর পলাশ মামুর পায়ে গড়িয়ে পড়লেন] ও পলু মামু ! [কান্না জুড়ে দিলেন ।]কইনা গো !কওনা ...
[সপু ভাইয়ের কান্নাজুড়া গান]
হাতে পড়ি পায়ে পড়ি
কইনাগো পলু মামা
আমারে বাপের মাইর খাওয়াইও না ।
পলুঃ দিমু আমি কইয়া দিমু
মাইর খাওয়াইমু তোরে
খেঁজুরের রস কেন আমারে তুই দেসনা ।
সপুঃ পুরা ঘটি রস তোমারে
দিয়া দিমু পলু মামা
তবু আমার বাপের এই কথা কইওনা , না ...কইওনা ।
পলুঃ ঠিক আছে এত করে যখন কচ্ছিস তো কইমুনা ।দে রসের ঘডিটা দে ।
সপুঃ [চোখ মুছতে মুছতে উঠে দাড়ালেন] ঠিক আছে এই নাও ।
দৃশ্য পরিবর্তন
স্বপ্নীলাঃ সপু কেন আসেনা
ফোরামে মন বসেনা
এবার আসুক তার পোস্টে
হাজারখানেক মাইনাস দিমু ।
তাহমিদঃ কি হবু ভাবী !কি বিড় বিড় করছেন ?
স্বপ্নীলাঃ তোমার সপু ভাইরে দেখিছিস [রাগে গজরাতে গজরাতে বললেন]
তাহমিদাঃ আসার সময় হুনে এলাম পলু মামুরে নাকি ওনিপুরো এক ঘটি খেঁজুরের রস দিয়ে দিয়েছেন ।এই জন্য ওনার বাপ ওনাকে হেব্বি মাইর দিছেন ।
স্বপ্নীলাঃ একি হুনাইলা তাহমিদ ।আমার কইলজাডা যে ভাঙ্গি হইয়া গেল ।ও আমার সপুরে .....
[আবারও গানের দৃশ্য]
ও আমার সপু রে
কেন তুই খাইলি মাইরে
আমি আছি অনলাইনেরে
তুই রইলি খাটে পড়ে
তোর উপর হারাইলাভ ভরসা ।
ইলিয়াস কোবরাঃ হা ,হা ,হা,[বিকট স্বরে হেসে উঠলেন] ।কিন্তু ভরসা আছে ভরসা ম্যাচে ।
তাহমিদঃ ওরে বাপরে ..!ইলিয়াস কোবরা চলে আসছে,আমি ভাগি নইতো আমার অবস্থাও সপু ভাইয়ের মতো হইবো । [দৌড়ে পালাল]
চলবে ...
অভিনয় শিল্পীদের অনূভূতি
তাহমিদাঃ আমার তো ভেরী ভেরী ফাইন লাগতাছে অভিনয় করতে ।আসলেতো আমিই ছবির পরিচালক ।লস খাইলে তো আর চলব না ।
স্বপ্নীলঃ ইয়া ,হা !হা!খুবই মজা লাগছে অভিনয় ।এই যে তাহমিদ কইলো আমি নাকি বাপের হাতে মাইর খাইয়া চিক্কুর পারতেছি ।আসলে তখন কিন্তু আমি ক্যামেড়ার পিছে বইসা লেমনঞ্জুস খাইতেছি ।
ইলিয়াসঃ আসলে আমারে দিছে ভিলেন ।কি আর কমু ।[ও হু.হু করে কাঁদতে লাগলেন]।যাউকগা আপনেরা পইড়েন ।ভালা লাগবো ।
পলাশঃ খুবই ভেরী ফাইন lol2 ।খেঁজুরের রসটা যা মিষ্টি ছিলনা ।[জিহ্বা দিয়ে ঠোট চাটতে লাগলেন ]