Teya Salat
মাসিক ভৌতিক
জানুয়ারী ২০১২
সংখ্যাঃ ০১
বর্ষঃ ০২
একটি প্রভাতী প্রকাশনি ও বাংলা প্রকাশন প্রয়াস
আমাদের কথা
সুপ্রিয় বন্ধুরা ।কেমন আছ তোমরা ।হাড়কাপানো শীতে গরম কাপড় গায়ে দিয়ে নিশ্চয় ভাবছো কখন যাবে এই শীতে ।তাই না ? তোমাদের এই শীতকে ভয় দেখিয়ে তাড়াতে এবার তোমাদের জন্য নিয়ে এলাম 'মাসিক ভৌতিকের' জানুয়ারী ২০১২সংখ্যা ।আশা করি তোমাদের ভাল লাগবে এবারের সংখ্যায় প্রকাশিত গল্পগুলি ।
এই কামনায়ঃ ভৌতিক সম্পাদক ।

জ্যান্ত ভুতের গল্প
এই কাহিনীর সবকিছু বাস্তব। তাই চরিত্রগুলির নাম দিচ্ছি না।
গল্পের খাতিরে ধরে নিই স্বামীর নাম সুজন, আর স্ত্রীর নাম, বিলক্ষণ, সখী।
আমাদের এই সুজন সাহেবও শিক্ষক। তবে কোন স্কুলের নয়, শখের।
সুজন দম্পতি নিঃসন্তান তাই পরের ছেলেকে ঘরে ডেকে খাইয়ে-দায়য়ে পড়িয়ে আনন্দ পান সুজন।
বয়স যখন ষাটের কোঠায় তখনই একটা ভুল করে ফেললেন সুজন। নিকাহ করলেন এক বিধবাকে।
ছাত্ররা যারা তখন বেশ তরুন তারা বললো--এটা কি করলেন আপনি?
সুজন হাসিমুখে বললেন--ও তোমরা বুঝবে না, আমার হিসেবে ভুলচুক নাই।
দুই পরিবার নিয়ে সুখে দিন কাটাতে গিয়ে সুজন সাহেবেরঅবস্থা কাহিল। বসত বাড়িটাও বিক্রি করে দিলেন।
ঠাঁই নিলেন পাশের এক পড়ো বাড়িতে।
বাড়িটির আঙিনায় কোন পাঁচিল নাই।
নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে সুজন তাঁর দুই প্রিয় ছাত্রকে তলব করলেন।
ছাত্ররা তখন তরুণ। তাদের উপর পড়ল পাহারার দায়িত্ব।
পাহারা বলতে সুজন মাস্টারস্বপরিবারে ঘুমাবেন কোঠাঘরে। ছাত্রদুটি ঘুমাবে নিচের ঘরে।
সন্ধ্যাবেলা ছাত্ররা হাজির হলে সুজন বললেন--
এই রইল একটা লাঠি, তারসাথেএকটা হ্যারিকেন এবং এক বান্ডিল বিড়ি। উপরে আল্লাহ নিচে তোমরা আমি চললাম ঘুমাতে।
ছাত্ররা গুরুর আদেশ মেনে দু-একটা বিড়ি খেয়ে বাকী বিড়িগুলি বালিশের নিচে রেখে শুয়ে পড়তো।
ছাত্ররা যখন গভীর ঘুমে তখন সুজন মাস্টার ডাকাডাকি শুরু করতেন--
তোমরা উপরে এসো একবার। ছাত্ররা চোখ ডলতে-ডলতে হাজির হতো কোঠায়।
দেখতো সখী আর নতুনী দুজনেই কাঁদছেন। তারমানে এক পশলা ছাত্রী-পেটাই হয়েগেছে।
ছাত্রদের দেখে সুজন মাস্টার বলতেন--
একটা বড় দড়ি নিয়ে এসো।
হুকুম তামিল হতো।
সুজন বললেন--এই যে দেখছো পাশাপাশি দুটো ঘর, তার একটাতে থাকে সখী আর একটাতে থাকে নতুনী। আর আমি থাকি
এই বারান্দায় একটা টপপোরের ভেতরে, ঠিক কিনা?
--জী স্যার।
--এখন তোমরা সখীর ঘর থেকে আমার টপপোরের দুরত্ব মাপো। তারপর নতুনীর ঘর থেকে টপপোরের দুরত্ব মাপো।
ছাত্ররা মাপজোক শুরু করলো। শেষও করলো।
সুজন বললেন--কি দেখলে?
--দুটো ঘরেরই দুরত্ব সমান।
--তারমানে কিনা, আমি আমার দুই স্ত্রীকেই সমান ভালবাসি। ঠিক কিনা?
--তা ঠিক।
--তোমরা ছাত্র হয়ে যা বুঝছো ওরা স্ত্রী হয়ে তা বোঝে না কেন?
বলেই সুজনের দুজন স্ত্রীরপিঠে শুরু করলেন ছড়ির প্রহার। আঘাতে জর্জরিত সখী আর নতুনী যখন লাফাচ্ছেন, তখন
সুজন বলে উঠলেন--নাচরে বাঁদর তুড়ুক-তুড়ুক।
সব অশান্তি মিটিয়ে ছাত্ররা যখন নিচে ফিরে এল তখন মাঝরাত অতিক্রান্ত।
প্রতিরাতেই চলে ওই ঘটনা-দুর্ঘটনা।
সকাল বেলা ছাত্র দুজন যখন বাড়ি ফেরে তখনও তাদের চোখে ঘুম লেগে থাকে। আরো একটি বিষয়ে তারা অবাক হয়।
সকালে উঠে তারা দেখে বালিশের নিচে একটাও বিড়ি নাই।
প্রতি রাতে বিড়ি গায়েব হয় কি করে, এই নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলো দুই বন্ধুতে। কোন সমাধান-সুত্র পাওয়া গেল না।
মাঝরাতে সুজন-মাস্টারের নাটক আর ভোররাতে বিড়ি গায়েব, এর মধ্যে নিশ্চয় কোন সমন্ধ আছে?
একদিন ভোরের দিকে একজন ছাত্র বুঝলো তার বালিশের নিচে একটা হাত ঢুকে গেল। ছাত্র তখন জ্বিন ভেবে দোয়া-দরুদ
পড়ছে।
হাতটা বালিশের নিচ থেকে বিড়ির বান্ডিল নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
তখন ছাত্রটি তার পিছু নিলো।
সাদা কাপড় পরা এক ছায়ামুর্তি। যখন বুঝলো কেউ তাকে অনুসরণ করছে তখন সে মাথার খোলা চুল ঝাঁকিয়ে বিকট হেসে
উঠলো।
ভয়ে --ব্যা-ব্যা-ব্য া করে উঠলো ছাত্রটা।
সুজন-মাস্টারের ঘুম ঠিক সেই সময়ে ভেঙেছিল। তিনি ছুটে এসে মারলেন লাঠির বাড়ি সেই ছায়া মানবীর মাথায়। একঘায়ে
ধরাশায়ী।
হ্যারিকেনের আলোয় দেখা গেল, ছায়া-মানবী আর কেউ নয়পাশের বাড়ির রিফাই-বুড়ি।
সেই রাতে তাঁকে সুস্থ করতে আবার ছাত্র-দুজনকে ছুটতে হলো খাটিয়া কাঁধে।
এরপর আর বিড়ি চুরির ঘটনা ঘটেনি।

মেডিকেল এর ভুতের গল্প
গল্পটা এতটাই ছেলেমানুষী যে বড়রা পরলে মিনমিনিয়েহাসবার
সম্ভাবনা আছে।তাই ১৮ মাইনাস।
সেদিন প্রথম দিন মেডিকেল এর। এযাবতকাল যত ভয়ঙ্কর গল্প বা
সিনেমা দেখেছি তার সবই তোসেই কঙ্কাল নয়তো লাশ নিয়ে। কেউ
হয়তো অনেক কষ্ট নিয়ে মরেছে, নয়তো মরিছে অভিশাপ দিয়ে।
এনাটমিতে কিনা প্রথম দিনেই সেই লাশকে আস্ত পাশে রেখে ক্লাশ।
প্রত্যেককে কিনা আবার সেইনরকঙ্কাল কিনিতে হবে।কঙ্কাল গুলোকে
খালি খাটের তল থেকে উঠতে হবে-আর মানুষ গিলিতে হবে।কত
আনন্দ।
তখনও রেডিও ফুর্তির ভুত ভুত খেলা শুরু হয়নাই-কিংবা কোন গল্পের
বই ও সেদিন পরি নাই। প্রথম দিনের এনাটমির পড়াহল
ভাট্রিবা(মেরুদন ্ডের একখানা হাড্ডি) তাতেই আমার ভয়ের জোগাড়।
কিছু কিছু জায়গায় আবার মাংশের মত লেগেও আছে মনে হয়।কঙ্কাল
তো আমি কিনি নাই-পাশের জনের দিয়ে পড়াশুনা। কোনমতে
চোখখান যখনি বন্ধ করলাম ঘুমানোর জন্য-আমার ওরিয়েন্টেশন মনে
হয় শুরু হয়ে গেল।
সাদা হাড়ের ভিতর থেকে সুড়সুড় করে ধোয়া বের হতে শুরু করল।
আমার কোন অনুভুতি নেই-যেনপ্রতিটা নতুন মেডিকেল স্টুডেন্ট ই
আজ এই স্বপ্ন দেখবে। টুচুক করে বেরিয়ে পড়ল ভুতটা। ছোট একটা
ভুত। আমি মনে মনে ভাবলাম-কি ওরিয়েন্টশন এ বুড়া বুড়া ভুত
আসবে, আমার ভাগ্যে জুটল পিচ্চি ভুত। তাই ভাব নিয়ে কথা বলব
কিনা ভাবতেছি।সে যাই হোক।সবশেষে যে কাহিনী উদ্ধার করলাম তা
হলঃ
সে অনেক কাল আগের কথা। তখনকার দিনে অপরিচিত মানুষ
মরলেই ডাক্তার মশাইদের কাজ হত লাশের কেটেকুটে সর্বনাশ করা।
ভুতেরাও কম যায় না। লাশের ভুত গুলো হত আরো ভয়ঙ্কর। তারা
ডাক্তার দের আরো বেশি জালাতন করা শুরু করে। দিনযায় দিন
আসে। ডাক্তার মামুদের ও আগ্রহ কমে না-কাটাকুটির জালায়
ভুতেরাও মরে। এইতো সেদিন ই আমাদের চিঙ্কু স্যার বাশঝাড়ে
প্রাকৃতিক কর্ম সাড়তে গিয়ে সেকি তাড়া। অন্যসময় হলে না হয়
ঢিলাঢিলি চলে, তাই বলে সবসময়। তারপরে আবার একদিন লাশ
চুরি করবার সময় যেই না লাশ জ্যান্ত হয়ে ডাক্তারকে ভয় দেখাতে
যাবে তখনি ডাক্তার দিল ছিটায়ে ক্লোরোফর্ম। বেচারী ভুত-সাথে সাথে
অক্কা।আমাদের সসীম কুমার স্যার তো সেদিন মাত্র ভুতের নানীর
পাল্লায় পরে গাছে ঝুলে ছিলেন কিছুক্ষন।
সমাধানের পথ তো দরকার।ভুতেরাও মানে- মানুষ ও মানে।ডাক্তার
রাও বুঝে যে লাশদের বেশি কষ্ট দেয়া উচিত না। কিংবা লাশকে আরো
পরিণত ভাবে সংরক্ষন করা উচিত। যাতে বেশি লাশ থেকেভুত না বের
হয়।অবশেষে একদিন সামনে এগিয়ে এলেন চুন স্যার। ভুতের হাত
থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি নিজের গায়ে চুন ভুষি মেখে
রাখতেন। অবশেষে তিনি বললেন-তোমরা লাশের গায়ে যদি
ফরমালিন মেখে রাখ তবে লাশঅনেক দিন থাকবে।
যাই ভাবা সেই কাজ।ভুতেরাওজালাতন কমিয়ে দিল। ডাক্তাররাও
বাচল উতপাত থেকে। তবে মেডিকেল ছাত্র ছাত্রীদের সেই পুরাতন
দিনের স্মরনে কিছু কিছু ভুতের হাতে পড়তে হয়।তাদের মেনে চলতে
হয় কিছু নিয়ম কানুন।
যেমন লাশের অসম্মান করা চলবেনা।কেননা লাশটাও একজন
মানুষের। তিনি নিতান্তই মানুষের সেবার জন্যে নিজেকে বিলিয়ে
দিয়েছেন।
আপনাদের কিছু কিছু ভুতের পাল্লায় মাঝে মাঝে পড়তেহবে। যেমন
আইটেম ভুত, প্রফ ভুত, পেন্ডিং ভুত, সাপ্লি ভুত।
সাথে সাথে থাকবে মাথী স্যারের মত অত্যাচারী ভুত। যারা বিভিন্ন
সময়ে বিভিন্ন স্যারের উপর সওয়ার হয়ে চুলজুল পান্ডে হয়ে যাবে।
অবশেষে শুভকামনা থাকল;।
হড়পুর করে ঘুম থেকে জেগেউঠলাম। উঠেই দেখি হাতের মাঝে
এখনও হাড্ডিটা ঝুলছে। পাশের বেডে শুয়ে থাকা নতুন ইয়ারের
ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম-সেও একই রকম কিছু দেখেছে কিনা।
উত্তরে আসলো না।

রহস্যময় লোকটি
সংগৃহীত গল্প
স্লামালাইকুম ভাই, একটু সরবেন ওই সিটটা আমার।
তাকিয়ে দেখি কালো, রোগা মতঅদ্ভূত দর্শনের একজন লোক আমার পাশের সিট টাকে ইঙ্গিত করে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি সালামের জবাব দিয়ে সরে তাকে ভেতরে ঢোকার জন্য জায়গা করে দিলাম। ঢোকার সময় লোকটার গায়ে হাত লাগার পর তার শরীরটা কেমন যেন ঠান্ডা ঠান্ডা লাগল। একটু ভয় পেয়ে গেলাম। লোকটা মনে হয় ব্যাপারটা বুঝতে পারল এবংরহস্যময় মুচকি একটা হাসি দিল। আমি কিছুক্ষণ লোকটারদিকে তাকিয়ে অন্য পাশে ফিরে বসলাম। বাসটা ছেড়ে দিল।
অনেকদিন পর নানার বাড়িতে যাচ্ছি। বিভিন্ন সমস্যার কারনে মাঝখানে কয়েক বছর যাওয়া হয় নি। এবার একটা বড়ধরনের ছুটি পাওয়ার ফলে রওনা দিলাম। বাড়িতে নানা-নানী আর দূর সম্পর্কের দুইজন মামাতো ভাই ছাড়া কেউ থাকে না। আগেঅনেক লোকজন থাকত। আমরাও বিভিন্ন সময় সেখানে চলে যেতাম। সেইসব স্মৃতি মাঝেমাঝে উঁকি দিয়ে যায়। কত মজাই না করতাম।
-ভাই কি নানার বাড়ি যাচ্ছেন?
হঠাৎ লোকটা প্রশ্ন করে বসল। কিছুটা অবাক হয়ে জবাব দিলাম,
-জি, আপনি কি করে বুঝলেন?
-না আপনাকে ওই বাড়িতে দুই একবার দেখছি বলে মনে হচ্ছে। আপনার নানার নাম করিম উদ্দিন ভূঁইয়া না?
-জি, আপনি আমার নানাকে চেনেন?
-আগে প্রায় সময় ওই বাড়িতে যেতাম, এখন আর যাওয়া হয় না।
মনে মনে ভাবলাম বাড়িতে তখন অনেক লোকই আসত, সবাইকেতো আর চেনা সম্ভব না। ওদেরমধ্যে কেউ একজন হবে আর কি।এমন সময় বিভিন্ন দিক থেকে হর্ণের শব্দ কানে আসতে শুরু করল। তাকিয়ে দেখি সামনে বিশাল জ্যাম লেগে গিয়েছে। আজকে মনে হয় বাড়ি যেতে অনেক রাত হয়ে যাবে।
-আপনার নাম কি?
-আমার নাম সগির। আপনার নানাদের পাশের গ্রামে থাকতাম।
-থাকতাম মানে, এখন আর থাকেন না?
-নাহ।
বলে লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তারপর হুট করে একটা কথা জিজ্ঞেস করে বসল,
-আপনি কি জিন-ভূতে বিশ্বাস করেন?
হঠাৎ এই ধরনের প্রশ্ন করায় একটু অবাক হলাম।
-না, কিন্তু হঠাৎ এইগুলা জিজ্ঞেস করতেছেন কেন?
-ও আপনি মনে হয় আপনার নানার বাড়ির সামনের বাঁশঝাড় টার কথা শোনেন নাই।
-না, ওই বাঁশঝাড়ের আবার কিহইল?
কিছুটা অবাক হলাম।
-আছে, ওইটা সম্পর্কে বিরাট এক কাহিনী আছে। ওই কাহিনী শুনলে জিন-ভূতে বিশ্বাস করা শুরু করবেন।
মনে মনে ভাবলাম, প্রত্যেক গ্রামেই এ ধরনের কিছু কাহিনী প্রচলিত থাকে। এগুলো বিশ্বাস করার কোন মানে হয় না।
-আপনার যদি সমস্যা না থাকে তাহলে বলতে পারেন।
-আচ্ছা বলি তাহলে, এই কাহিনীটা ঘটছিল আমার নিজের জীবনে।
এরপর লোকটা তার কাহিনী বলা শুরু করল,
আমাদের গ্রামের এক বাড়িতে১৬ বছর বয়সী একজন যুবতী মেয়ে থাকত। বাড়িতে তার সাথে তার বাবা মা আর ছোট একটা ভাই থাকত। মেয়েটি দেখতে বেশ সুন্দরী ছিল। যার ফলে প্রায় সময় গ্রামের বখাটে ছেলেরা তাকে বিরক্ত করত। একবার অন্য গ্রাম থেকে আসা এক ছেলে তাকে প্রেমের প্রস্তাব করে। কিন্তু মেয়েটা তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়, যার ফলে ছেলেটা তাকে স্কুলে যাওয়ার পথে এবং বিভিন্ন সময় দেখা হলেই বিরক্ত করত।
একবার ওই ছেলেটা দলবল নিয়ে গ্রামে এসে মেয়েটাকেরাস্তা থেকে ধরে ওই বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে তারা মেয়েটাকে ধর্ষণ করে। এরপর তারা মেয়েটাকে মেরে ফেলে এবং সেখানেই ফেলে রেখে চলে যায়। পরদিন ওই জায়গা থেকে মেয়েটার লাশ উদ্ধার করা হয়, এবং ঈমাম সাহেবের ফতোয়া অনুযায়ী জানাজা ছাড়াই কবর দেওয়া হয়। এর আগে পুলিশের লোকজন এসে দেখে যায়, কিন্তু তারা কিছুই করতে পারে না। এই ঘটনার পর মেয়েটার পরিবার ওদের ঘরবাড়ি ফেলে অন্য কোথাও চলে যায়।
লোকটা একবারও না থেমে বলে যেতে থাকে,
তখন থেকেই গ্রামের লোকজন বলাবলি করতে থাকে ওই বাঁশঝাড়ে নাকি প্রায় সময় একটা মেয়েকে একা বসে কাঁদতে দেখা যায় এবং যুবক ছেলে দেখলেই ধরে নিয়ে যায়। তাই লোকজন রাতের বেলা ওই রাস্তাটা খুব একটা বেশি দরকার না হলে ব্যবহার করত না। আমার বয়স তখন খুব একটা বেশি ছিল না,তাই সবাই আমাকে ওই জায়গা দিয়ে চলতে নিষেধ করত। কিন্তু আমি এসব বিষয়কে খুব একটা পাত্তা দিতাম না। এগুলোকে গুজব বলেই মনে করতাম। তারপরও ওই জায়গা দিয়ে খুব একটা যেতাম না।
এক রাতের ঘটনা, এখনো পুরোপুরি মনে আছে। সেরাতেআমি বাজার করে বাড়ি ফিরছিলাম। ফেরার সময় ভাবলাম আপনার নানার বাড়ি থেকে ঘুরে যাই। তখন ওই রাস্তাটা দিয়ে রওনা দিলাম। যদিও ভূত-পেত্নিতেখুব একটা বিশ্বাস করতাম না, তারপরও ওইদিন একটু ভয় ভয় করছিল। আকাশে চাঁদের আলো ছিল বলে টর্চ টা জ্বালানোর প্রয়োজন বোধ করলাম না। চলার পথেই একটা কুকুর দেখতে পেলাম। কুকুরটাকে দেখেই মনে মনে একটু শান্তি পেলাম, যাক আমি ছাড়াও একটা জীবিত প্রাণী আছে। কুকুর টাও কি ভেবে আমার পিছু পিছু আসতে শুরু করল। তখন কিছুই বুঝি নাই, ভাবছিলাম কুকুরটা আমার বাজার করা জিনিসগুলোর লোভেই পিছু পিছু আসছে। আর কুকুরটা সাথে আছে বলে সাহসটাও একটু বেড়ে গিয়েছিল, তাই আরপাত্তা দেই নাই। কিছুদূর যাওয়ার পর যখন বাঁশঝাড় টার কাছে আসলাম তখন হঠাৎ করে কার যেন হাসির শব্দ কানে বাজল।
এইবার একটু আগ্রহ বোধ করলাম। একটু ভয় ভয়ও লাগতে শুরু করল। ওই রাস্তা দিয়েই তো আমাকে বাড়ি যেতে হবে। লোকটা না থেমে বলে যেতে লাগল,
এই জায়গায় এত রাতে কে হাসাহাসি করতে যাবে? ভাবতেই বুকটা একটু কেঁপে উঠল। পরক্ষণেই দেখি বাঁশঝাড় টার তলায় একটা মেয়ে বসে কান্না করছে। সাথে সাথে ভয়ে পুরোপুরি জমে গেলাম। তখন খেয়াল হল তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু কিছুতেই পা নাড়াতে পারছিলাম না, মনে হল কেউ যেন আটকে রেখেছে। কুকুরটাতখনো আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। একটু পর লক্ষ্য করলাম মেয়েটা উঠে দাঁড়াল, এবং হাতের ইশারা দিয়ে আমাকে ডাকতে শুরু করল। অদ্ভূত একটা আকর্ষণ অনুভবকরলাম নিজের ভেতর।
||পরের সংখ্যায় সমাপ্য||

একটি ভুত
তানজি
আমার নাম তানজি।। চট্রগ্রামে থাকি।। আপনাদের সাথে যেই ঘটনাটি শেয়ার করতে চাচ্ছি তা হয়তো তেমন ভয়ের না তবে একদম সত্যি ঘটনা।।
আজ থেকে ৭ বছর আগে ঘটনাটি ঘটেছিলো।। আমরা তখন আস্কার দীঘির পাড়ে থাকতাম।। আমাদের বাসাটা অনেক বড় আর পেছনে জঙ্গল।।আমি সবসময় একা থাকতে পছন্দ করি।। সেদিন রাতেও আমি একা ছিলাম।। কোনও এক কারনে মন ভালো ছিল না, তাইতাড়াতাড়ি ঘুমুতে চলে গিয়েছিলাম।। রাত ২টা বা ৩টার দিকে হটাত আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।। আমি উঠে এক গ্লাস পানি খেলাম এবং পুনরায় শুয়ে পড়লাম।। এর ঠিক ৫ মিনিট পর আমার কেমন যেনও অস্বস্তি লাগতে শুরুকরলো।। বারবার মনে হতে লাগলো আমার রুমে কেউ আছে।। প্রথমে ভাবলাম মনেরভুল কিন্তু কিছু সময় পর আমার অনুভূতি আরো বেড়ে গেলে।। ঘরে কারো উপস্থিতিপ্রবলভাবে টের পেলাম।। আমি সাবধানে চোখ খুলে দেখলাম আমার খাটের পায়ার কাছে কেউ একজন দাঁড়িয়ে।। ঠিক দাঁড়িয়ে নয়, সে আমার খাটের চারপাশে রাউন্ড দিয়ে ঘুরছে।। লোকটা হলুদ রঙের একটা শার্ট পড়া।। মুখে চাপা দাড়ি।। উচ্চতা ৫ ফুট ৫ থেকে ৬ এর মতো হবে।। আমি লোকটাকে স্পষ্টদেখছিলাম কারন রুমের সাথেলাগোয়া বাথরুমের বাতি জ্বালানো ছিল।। আমি ভয়ে জমে গেছি ততক্ষণে।। একমনেআল্লাহকে ডাকছি।। ঠিক মনেনেই কতো সময় পর, লোকটা ঘুরে চলে যেতে লাগলো।। লোকটা রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।। এতক্ষণ লোকটার গায়ের ধরন এবং মুখের অভয়ব বুঝা যাচ্ছিল, এবার চেহারাটাও পরিষ্কার দেখলাম।। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো লোকটাকে আমি চিনি।। উনি আমার এক ফ্রেন্ডের দূর সম্পর্কের ভাই হন।। যতদূর জানতাম, উনি কালো জাদু এবং ছোট খাটো তুকতাক পারেন।।
এই ঘটনার কিছুদিন পর আমি আমার ফ্রেন্ডকে খুলে বলি পুরো ঘটনা।। আমার কথা শুনে আমার ফ্রেন্ড ঐ লোককে পরে জিজ্ঞেস করে।। কিন্তু তিনি আমার ফ্রেন্ডের কথার কোনও উত্তর দেন নি।। শুধু খানিকটা হেসেছিলেন।।
আমি জানি না সত্য কি বা মিথ্যা কি।। তবে এই ঘটনাটা এবং বর্ণনাটা পুরোটাই সত্য।। এক বিন্দুও বানানো নয়।।

শয়তান
সজিব আহমেদ
রোজ রাতে আমার কাছে শয়তান আসে। ঘুমের মাঝেই প্রচন্ড ভয়ে আমি ছটফট করে উঠি, অনেকক্ষণ হাস ফাসকরে হয়তো আমার ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু তারপরও বহুক্ষণ তার উপস্থিতি আমিটের পাই আমার আশেপাশে।
সে আসে...কোন ভয়ংকর রূপ ধরে নয়...খুব মিষ্টি নিষ্পাপ চেহারার একটা বাচ্চা মেয়ে হয়ে। বছর পাঁচ কি ছয় বয়স, বেশ ফর্সা, গোলগাল মুখ, মাথাভর্তি ঝাকড়া চুল, বড় বড় চোখ, ঠোঁট টেপা একটা হাসি...এইসবের মধ্যে সবচেয়ে বেমানান হল মেয়েটার ডান গালে বেশ বড় একটা ক্ষত, গোলাপী মাংস বের হয়ে আছে। সাদা একটা ফ্রক পরনে, আর হাতে বাদামী রঙের একটা উলের পুতুল।
মেয়েটা আসে, একেক রাতে তার সাথে আমার একেক জায়গায় দেখা হয়। আর সে দূর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, শুধু তাকিয়ে থাকে। তার চোখ, তার হাসি কিছুই বদলায় না। কিন্তু তারপরও আমি প্রচন্ড ভয়ে অস্থির হয়েযাই। আমার হাত-পা জমে যায়। এমনকি নড়াচড়ার শক্তিটুকুও আমি হারিয়ে ফেলি। ভয়ে আতংকে কাঠ হয়ে যায় আমার শরীর, আমি নড়তে পারি না, তার চোখ থেকে চোখ সরাতে পারি না, ঘুম ভেঙে জেগে উঠতে পারি না। বহুক্ষণ...জানি না কত...কতক্ষণ পরে আমার ঘুম ভাঙে। এবং তখনো আমি আমার আশেপাশে, ঘরের বাতাসে তার অস্তিত্ব টের পাই। দেখতে পাই চেয়ারে বসে কি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে সে আমাকে দেখছে। আমি টের পাই খুব বেকায়দা ভঙ্গিতে তেড়া বাঁকা হয়ে আমার দেহটা বিছানায় পড়ে আছে, হয়তো ঘাড়টা বাঁকা হয়ে এলিয়েআছে বালিশ ছেড়ে, হয়তো হাতগুলো উঠে আছে মাথার ওপর, পা দুটো ছড়িয়ে আছে দুদিকে বা মুড়ে আছে হাঁটু, যা স্বাভাবিক অবস্থায় কখনোই হওয়া সম্ভব না। আর বহুক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ মেয়েটাকে আমি টের পাই, আমি এমনকি নড়তেও পারি না একচুল। ওইভাবেই পড়ে থাকিদুমড়ে মুচড়ে কাঠ হয়ে। তারপর একসময়, নিজেকে ওই রাতের মত যথেষ্ট বিনোদিত মনে হলে মেয়েটি চলে যায়। আর তখনই কেবল আমি নিজের মধ্যে ফিরে আসি। শ্বাস নিই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে, শক্তি ফিরে পাই শরীরে, নড়ে চড়ে স্বাভাবিকভাবে পাশ ফিরে শুই, এবং আশ্চর্যের ব্যাপার...একসময ় আমি ঘুমিয়েও পড়ি।
কেন সে আসে আমার কাছে? আমার রাতের ঘুম, বহুকষ্টে ভান করে হলেও পাওয়া মনের শান্তি কেড়ে নিতে? কার কি ক্ষতি করেছি আমি? যতদূর জানি আমি তো কারো কোন ক্ষতি করি নি। বরং বারবার সরল মনে একের পর একমানুষকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছি। আর তারপরেআমার সে বিশ্বাস কাঁচের মত ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেছে। আমার ভেতরের গভীর আবেগ উঁচু প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। আমি তো কোনদিন কাউকে কষ্ট দেই নি। বরং হাসিমুখে সবাইকে কাছে টেনে নিয়েছি, নিজের কষ্টটা লুকিয়ে অন্যকে আনন্দ দিয়েছি, ভালবাসা বিলিয়েছি অকৃপণভাবে।
তাহলে আমাকেই কেন রোজ রাতে এই নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়? এত নিষ্পাপ চেহারার বাচ্চা একটা মেয়ে কি করে শয়তান হয়?মুভিতে, গল্পের বইতে সবসময় দেখেছি মৃত্যু, শয়তান, অশুভ আত্মা বরাবর খুব ভয়ংরূপী পুরুষমানুষ। আমি ভাবতাম শয়তান কেন সবসময় পুরুষইহবে? আমরা কেন নারীর রূপে তাকে কল্পনা করি না? তাই বুঝি শয়তান আমাকে কোমল মায়াময় একটা বাচ্চা মেয়ের রূপে ধরা দেয়। যার নিষ্পাপ চোখের ভেতর লুকানো বরফের মত ঠান্ডা ধারালো দৃষ্টি, যার টুকটুকে লাল দুটো ঠোঁটে সর্বগ্রাসী হাসি।
আমি রোজ রাতে তাকে দেখে আতংকে দিশেহারা হই, আমার সারাদিন কাটে ঘোরের মধ্যে। আমি দিনভর প্রার্থনা করি তার হাত থেকে মুক্তি পেতে, ক্ষমা চাই জানা, না জানা সকল পাপের, কামনা করি পৃথিবীর সকল মানুষের, প্রাণীর মঙ্গল, কারো ক্ষতি তো দূরেথাক, এমনকি কারো অমঙ্গল চিন্তাও কখনো করি না, রাতেঘুমুবার সময় বাতি নেভানোর আগে রোজ আশা করি আজ রাতে সে আসবে না।
কিন্তু সে আসে। আমারই মত তার ঠোঁটে থাকে মিষ্টি একটা হাসি। আতংকে জমে যেতে যেতেও আমার মনে পড়ে আজ পর্যন্ত পরিচিত যত মানুষ আমাকে ব্যথা দিয়েছে, আমার বিশ্বাস ভেঙেছে তারা কেউই শেষ পর্যন্ত ভাল ছিল না, কোন না কোন ক্ষতি তাদের হয়েই গেছে। আমি অনেক ভয় পাই, কিন্তু তারপরও তার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নেই না। সেই অশুভ বরফ শীতল দৃষ্টি আমার মধ্যে সঞ্চালন করে একটা অশুভ ছায়া।
দিনভর প্রার্থনা, শুভকামনায় মশগুল থাকলেও রোজ রাতে আমি তার জন্য অবচেতনে অপেক্ষা করে থাকি। রোজ রাতে শয়তান আসে আমার কাছে। একটু একটু করে মৃত্যু ঘটে আমার ভেতরের শুভ সত্ত্বার। আর আমি একটু একটু করে শয়তান হয়ে উঠি।

ভূত নিয়ে একটি সত্য ঘটনা
ইউনুস খান
যারা ভূতে বিশ্বাস করেন না, বা করতে চান না তাদেরকে আজকে আবার একটা সত্য ঘটনা শুনাব-
লচনা কাকাটা যে কি সময়মতদোকানের মালগুলো নিয়ে আসবে, আর উনি কিনা আড্ডা মারছে। আমি রাগে গজগজ করতে লাগলাম। এমন সময় কুলিদের সর্দার বিষু কাকাদৌড়ে এসে বলল- বাবা সর্বনাশ হয়ে গেছে লচনাতোদাঁড়ানো থেকে মাটিতে পড়ে গেছে। দৌঁড়ে গিয়ে দেখি মুখ দিয়ে লালা পড়ছে। হুঁশ নেই। কোলে করে উনাকে ডাক্তারের কাছেনিয়ে গেলাম। প্যারালাইসিস। অনেক চিকিৎসা করার পর বাঁচানো গেল, কিন্তু মুখটা বেকে গেছে, দুইটা হাতই অচল হয়েগেছে, হাটতে পারে সেটাও খুব কষ্টে। কাকার জন্য খুব কষ্ট হতো। এরপর প্রতিদিন সকালবেলা আমাকে এসে বলত বাপু দুইটা টাকা দে। আমি পাঁচ-দশ টাকা দিতাম। একদিন সকালবেলা শুনি কাকা আর নেই।
আশ্বিনের মাঝামাঝি। আকাশে সাদা সাদা মেঘের বেলা অপরুপ চিত্রকর্ম তৈরি করে রেখেছে। এমন দিনে সবাই মাছ ধরতে যায়।মাছ ধরতে গেলে বুকে সাহস লাগে। কারন তখন নাকি মাছ খেকোদের আনাগোনা বেড়ে যায়।
ছোটবেলা থেকেই আমার মাছ ধরার খুব সখ ছিল। আমাদের বাড়ীর কাছেই ছিল কংশ নদী,জোকা বিল, জাম বিল, সোনাইনদী আর আমাদের পুকুরতো ছিলই। তাই সুযোগ পেলেই মাছ ধর‌তে চলে যেতাম সেসব জায়গায়।
এমনি এক শরতে ইউনিভার্সিটি বন্ধ পেয়ে সোজা বাসে বাড়িতে যাওয়ার জন্য। সন্ধায় বাজারে আড্ডায় মাছ ধরা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা। আমিন, শওকত নাকি গতরাতে একটা বিশাল বোয়াল পেয়েছে। মনকে আর বাঁধ মানাতে পারলাম না। আমিন, শওকতকে বললাম আমাকেও নিয়ে যাওয়ার জন্য।
রাতে বাসা থেকে খেয়ে বাজারে আসার সময় চরে দেখি দুটি বাতি জ্বলছে। (উল্লেখ্য যে আমাদের বাসার ঠিক পিছনেই হলো চর।চরকে ঘিরে ইউ আকৃতির কংশ নদী। চরের একদিকে গোরস্থান, আর ডানদিকে নদীর তীরে শশানঘাট)। বুঝতে পারলাম কেউ মাছ ধরছে। কে.. কে.. এখানে মাছ ধরে? ঐ আমি আমিন। তোরানা আমারে নিয়া যাবি। আমরা এইখানেই আছি তুই আয়। আমিবাজারে না গিয়া বাসায় ঢুকলাম। নাল বাতি, কুঁচ, টর্চ এবং খালই(মাছ রাখার বাঁশ দিয়ে তৈরি বিশেষরকমপাত্র) নিয়ে দৌড় দিলাম।
গোরস্থানের কাছে যেতেই আমাকে দেখে কি যেন সরে গেল। বুকের ভিতর ধপ করে উঠল। টর্চ লাইট দিয়ে দেখলাম দুটি শেয়াল আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। রাতে গোরস্থানে শেয়াল আসে কবর খুঁরে লাশখাওয়ার জন্য। আমি সোজা আমিনদের কাছাকাছি চলে আসলাম। ওরা আমার সামনে, আমি পিছনে পিছনে মাছ ধরছি।
অন্ধকার খুব অন্ধকার রাত ছিল সেদিন। পানির ওপর বাতি ধরে ধরে খুব তীক্ন দৃষ্টি দিয়ে মাছ দেখছিলাম। হঠাৎ একটি সা-ঝাক শব্দ। কি মাছ জানতে চাইলাম। মাগুর। কিছুক্ষণ পর আমিন বলল চল শশানঘাটে চলে যায়। গভীর রাতে শশানঘাট নীরব থাকে বলে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়।
ধূপ এবং পোড়া কাঠের গন্ধনাকে আসল। নদীর খাঁড়া পাড় বেয়ে নিচে নামলাম। সন্তপর্নে খুব সন্তপর্নে এগুতে লাগলাম। পানির নিচেদেখলাম লাল লাল চোখ নিয়েকি যেন ছুটাছুটি করছে। ভাল করে তাকিয়ে দেখি চিংড়ি মাছ। আমিন আর শওকতকে দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে সা-ঝাক করে একটি শব্দ। বুঝতে পারলাম কাছাকাছিই আছে। ততক্ষণে মাছের নেশা এতই বেড়ে গেলযে কারও কথা মনে নেই। আমি নদীর বাঁক ধরে ধরে সামনে আগাচ্ছি।
হঠাৎ......হঠাৎ. .....নদীর ভিতরএকটি শব্দ হলো। মনে হলো কোন মাছ খেকো দানব একটি কুমিরকে গিলে ফেলার চেষ্টা করছে। আর ঐ কুমির নিজেকে বাচানোর জন্য এই চেষ্টা করছে। আবারও শব্দটা হলো। আমি টর্চ লাইট দিয়ে শব্দের উৎপত্তিটা বুঝার চেষ্টা করলাম। এক জায়গায় পানিরকম্পন দেখে বুঝতে পারলাম শব্দটা ঐ জায়গা থেকে আসছে। দূর থেকে মনে হলো বোয়ালের বরশীর মাঝে কোন বড় বোয়াল আটকা পড়েছে। এই সময় লোকজন নদীর তীরে সারি বেঁধে বোয়ালের বরশীগেথে যায় এবং রাতে পাহাড়া দেয়। এইসব লোকজনঅনেক সাহসী হয়। চিন্তা করলাম বোয়ালটা নিতে পারলে ভালই হতো। কিন্তু একলা একলা পানিতে নামতে সাহস পেলামনা। আমি আমিনকেডাকলাম। কিন্তু কোন সারাশব্দ নেই।
বোয়াল মাছের লোভ ত্যাগ করে আমি সামনে চললাম। মনেহচ্ছে আমার সাথে অনেকেই চলছে। মনে মনে ভাবলাম আমার পায়ের শব্দে নদীর পাড়ে প্রতিধ্বনি হচ্ছে এইজন্য এমন মনে হচ্ছে। কিছুক্ষন পরে খেয়াল করলাম হাজারও পা আমার সাথে এগুচ্ছে। আমি ভয়ে জোড়ে হাটতে লাগলাম। সামনে তাকিয়ে দেখি হাজারও কঙ্কাল সাড়ি বেধেদাড়িয়ে আছে। যেন কোন কঙ্কাল মারা গেছে তাই সবাই মিলে তার জানাযা পড়ছে।
ভয়ে আমার শরীর দিয়ে ঘামের ঝড়না বইতে লাগল। ভয়ে ভয়ে সামনে টর্চ লাইট মারলাম, দেখি মরা পাটগাছ সারি বেধে দাড়িয়ে আছে। বন্যার পানিতে পাট গাছ পচে শোলা হয়ে দাড়িয়ে আছে। আর সাদা পাট শোলাতে নালবাতির আলো পড়ে দূর থেকে ঠিক কঙ্কালমনে হচ্ছে। আমি কতগুলো পাটশোলা একসাথে করে পাট দিয়ে বাধলাম। তারপর তাতেকতটুকু কাঁদা মেখে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলাম এবং সেই আলোতে সামনে দৌড়াতে লাগলাম।
দপ দপ শব্দ হতে লাগল। কত খারাপ চিন্তা মনে আসতে লাগল। লচনা কাকার কথা খুবমনে পরে গেল। সামনেই লচনাকাকার শশান। এই জায়গাটা একটু সরু। তারপরও আমি যতটা সম্ভব জোড়ে হাটার চেষ্টা করতে লাগলাম।
লচনা কাকার শশানের সামনে যখন আসলাম শুনতে পেলাম- বাপু দুইটা টাকা দিয়া যা। আমি পিছনে না তাকিয়েদৌড়াতে লাগলাম। দূর থেকেফযরের আযান শোনা যাচ্ছে। আমার ভয়টা কেটে গেল। বাসায় চলে গেলাম।
পরদিন সকালে বাজারে যাওয়ার পর আমিন আমাকে বলল আজ মাছ ধরতে যাব তুই রেডী থাকিস। গতকাল অমাবস্যা ছিল তাই যায়নি।আমি থ হয়ে গেলাম।

।। মানুষ খেকো দানব ।।
হাসিবুল ইসলাম
এস.এস.সি পরিক্ষা শেষ। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না? একদিন আম্মা বলল চল সইয়ের বাড়ী থেকে বেড়িয়ে আসি। আমি, আম্মা,বদরুল, হাদীমামা সবাই মিলে কিশোরগন্জের পাকুন্দিয়া আম্মার সইয়ের বাড়ী বেড়াতে গেলাম। হৈ হৈ রৈ রৈ করে দিনগুলো খুব ভালই কাটছে। এর মাঝে একদিন ঐ এলাকায় মাইকে প্রচার হচ্ছে যাত্রা হবে।আমরা খুবই উৎফুল্ল। রাত্রে আমি, মামা, নয়ন ভাই, স্বপন, শরিফ, আরও তিনজন মিলে রওনাহলাম। মোটামুটি তিন কি.মি.রাস্তা। তার মাঝে নাকি আবার নদী পার হইতে হয়।
প্রচন্ড শীত। খোলা গলায় গান ছেড়ে নদীর পাড় দিয়ে চলছি। পাশের ঘন কাশবনের ফাক দিয়ে মাঝে মাঝে একজোড়া…দুই জোড়া চোখ এসে উকি দেয়। উকি দিয়েই শেয়াল গুলো পাশেরঝোপে হারিয়ে যায়
। মামা বলল শেয়ালেরা রাত্রে নদীর পাড়ে আসে কাকড়া খাওয়ার জন্য।
আমরা মূল নদীরঘাটে এসে পৌছালাম। দেখি মাঝি নাই কিন্তু নৌকা আছে। আমরা মাঝিকে ডাকাডাকি করতে লাগলে কিছুক্ষণ পর মাঝিকেদেখলাম কাশবন থেকে বেড়িয়ে আসল। কিছুটা অপৃকতস্থ কি লেগেছিল? মনেনাই। নদী পার হলাম। আরও এককিলোমিটার।
এবার কিন্তু সোজা কাশবনেরভিতর দিয়ে যেতে হবে। ছোট একটা রাস্তা। বোঝাই যাচ্ছে এটা একটা কাশবনই ছিল। মানুষ হাটতে হাটতে কিছুটা রাস্তা হয়েছে। হালকা চাদনী। দুইধারের কাশের জন্য দু্ইপাশে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। শুধু সামনে আর পিছনে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সামনে আর পিছনের দুইপাশে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। কেননা চাদের আলো এতনিচে এসে পৌছাচ্ছেনা। আমরা সবাই হাটছি তো হাটছিই। কুয়াশা পরে দুইপাশের কাশগুলো কিছুটা নুয়ে পড়েছে। ফলে হাটার সময় আমাদের মুখে এসে লাগছে। খুবই বিরক্তিকর একটা ব্যাপার।
অনেকক্ষণ যাবৎ আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম যে কিছুক্ষণ পর পরই কাশবনের ভিতর একটা শব্দ হচ্ছে। শেষবার যখন শব্দটা শুনলামতখন আমার মনে হলো কিছু একটা আমাদের সাথে সাথে চলছে। আর কিছুক্ষণ পরপর শব্দটা শুনিয়ে কি বুঝাতেচাচ্ছে বুঝলাম না। তবে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর একই শব্দটা শোনা যাচ্ছে। বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে করে সামনে যাওয়ার যে শব্দটা ঠিক সেই রকম। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।তবে কারও কাছে কিছু বললাম না।
সোজা সামনে হাটছি।
থেকে থেকে শব্দটা আমি ঠিকই শুনতে পাচ্ছি। একটা জিনিস খুব অদ্ভুত লাগছিল যে সবাই কেমন জানি নির্বিকার, কেউ কি কিছু শুনতে পাচ্ছেনা। তাহলে আমি কি কোন হ্যালুসেশানে আছি। মানুষের চেচামেচি শোনা যাচ্ছে। আমি আর মামাছাড়া আর বাকি সবাই দেখি দৌড় দিল। আমরাও পিছনে পিছনে দৌড় লাগালাম।
মোটামুটি সামনেই বসলাম। সবাই চিৎকার-চেচামেচি করছে। দুইঘন্টা……… এরমাঝে আয়োজকদের একজন এসে বলে গেল চুপ করার জন্যএখনি নাকি যাত্রা শুরু হবে। ৫-১০ সেকেন্ট চুপ ছিল আবার চিল্লা-চিল্লি। এবার স্থানীয় চেয়ারম্যানের অনুরোধ। সবাই চুপ।
নুপুরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। বাদ্যযন্ত্র বেজে উঠল। নাচ শুরু হবে মনে হচ্ছে।সে কি নাচ……..নাচের তালে তালে দর্শকরা সবাই উন্মাতাল। মামার দিকে তাকিয়ে দেখি বসে বসে লাফাচ্ছে। মামা আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটালজ্জা পেল। কেউ কেউ টাকাও ছুড়ে মারছে। নৃত্যশিল্পী টাকা কুড়িয়ে ব্লাউজের ফাক দিয়ে বুকে রাখছে আর গা থেকে ধীরে ধীরে কাপড় খুলে ফেলছে। মামাকে দেখি বসা থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে লাফাচ্ছে। এদিকে দর্শক সারি থেকে কে জানি কাগজ দিয়ে বল বানিয়ে নৃত্যশিল্পীর গায়ে মারল। শিল্পী কিছুটা বিব্রত বোঝাই যাচ্ছে।
আয়োজককারীদের মধ্য থেকে একজন এসে অনুরোধ করে যাচ্ছে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে। অহেতুক জামেলা কারসহ্য হয়? কেউ একজন ঐ আয়োজককারীর গায়ে জুতা ছুড়ে মারল। সেচ্ছাসেবক দলের আট-দশজন মিলে একটা লোককে সনাক্ত করে মাইর শুরু করল। সাথে সাথে দর্শকরাও ঝাপিয়ে পড়ল। মুহুর্তের মাঝেই হাজার হাজার মানুষ দৌড়াদৌড়ি শুরু করল। শরীফ, স্বপন বললমামা দৌড় দেন….বিরাট মাইর লাগব…….এই এলাকা খুব খারাপ।
আমরা দৌড় লাগালাম।
শরীফ, স্বপনরা সামনে দিয়া আমরা পিছনে। দৌড়াচ্ছিতো… দৌড়াচ্ছিতো… পিছন দিয়াধর ধর….। জইল্যারে ছাড়িসনা………মজিত ্যা কই? এরকম হাজারও চিৎকার কানে ভেসে আসছে। পিছনে তাকিয়ে দেখি হাজারও মানুষ দ্বিক-বেদ্বিক হয়েদৌড়াচ্ছে। আমরা তখন রাস্তাছেড়ে কাশবনের ভিতর দিয়া হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে আগাচ্ছি। মামার জুতা ছিড়ে গেছে। বেচারা ঐ জায়গায় বসে জুতার জন্য শোক করা শুরু করল। মামা আবার ভীষন কৃপণতো। আমরা মামাকে ধরে টেনে হিচড়ে ভিতরে যাচ্ছি। ধীরে ধীরে ধর ধর আওয়াজটাও স্তিমিত হয়ে আসছে।
আমরা নদীরপাড়ে এসে দাড়ালাম। হালকা চাদনি। ঘাটে কেউ নেই। সহজেয় বুঝতে পারলাম ভয়ে কেউ এদিকটায় আসেনি। শরিফ বললএখানে দাড়ানো মোটেও নিরাপদ নয়। যে কোন ভাবেই নদীপাড় হতে হবে। আমি আবার সাতার জানিনা। মামা বলল ভাগ্নে তুমি আমার কাদে উঠ। আমি রাজি হলামনা। আমি সারাজীবন সব জায়গায় মাতব্বরি করতাম শুধু পানি ছাড়া। কেননা হাজার চেষ্টা করেও যে সাতারটা শিকতে পারলামনা। আমার সবসময় ভয় বেশী পানিতে গেলে নিচ দিয়ে যদি কেউ টান দেয়। সবাই আমাকে অনেক বুঝানোর পরও রাজি হলাম না। সবাই নদীর পাড়ে দাড়িয়ে আছি। একটাঅজানা আতংক সবার ভিতরে কাজ করছে।
আল্লাহু… আল্লাহু… সবাইএকটু ছড়ানো-ছিটানো থাকলেও দেখলাম মুহুর্ত্তের মাঝে একসাথে জড়ো হয়ে গেল। শব্দটার উৎপত্তি বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম। এর মাঝে শুনলাম ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু….। কাশবনের ভিতর দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে সে দিকে একটা ক্ষীণ আলোর রেখা কাশবনের উপরদিয়ে দেখা যাচ্ছে। আমরা সবাই সেদিকে তাকিয়েরইলাম। আলোর তীব্রতা এবং শব্দের তীব্রতা বেড়েই চলছে।
সবাই একদৃষ্টিতে ঐ দিকে তাকিয়ে আছি। দেখি দুইজন মানুষ ঐ কাশবনের পথ দিয়ে বের হয়ে আসছে। দুইজনের হাতে দুইটি হারিকেন। পিছনে চারজনে কাদে করে একটি খাটিয়া নিয়ে আসলো।সাদা কাপড়ে ঢাকা। বুঝলামকোন লাশ নিয়ে এসেছে। তার পিছনে আরও দুইজন হারিকেন হাতে। অবাক হয়ে গেলাম।
আসসালামু ওয়ালাইকুম। সবাই সালামের জবাব দিলাম।সবার চোখে-মুখে উৎকন্ঠা স্পষ্ট। আমি একটুআগ বাড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপারবলুনতো। সবচেয়ে বৃদ্ধ যেলোকটা সে বলল “মৃত ব্যাক্তিটি হলো এই এলাকারজামাই। শশুর বাড়ীতে এসেছিল।

সাপের কামড়ে সন্ধায় মৃত্যু হয়েছে। এখন ঐ পাড়ে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে দাফনের জন্য।” সবার জড়তা মনে হয় একটু কাটল।
-বাবা নৌকা নাই
-না চাচা দেখি না তো
-ঠিক আছে তাহলে আপনারা এইখানে লাশের পাশে দাড়ানআমরা গিয়ে নৌকা নিয়ে আসছি।
এইটা কি কয়? মাথাটা আবার ঝিনঝিন করে উঠল। একটু সন্দেহও লাগছিল। শেষে আমিবললাম আপনারা চারজন এবং আমর চারজন মিলে গিয়ে নৌকা নিয়ে আসব। আর বাকি সবাই এখানে থাকুক।চাচা মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পারল। চাচার মুখে যে হাসিটা দেখলাম সেই হাসির রহস্য হাজার রকমের হতে পারে।
আমরা আটজন মিলে রওনা হলাম। নদীর পাড়ে ধরে হাটছি। সাথে দুইটি হারিকেন। চাচা মনে হয় মাঝির বাড়ি চিনে।সেই দেখলাম চিনিয়ে চিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একটা জায়গায় এসে চাচা থামল। টর্চলাইট মেরে দেখলাম ঘাটে ঐ বিশাল নৌকাটা বাধা আছে। জায়গাটা অনেক অন্ধকার। নদীর পাড়ের উপরে বাড়ি ঘরও আছে। কিন্তু মনে হচ্ছে যেন মৃত্যুপুরী। কিছুটা ভয় ভয় লাগছে। একটা প্যাচা উড়ে গেল।পানিতে কিছু পড়ার শব্দ। ঐ হাইল্যা… হাইল্যারে…….. বুঝতে পারলাম মাঝির নাম হালিম। কোন সারাশব্দ নাই। চাচা রাগে বলতে লাগল সবাই কি মইরা ভূত হয়ে গেছে। শেষে আমরাই নৌকা নিয়ে আসলাম।
অনেক বড় নৌকা। নৌকার ছাদ নেই। উপরে কাঠ দিয়ে মেঝে করা হয়েছে। তবে মাঝখানে চার হাতের মত জায়গা ফাকা। পানি সেচের সুবিধারজন্য এটা করা হয়। আমরা এইফাকের এক পাশে বসলাম। অন্য পাশে ওরা। আমি নৌকার শেষ মাথায় বসলাম। নৌকা যখন ছাড়বে, ঠিক তখনি কাশবনের ভিতর থেকে একটা আওয়াজ আসল।
-বাবারা আমারে একটু নিয়াযাও।
টর্চ লাইট মেরে দেখি এক বৃদ্ধলোক। ভাবলাম এতরাত্রে আমরা নিয়া না গেলে বেচারা কিভাবে পার হবে? তাই আমিই সবাইকে অনুরোধ করলাম নেওয়ার জন্য। নৌকাটি ভাসিয়ে লোকটি লাফ দিয়ে নৌকায় উঠল। নৌকাটি দোলনার মত দোল খেতে লাগল। আমার কাছে মনে হলো সবাই নৌকায় উঠার পর নৌকাটি যতটুকু ডুবল ঐ লোকটি উঠার পর আরও বেশী ডুবল। লোকটি লাশের ঠিক পায়ের কাছে বসল। নৌকা চলতে লাগল।
খুব বেশী বড় নদী না। কিছুটা স্রোত আছে। মনের ভিতর অজানা আশংকটা যতই ভুলে থাকার চেষ্টা করছি ততই মনে পড়ছে। এই হালকা চাদনী রাতে কাশবনের উপরে কুয়াশার ধোয়া যে মায়াবী জাল সৃষ্টি করেছেতা আলিফ লায়লার কথা মনে করিয়ে দিল। ভয় কাটানোর জন্য মনে মনে গান গাওয়ার চেষ্টা করলাম। জোরকরেই কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে যেতে চাইলাম। দূরে ভেসে যাওয়া কলাগাছরুপী লাশগুলোকে একমনে দেখছিলাম।
হঠাৎ যে নৌকা চালাচ্ছিল তার বিকট চিৎকার। কেউ একজন পানিতে ঝাপিয়ে পড়ার শব্দ। আমি ঘুরে তাকাতে তাকাতেই সমস্ত নৌকাটা দুলে উঠল যেন কোন নীলদড়িয়ায় নৌকাটি ঝড়ের কবলে পড়েছে। সবাই লাফিয়ে পানিতে পড়ছে। মামা চিৎকার করে পানিতে লাফ দেওয়ার জন্য বলছে। আমি উঠে দাড়ালাম। নৌকার শেষমাথায় টর্চলাইট মেরে দেখি বৃদ্ধটি লাশের একটি পা ধরে পা‘র মাংস খাচ্ছে। পায়ের হারটি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। বৃদ্ধটির মুখে আলো পড়তেই আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখ থেকে নীলআলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। মুখে রক্তের দাগেরমত এ্যাবরো-থেবরো মাংস লেপটানো। বিবৎস দৃশ্য। খুব বমি আসতে লাগল। আমি জোড়করে চেষ্টা করছি সবকিছু আটকিয়ে রাখতে। তীরের দিকে তাকালাম। বুঝতে পারছি এতটুকু সাতারদিয়ে পার হওয়া আমার পক্ষে সম্ভবনা। সবাইকে দেখলাম চিৎকার করছে আর দৌড়াচ্ছে। আমি বৃদ্ধের দিকে টর্চলাইট মেরে দাড়িয়ে রইলাম। বৃদ্ধটি আমার দিকে তাকালো…… উঠে দাড়ালো….. ঝপাৎ।
যতক্ষণ পারলাম সাতার কাটতেই থাকলাম। শেষে মাটিহাটুতে বাজল। বুঝতে পারলাম তীরে এসে পৌছেছি। দৌড় লাগালাম। চিৎকার অনুসরণ করে কাশবনের ভিতর দিয়ে দৌড়াতে লাগলাম। হাজার-হাজার মানুষের চিৎকার। চারদিকে মশাল আর মশাল। কেউ কেউ ডাকাত ডাকাত করেও চিল্লাচ্ছে। কাশবনের ঐ পাশেই একটা বাড়ী আছে সেখানে সবাই পরে রইলো। আমিও গিয়ে ঐ খানে শুয়ে পড়লাম। চারদিকে মানুষ ঘিরে ধরেছে। কেউ কেউ আমার কাছে ঘটনা জানতে চাইলো….। আমারমুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছিলনা। এর মাঝে একজন সবাইকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিল। সবার মাথায় পানি ঢালার ব্যাবস্থা করতে বলল। মামার হুশ হওয়ার পর আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল- ভাইগ্না বাইচ্যা আছ? আপা আমারে মাইরাই ফালতো। একে একে সবাই হুশ হলো। আমি সব ঘটনা খুলে বললাম। এর মাঝে দেখি শরীফের আব্বাও লোক নিয়ে হাজির। কেউ কেউ নদীর পাড়ে যাওয়ার সাহস দেখালো। শেষে আমি সবাইকে নিয়া নদীর পাড়ে গেলাম। নৌকা নাই। আমরা স্রোতের অনুকুলে হেটে যাচ্ছি। সবাই চিৎকার করে উঠল এই যেনৌকা। দেখলাম শুধু কংকালটা আছে। এর মাঝে একজন বলল দেখিতো মাটিতে রাক্ষসটার পায়ের দাগ আছেকিনা? আমরা নদীর পাড়ে কোন পায়ের দাগও পাইনি।
শেষে ঐ কংকালটিই মাটি দেওয়া হলো।

শেষ
আমাদের মাসিক ভৌতিক জানুয়ারী ২০১১ইং সংখ্যার আয়োজন এখানেই শেষ ।লেখা পাঠানঃ jabed.bhoiyan@gmail.comএই ঠিকানায়